আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণবিরোধী পাশ্চাত্য গণতন্ত্রই হল মুসলিম জনগণের বড় শত্রু

গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছেন ইসলামী আন্দোলনকারী বুদ্ধিজীবী ও কর্মীসমাজ ঢের দিন ধরে। উপনিবেশবাদী শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর মুসলিম দেশগুলোর আগ্রাসন, নিষ্ঠুর নিপীড়ন, শোসন ও প্রভুত্ববাদ চর্চার মধ্যদিয়ে একদিকে সমাজজীবনে পশ্চিমা রাজনীতি প্রসূত হতাশা ধূর্ততা ও অসততা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে ব্যক্তি স্বার্থপরতা ও ভোগবাদিতার দুষ্ক্রিয়ায় নৈতিক স্খলন প্রক্রিয়ায় এসব দেশে গণমানুষের জীবনযাত্রা আচ্ছন্ন হয়ে যেতে দেখা গেছে। আবার দেখা গেছে, ঔপনিবেশিকতামুক্ত মুসলিম জাতিরাষ্ট্রগুলোয় একনায়কতন্ত্রী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণ প্রেরণা খুঁজে পেয়েছেন ইসলামী আদর্শে এবং ইসলামী জীবন চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়েই তারা প্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। গণতন্ত্রের এই পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ মুসলিম বিশ্বে আজকে নতুন কিছু নয়। বিশ্বে নিজেদের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত ও ধারক-বাহক ঘোষণাকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ রীতিমতো আশ্বস্ত রয়েছে যে বাকি বিশ্বের একনায়কতন্ত্রী ও পাশ্চাত্যপন্থী সরকারগুলোয় তাদের স্বার্থ বরাবর নির্বিঘ্ন রয়েছে।

পেছনের প্রায় এক দশক ধরে দেখা যাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের একাংশে কায়েম স্বেচ্ছাতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অস্থির অন্য অংশের সঙ্গে পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চমৎকার ডিগবাজি খেলা খেলে দেখিয়ে যাচ্ছে। তাদের আজ্ঞাবহ ডিকটেটরদের সরেজমিন সহযোগিতা তারা দিয়ে যাচ্ছে। কথিত আরব অভ্যুত্থানের প্রাথমিক দিনগুলোয় তাদের লেজুড় একনায়কদের বর্জন করার কোনো আগ্রহ মার্কিন নেতৃত্বের মনোভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। হোসনি মোবারক প্রসঙ্গ সামনে আনতে হয়। হোসনি মোবারকের আসন টলে গেছে নিশ্চিত জানবার পরই আকস্মিক বোল পাল্টিয়ে মার্কিন নেতৃত্বকে মিসরীয় গণআন্দোলনের গুণগ্রাহী সমর্থকে পরিণত হতে দেখা গেছে।

বহু মুসলিম দেশ বরাবর বলে এসেছেন গণতন্ত্রের জন্য তারা নিবেদিত রয়েছেন। তারা যুক্তিও দেখিয়েছেন যে, গণতন্ত্রে ও ইসলামে কোনো বিরোধ নেই। এমনকি ইসলাম ও গণতন্ত্রকে তারা সমর্থক বলতে চান। তত্ত্বগতভাবে তাদেরকে বেঠিক বলা যাবে না। কিন্তু গণতন্ত্রের কখন কে কোন অর্থ করেন-- সেটিই হচ্ছে দেখার বিষয়।

গণতন্ত্রের পর্যবেশিত ব্যাখ্যায় প্রায়শই সুবিধাবাদের সন্ধান মেলে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ও ভিন্ন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের পরিবর্তিত ব্যাখ্যা একই ব্যক্তির মুখে আমরা পরিবেশিত হতে শুনেছি। স্বার্থোদ্ধারে যখন যে ব্যাখ্যা কাজে লাগে, তখন তাই তুলে ধরা হয়। এই বিতর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে না বিশেষত তখন পর্যন্ত যতোক্ষণ একদল মুসলমান পশ্চিমা প্রচারে সুর মিলিয়ে বলতে থাকবেন যে গণতন্ত্র হচ্ছে সর্বজনীন আদর্শ বা মতবাদ এবং ইসলাম তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। ইসলাম অধ্যয়নে তাদের অজ্ঞতা রয়েছে বলেই তাদের মুখ দিয়ে এই আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ বেরিয়ে আসে না যে সর্বজনীন জীবনাদর্শের একমাত্র প্রতিভূ ও প্রবক্তা হচ্ছে ইসলাম এবং গণতন্ত্রচর্চার এ যাবৎ কালের ইতিহাস প্রমাণ করে দিচ্ছে যে ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যোগ্য মতবাদ গণতন্ত্র হতে পারে না।

দেখা যাচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ময়দানে মুসলিম দেশগুলোয় ধর্মনিরপেক্ষ ও পশ্চিমপন্থী এলিটদের সহযোগিতা করে ও উৎসাহ যুগিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো নিশ্চিত হতে চাচ্ছে যে, এ সমস্ত মুসলিম দেশে তথাকথিত গণতন্ত্রচর্চার প্রক্রিয়ায় পশ্চিমা স্বার্থের শ্রীবৃদ্ধি যেন অব্যাহত থাকে। এভাবেই গণতন্ত্রকে ঊর্ধ্বে স্থাপিত রেখে মুসলিম দেশগুলোয় পশ্চিমারা ইসলামকে গৌন অবস্থানে নির্বাসিত রেখে দিতে চাচ্ছে। এখনো স্পষ্ট নয় আরব দেশগুলোয় নতুন রাজনীতির স্বরূপ কেমন হতে যাচ্ছে। মিসরের অন্যত্র সরকার পরিবর্তিত হওয়ার পর অবারও প্রতিবাদ আয়োজিত হতে দেখা যাচ্ছে। তাদের আত্মদানের সুফল সুবিধাভোগী বিশিষ্টজনেরা আবার আগেরও মতো আত্মসাত করতে যাচ্ছেন- এই আশঙ্কার তারা আন্দোলিত।

দেশের অগ্রগতির জন্য ইসলামপন্থীদের সমস্যা হিসেবে পশ্চিমারা দেখাতে চাইলেও দেশের ক্ষমতায় আবার পুরোনো সুবিধাভোগীদের প্রত্যাগমনের সম্ভাবনার ও পশ্চিমাপন্থী সেকিউলারিস্টদের নব-পদচারণায় উদ্বিগ্ন জনগণ অনিচ্ছায় হলেও আবার আন্দোলনের পথ ধরেছেন। পশ্চিমা গণতন্ত্রের এই প্রদঞ্চক স্বরূপ ছিন্নভিন্ন করে ইসলামসম্মত স্বাধীনতা, সাম্য ও সুবিচারনির্ভর শাসন প্রবর্তনে সরকার পরিবর্তনে সাফল্য অর্জনকারী মিসরীয় ও অন্যান্য জনগণ কতোখানি এগোতে পারেন, তাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র: -ক্রিসেন্ট ম্যাগাজিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.