আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যান্সারে আক্রান্ত নাহিদ জাহান লিনা। তার ছোট্ট একটি ফুটফুটে মেয়ে আছে। তার বয়স ৫ বছর। আসুন ছোট্ট মেয়েটিকে মাতৃহারা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করি

চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও! ওর নাম নাহিদ জাহান। ডাকনাম লিনা। আমাদের বন্ধু। আমাদের প্রিয় সহকর্মী। হাসিখুশি, চঞ্চল, উচ্ছল ও বন্ধুবৎসল লিনা হঠাৎ করেই ২০০৯ সালের অক্টোবরে আক্রান্ত হলো স্তন ক্যানসারে।

ওর এত বড় অসুখের খবর পেয়ে ওকে দেখতে যাওয়ার আগে আমরা অস্থির হয়ে ভাবছিলাম, কেমন করে ওর চোখের পানি মোছাব, এই দুঃসময়ে কী বলেই বা ওকে সান্ত্বনা দেব। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, লিনাই উল্টো আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে, প্রচণ্ড সাহস, ধৈর্য আর শক্তি নিয়ে হাসিমুখে ক্যানসারের মুখোমুখি হলো। ভাবখানা এমন যে, ‘দেখো, ক্যানসার নিয়ে তোমরা এত লেখালেখি করেও এই ঘাতক রোগকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারো না, আর আমি!’ ওকে আমরা অবাক হয়ে দেখি। কী সাহস...কী মনোবল...। ক্যানসার ধরা পড়ার কিছুদিন পরেই অপারেশন হলো লিনার।

কেটে ফেলতে হলো বুকের একটি পাশ। চলল দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক কেমোথেরাপি। লিনার মুখের উজ্জ্বল হাসিটি তবু ম্লান হলো না। কেমোর ফলে ওর মাথার চুল পড়ে গেল। লিনা হাসিমুখে পরচুলা মাথায় পরে অফিসে হাজির।

আমাদের বলল, ‘ক্যানসার হয়েছে তো কী? আমি অন্য সব সারভাইভারকে খুঁজে বের করছি। সবার জন্য অনেক কাজ করতে হবে। ’ আমরা হতবাক হই। বন্ধুর হাতে হাত রাখি। বলি, আমরা সবাই তোমার লড়াইয়ের সাথি হব।

লিনা শুধু মুখে মুখে নয়, কাজেও ক্যানসারে আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়াতে শুরু করল। স্তন ক্যানসারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সংসদ ভবনের সামনে শোভাযাত্রা হবে। লিনা তার অসুস্থ শরীর নিয়েও সেখানে উপস্থিত। নতুন কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে, তাকে কোথায় যেতে হবে, কী চিকিৎসা নিতে হবে—সব পরামর্শ দিতে লিনা হাজির। যেন লিনা হার মানতে জানে না।

ক্যানসার যেন সত্যিই পরাজিত হবে লিনার কাছে। নাহিদ জাহান লিনা গবেষক হিসেবে একুশে টেলিভিশনে কাজ করেছে, নিউজ রুম সমন্বয়ক হিসেবে এটিএন বাংলায় এবং অ্যাসাইনমেন্ট প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেছে বন্ধ হয়ে যাওয়া টিভি চ্যানেল সিএসবিতে। এখন কাজ করছে এনটিভিতে। ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতি করেছে লিনা, যুক্ত থেকেছে সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে। সেই লিনা ক্যানসারের প্রথম ধাক্কাটা ভালোই সামলে নিয়েছিল।

দ্বিতীয়বার ২০১০ সালে ওর পায়ের হাড়ে আবার ফিরে এসেছিল ক্যানসা। সেই ক্যানসার সারাতে আবার ইনজেকশন, আবার রেডিওথেরাপি। তার পরও লিনা হতাশ হয়নি, চিকিৎসা শেষে আবার ফিরে এসেছিল হাট-বাজার-অফিস, আড্ডা আর পলাশ-আনাকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে। বুকের ব্যথা, পায়ের টনটনানি, তীব্র মানসিক চাপ—সব নিয়েই লিনা ছুটছিল তার সাড়ে চার বছর বয়সী মেয়ে আনাকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। লিনার জীবনটা যে এখন আনাকে ঘিরেই।

ছোট্ট আনা জানে না, মায়ের বুকের ডান পাশটা কেটে ফেলা হয়েছে। চিকিৎসকের কড়া নিষেধ, ভারী কিছু তোলা যাবে না, আনাকে কোলে নেওয়াও বারণ। আমাদের মনে পড়ে, স্তন ক্যানসারের সঙ্গে কঠিন যুদ্ধের দিনগুলোর কথা বলে যে লিনা একবারও কাঁদেনি, সেই লিনার চোখে ততবার পানি আসে যতবার ও বলে, ‘আনাকে একটু কোলে নিতে পারি না। মেয়েটা ছটফট করে। ’ এভাবেই চলছে লিনার জীবন।

অফিস ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি সঙ্গী ক্যানসারের সঙ্গে মানিয়ে চলার অপরিসীম চেষ্টা। কিন্তু ক্যানসারের মতো সর্বগ্রাসী রোগকে পরাজিত করা তো সহজ কাজ নয়। নইলে দুদিন আগে করা ল্যাব টেস্টের রেজাল্টে কেন থাকবে ক্যানসারের আবার পূর্ণোদ্যমে ফিরে আসার খবর, কেন চিকিৎসকেরা আবার জানাবেন, নতুন করে কেমো নিতে হবে, নতুন করে শুরু করতে হবে চিকিৎসা। যাঁরা এই লেখা পড়ছেন, প্রিয় পাঠকেরা, তাঁদের বলছি, আমরা যারা সাংবাদিক, প্রতিদিন যারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করি, তারাই যেন হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়ি দীর্ঘদিনের সহকর্মী লিনার ক্যানসারের কাছে। এত দিন কত অচেনা মানুষের খবর দিয়েছি, কত দূরের মানুষের সমস্যার কথা জানিয়েছি।

এবার নিজেদের এত কাছের, এত চেনা মানুষটির খবর হয়ে যাওয়াটা বুঝতেই অনেক সময় লেগে গেল। মাঝখানে চলে গেল দুই বছর। লিনার এত দিনের লড়াইয়ের সঙ্গী ছিলাম আমরা। আমরা নিজেরাই নিজেদের সামর্থ্যে, নিজেদের পরিচিত বলয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে লিনার সঙ্গে ছিলাম। এবার ক্যানসারের আক্রমণ প্রতিহত করতে আমরা হাত বাড়াচ্ছি আপনাদের দিকে।

এই দফায় ওর চিকিৎসার জন্য যে টাকা দরকার, তা বন্ধু-সহকর্মীদের বেতনের টাকায় পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রিয় পাঠক, আমরা চাই, লিনার জন্য আমাদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা আপনিও ধরুন। আমরা চাই, লিনা বাঁচুক। আনাকে কোলে নিতে না পারলেও অন্তত ওর হাত ধরে হাঁটতে পারুক লিনা। Amader bondhu Nahid Jahan Lina'r Meyetir Boyos Matro 5. Operation er Poro Lina Abaro Osustho Hoye Poreche. Cancer er Sathe Juddho Kore Beche Thaka Linar Meyeti Ekhono Bujhte Sekheni Cancer Ki Ebong Ma ke Hariye Felar OnuVuti Kemon. Amra Sisutike ei Tikto Oviggotar Sathe porichito Hote Dibona. Asun or Pashe Darai. '' Nahid Jahan Lina Standard Chartered Bank AC no: 183411044'' লিখেছেন: মুন্নী সাহা, শাহনাজ মুন্নী, ফারজানা রূপা, নাদিরা কিরণ, তামান্না মজুমদার, সুলতানা রহমান, শামীমা বিনতে রহমান, মেহেরুন রুনি, ইবতেশাম মৌ, জাহানারা পারভীন, মোহসীনা লাইজু।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.