আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একান্ত ভাবনা

তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না..... নৈতিকতার বিচারে আমাদের মান এখনো অনেক নিচে। যারা নীতি বাক্য প্রচার করেন, এরাও সুযোগ পেলে সব জলাঞ্জলী দিয়ে নিজের স্বার্থের দিকে তাকান। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ল’ইয়ারকে কত টাকা ইনকাম টেক্স দেন কেউ জানে না। এরা কি বছরে এক লাখ আশি হাজার টাকার কম আয় করেন? এক লক্ষ আশি হাজার টাকার ওপরে হলে টেক্স দিতে হয়। অপর দিকে দেখা যাচ্ছে আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, টি. সি. বিকে পুনর্জীবিত করা হচ্ছে।

আজ থেকে বিশ/ পঁচিশ বছর আগে আমি টি. সি. বিতে দুধের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতাম। আমি টি. সি. বিকে খুব কাছে থেকে চিনি ও জানি। পৃথিবীর প্রায় দেশে যখন দুধের আকাল তখন টেন্ডার পেয়েছি। যখন সয়লাব তখন পাইনি। যার সিলভার “সু” যত ভারি থাকত সেই নিয়ে যেত।

এখনো টি. সি. বিকে সক্রিয় করলে আপত্তি নেই। আপত্তি ওই লোকগুলোকে নিয়ে যারা টেন্ডার হ্যান্ডেল করবেন। সিলভার “সু” এর আঘাতে নরম হয় না এমন লোক বিরল। নিম্নমানের দ্রব্য, পোকায় খাওয়া শস্য গছিয়ে দিয়ে বিদেশিরা টাকা নিয়ে গেলে জাতির জন্য হবে দুর্ভাগ্য। আমাদের মাটিই খারাপ? মাটি খুঁড়েও ভাল মানুষ পাওয়া মুস্কিল।

ভাল মানুষ গাছে ধরে না, তৈরি করতে হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য বিগত ৪০ বছর আমরা ভাল মানুষ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছি। আগে টি.সি.বিকে সাদা হাতি বলা হতো। এখন নতুন করে ওই সাদা হাতি জন্ম নিচ্ছে কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে। বার বার সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়।

আমদানিকারদের মধ্যে সিন্ডিকেট থাকতে পারে না। ভোজ্য তেল যারা রিফাইন করে এদের মধ্যে কথাবার্তা হতে পারে। সকল প্রকার ভোজ্য তেলের শুল্ক এমনকি প্যাকিং অবস্থায় আনলেও শূন্য হলে কোন সিন্ডিকেট কাজ করতে পারে না। কয়েকদিন আগে খবরের কাগজে দেখলাম টি.সি. বি’র ডালে পোকা ধরেছে, ওই ডাল ডিলাররা উত্তোলন করতে অনিহা প্রকাশ করছে। গত ৪/৭/২০১১ইং তারিখে ঢাকার এক পত্রিকায় দেখলাম, নিম্নমানের ডাল গুদামে ঢুকতে দিতে বাধা দেওয়ায় এক কর্মকর্তা স্ট্যান্ড রিলিজ হয়েছে।

ডাল যারা সরবরাহ করতে গিয়েছিল নিশ্চয়ই তারা অতি প্রভাবশালী ব্যক্তি। নতুবা স্ট্যান্ড রিলিজ হয় কি করে? আর প্রভাবশালী কারা হতে পারে; সাধারণ মানুষ বুঝে ও জানে। এ দেশের মানুষ বোকা নয়। যে ব্যক্তিকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলো উনি সৎ না অসৎ আমি জানি না; হয়ত দরদামে বনিবনা হয় নি এমনও হতে পারে। অথবা আসলেই সৎ ব্যক্তিও হতে পারেন।

সৎ হলে, নিজের রক্ষা নেই অসৎ হলে দেশের রক্ষা নেই। কোন পথটি ধরে চলতে হবে আল্লাই জানেন। যে যত বড় সন্ত্রাসী, যে যত বড় অন্যায়কারী সে তত বেশি সম্মানের অধিকারী। আমার কাছে অনেকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজে ভর্তির জন্য মন্ত্রী, এমপির সুপারিশ নিয়ে হাজির হন। এরা কিন্তু বিরাট বিরাট বিত্তের অধিকারী।

নিজেরা চাইলে মানসম্মত স্কুল, কলেজ দিতে পারেন। কিন্তু ওদিকে দৃষ্টি নেই। অন্যেরটা প্রভাব খাটিয়ে ভোগ দখল করতে চায়। আমি দেই না। এই জন্যই দেই না যে ভাল ভাল ছাত্র/ছাত্রীর মা, বাবা যারা মন্ত্রী, এমপির কাছে যেতে পারেন না এদের ওপর অবিচার করা হবে।

যাই হোক আবার আসল কথায় ফেরত আসি। প্রাণ থাকলে প্রাণী হয় কিন্তু মানুষ হওয়ার জন্য মন ও মনন দুই-ই দরকার। আদি যুগে মানুষ অসভ্য ছিল বলে, মন ও মনন দুটিই ছিল দুর্বল। মানুষ ধীরে ধীরে সভ্য হয়েছে। মনের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে।

সহ অবস্থানে বিশ্বাস স্থাপন করে নগর সভ্যতার সাথে সাথে গ্রাম্য সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। কিন্তু এই নৈতিকতার কোন বর্ষণ হয়ত বাংলাদেশে হয়নি। ফলে অনৈতিক কাজগুলোই দ্রুত প্রসার লাভ করছে। এই তো সেদিন ফালুর এনটিভির জন্ম দিনে ফারুক খান, দিলীপ বড়ণ্ডয়া হাসি মুখে কেক খাচ্ছেন। এরা কি এত সহজেই ভুলে গেলেন ফালু কে? এনটিভি কার? কোন নৈতিক চরিত্রের মানুষ? এ বিষয়ে এরা দুজন বহুবার বহুকথা বলে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ওখানে কেক খাচ্ছেন।

এতই যদি টিভি প্রীতি হয়, এরা নিজেরাইতো চ্যানেল খুলে বসতে পারেন। যারা ঘুষ খায়, যারা সন্ত্রাস করে এদেরকে আমরা সবাই ঘৃণা করি কিন্তু পরিহার করি না। দেশের মন্ত্রীরা যদি সমস্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজের ছবি প্রচারের জন্য অংশগ্রহণ করে, ঘুষখোরদের ঘৃণা করে আর লাভ কি? একটা গল্প বলে আমি আমার কথা শেষ করতে চাই। বাদশা হারুন একদিন তার উজিরকে অফিসে দেরিতে আসতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন-, “এত দেরী হল কেন?” উজিরের উত্তর “হুজুর একটু দোজখে গেছিলাম”। “কি? দোজখে কি করতে গেলে?” “হুজুর, আমাদের দেশে এখন আগুনের কিছু আকাল চলছে, শুনেছি দোজখে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে, ওখান থেকে কিছু আগুন আনতে গেছিলাম”।

“আগুন কোথায়? তোমার হাততো খালি” বাদশার উত্তর। হুজুর দোজখের ফেরেশতারা বললেন ধার দেওয়ার মত কোন আগুন দোজখে নেই। যার যার আগুন সেই মৃত্যুর সময় নিয়ে আসে সঙ্গে করে। ওই আগুন দিয়ে তাকে যন্ত্রণা দেওয়া হয়। সুতরাং কোন নসিহত লেখা জোখার প্রয়োজন নেই, যার কর্মফল সে এখানেই ভোগ করবে।

মানুষ বোকা নয়, সবার দৃষ্টি এখন এদের দিকে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।