আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রধানমন্ত্রীর ফোন!!!

সময়ের সমুদ্রের পার--- কালকের ভোর আর আজকের এই অন্ধকার কাক ডাকা ভোরে প্রধানমন্ত্রী ফোন দিয়েছে। অত্যন্ত মোলায়েম কন্ঠ। মধু ঝরা টাইপ। সুন্দরবনের খাঁটি মধু মুখে নিয়ে কিন্নর কন্ঠে বললেন, 'এই রাজীব, করছিসটা কি?' 'জ্বী দাদী, কিচ্ছু করছি না। দোয়া করছি।

' 'কিসের দোয়া?' 'আজ্ঞে পানির জন্য। যা গরম পড়েছে। ' 'এই কথা? গরমে বুঝি ঠান্ডা পানির খাওয়ার খায়েস জেগেছে?' 'জ্বী, আফা। ' 'চড়ে দাঁত ফেলে দিব। দাদী থেকে আফা কইস কে?' 'সরি দাদী।

আর ভুল হবে না। ভুল হইলে কান কাইট্টা কুত্তা দিয়া খাওয়ামু। ' 'খাওয়ানোর কথা শুনে মনে পড়ে গেল। আচ্ছা তোর এলাকায় কি ঠান্ডা পানি নাই? 'না আফা। ' 'কেরে? নাই কে?' 'নিজেও জানি না আফা।

এক গ্লাস ঠান্ডা পানি হবে? ফ্রিজ থেকে নিজে ঢেলে খাব। গ্লাসের মধ্যে কয়েকটা বরফের কুচি ভাসাব। লেবুর রসও একটু চিবিয়ে দিব। পানিগুলো গিলে খাব, বরফ খাব চিবিয়ে। হবে আফা?' 'সরিরে রাজীব।

হয়েছেটা কি জানিস? কয়েকদিন থেকে ফ্রিজের কুলারটা নষ্ট হয়ে গেছে। ফ্রিজ কাজ করছে না। ফ্রিজে যাই রাখি, তাই দেখি গরমে সিদ্ধ হয়ে যায়। অদ্ভুত অবস্থা। কি যে করি?' ‘কিছু করার নাইগো আফা।

এইটা এখন রাইস কুকার হিসাবে ব্যবহার করেন। গ্যাসও বাচবে, ফ্রিজের একটা গতিও হবে। বুদ্ধিটা মন্দ দিলাম আফামনি? 'দিমু এক চড়। আবার কইস আফা। ' 'পুনরায় সরি দাদী।

তয় আফা আর দাদী কিন্তু পীরগঞ্জে একভাষা। ভালোবেসে দাদীরে সবাই আফা কয়। আমিও কইলাম। মাইন্ড খাবেন না। ' 'আমি মাইন্ড খাই না।

তয় পানি খাইতে চইলে আয়। একসাথে বসে কিছু গল্প করি। ' 'কি গল্প গো আফা? 'ওর জীবনী নিয়া। ' 'ওর মানে কি?' 'আরে আমার স্বামী। তোর দাদা।

ওয়াজেদ কথা কইতাছি। দীর্ঘদিন থেকে শ্বশুর বাড়ী যাই না। স্বামীর কবরটাও দেখি না। মন আনচান করবার লাগছে। ' 'আপনার চিন্তা নাই আফা।

পীরগঞ্জের লোকেরা অয়াজেদ দাদার কবর কিন্তু ভালো করেই দেখছি। ' 'তাও মেলা চিন্তা। দেশ নিয়া ঝামেলায় আছি। ভালো লাগে না। তুই চলে আয় আমার বাসায়।

স্বামীর দেশের লোকদের সাথে মেলা দিন একসাথে বসে খাই না। ' 'না আফা সম্ভব না। ' 'কেন?' 'আপনিই আসেন। দেশের বাড়ী মানে তো স্বামীরবাড়ী। স্বামীর বাড়ীতে আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।

এমেরিকায় নাতনীর বিয়েতে ঘুরতে গিয়ে সবাই মাইন্ড করছে। বিয়ে না খেয়ে যদি আপনি স্বামীর কবর জিয়ারত করতে আমাদের বাসায় আসতেন, জনগনের কিঞ্চিত ভালোবাসা পাইতেন। আমরা তো আফা কিছু চাই না। আমরা চাই একজন ভালো মানুষ। একইজন ভালো প্রধানমন্ত্রী।

এরজন্য কিছু করা লাগে না আফা। খালি সদিচ্ছা। এখনো হাতে মেলা সময়। একবার ট্রাই করে দেখেন এমন উদ্ভট কাজগুলোর। স্বাধীনতার পক্ষে কে নাই আফা? 'জ্ঞান দিস না।

রাজনীতির সব গলি আমার নখদর্পনে। ' 'তাতে কি আফা? মানুষতো নিজেকে চিনতেই প্রথম ভুলটা করে। আপনার নখের দর্পন যে আপনার কাছে যেকোন মুহুর্তে অচেনা হবে না, তার গেরান্টি কি?' 'মন্দ কস নাই। একটা কথা জিগায়?' 'আচ্ছা। ' 'কারেও কবি না কিন্তু।

প্রধানমন্ত্রী যে তোর সাথে এই সামান্য বিষয়টা নিয়ে কথা বলছে, কাউরে জানাবি না। মান সম্মানের ব্যাপার। সবাই ছি ছি করবে। ' 'আরে আফা কি যে কন? কোন সমস্যা নাই। ' 'প্রধানমন্ত্রী হলে তুই প্রথমে কি করতি?' 'আজ্ঞে কিছু না।

তয় আপনি যে আমার সাথে কথা বলছেন এই কথাটা সবার সাথে শেয়ার করতাম। এতে আখেরে লাভ কিন্তু আপনারই। মানুষ চায় মন্ত্রীদের সাথে সাথে আপনারা আমাদের সাথেও কথা বলেন। জনপ্রিয়তার সুযোগ হাতছাড়া করতে নেই। ' 'যা ভাগ।

জ্ঞান দিবি না। ' 'জ্ঞান দিব না তয় স্বামীর বাড়ীতে যে আসছেন সেই দাওয়াতটা দিয়া রাখলাম আফা। ' 'দাওয়াত মঞ্জুর। নির্বাচনের আগে আগে স্বামীর কবরে দোয়া চাইতে যামু। তুই আগেই আয় ঢাকায়।

ফ্রিজ থেকে না ঠান্ডা পানি খাবি। জয়নবরে বলতেছি কয়েকটা বরফ কুচি বানাতে। জয়নবরে চিনিস?' 'না আফা। ' 'হেই মাইয়া কিন্তু তোর পীরগঞ্জের। ' 'তাই নাকি আফা।

ভালো কাম করছেন । গুড গার্ল। ' 'চড়ে দাঁত ফেলায় দিমু। হুমায়ূন আহমেদের ডায়ালগ আমার সাথে ব্যবহার করবিনা। আমার বয়স কিন্তু কয়েক শ্রাবণ আগেই পঞ্চাশ পার হইছে।

' তাং ফাং কথা বলতে ভালো লাগছিল না। আমি ফোন কেটে দিলাম। দেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমত্রীর ফোন কাটার সাহস সবার নাই। আমার আছে। নিজের লোক বলে কথা।

হাজার হলেও আমার পাশের বাড়ীর গৃহবধু তিনি। সম্পর্কে দাদী। আফা কইয়া গুড গার্ল বলার দুঃসাহস করার সুবিধা আমরা পেতেই পারি। ফোন কাটার পর ভাবতে শুরু করলাম... প্রধানমন্ত্রী হলে যা যা করতাম... সংসদ বসাতাম গাছতলায়। এই গাছ আমগাছ হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশের প্রথম সংসদ বসেছিল আমবাগানে। মুজিবনগরে। যেদেশে ৯২% শিশু অপুষ্টিতে ভোগে, সেদেশে আলিশান সংসদ থাকতে পারে কি? যেদেশের ৬৫% লোক দারিদ্রসীমার নিচে,সেদেশে সংসদ নামের সুদর্শন অট্টালিকা থাকতে পারে কি? মাঝে মাঝে ভাবি আর অবাক হয়ে যাই... এই সংসদে প্রত্যেক মিনিটে ২৫০০০( পঁচিশ হাজার টাকা মাত্র) ব্যয় হয়, সেখানে সুরঞ্জিত, এ,মাল,এ মুহিত, ফ্যানটাস্টিক ফোরের পাপিয়ারা কিভাবে গলা চড়ায়? একজন আরেকজনের দিকে ছুড়ে দেয় বস্তির ভাষা। দুই ঘন্টা যেখানে ঝগড়া করে আর খামচাখামচি করে কাটে, সেই ঝগড়াখানা রেখে কি লাভ বলুনতো। ( ঝগড়াখানা আর প্রসাবখানা শব্দের মধ্যে দারুন মিল।

গ্রীষ্মকালে প্রসাবের পরিমান কমে যাওয়ার প্রধান কারন হলো গায়ের ঘাম। এখানে নারী-পুরুষ সংসদ সদস্যরা প্রসাবের পরিমান কমায় ঘাম ঝরিয়ে। খামচাখামচি করলে কি ঘাম হবে না?) বস্তির মানুষের মুখে হাঁসি ফুটাতে চাইলে গাছতলায় সংসদ বসাতে হবে। প্রত্যেক মিনিট হিসাব করে প্রতিদিন দুইঘন্টার ত্রিশ লক্ষ টাকা মিসকীনদের মাঝে বিলাতে হবে। অন্তত দুইশ জন লোক করে প্রতিদিন স্বাবলম্বী হবে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি অস্থায়ী সরকার আমাবাগানে হয়, আজকের সংসদ সম্মেলনও আমবাগানে করার জোর দাবী জানাচ্ছি। বাগানের আশেপাশে বেঞ্চ বসিয়ে জনগনরা দেখবে, তাদের নেতারা কি করছে তাদের জন্য। আমি জনগন। আমার অধিকার আমার সামনেই যেন স্বীকার করা হয়। বাংলাদেশের বৃহত্তম তিনটা দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে বলে প্রতিদিন কামড়া-কামড়ী করছে।

আজকের বাংলাদেশ যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হয়, সংসদও বসুক সেই চেতনায়। সুন্দরী আর হস্তী সদৃশ মহিলা সদস্যদের পার্লারে মাখানো মেক-আপ পাউডার চুয়ে পড়ুক ঘামে। ও আচ্ছা!!! আমবাগানে সংসদ বসলে সংসদ ভবনের কি হবে? জাদুঘর বা মিউজিয়াম হিসাবে চালানো যেতে পারে। খুব নাম-ডাক করবে সারা বিশ্বে। দর্শনার্থীদের টাকা পয়সা ব্যয় হবে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারে।

রিক্সা যেন তাদের না টানতে হয়। কোঠা প্রথায় যেন তাদের করুনা করা না হয়। এই টাকা ব্যয় হোক, অপুষ্টির স্বীকার ৯২% বাচ্চার জন্য। পুষ্টিতে বলিয়ান হয়ে উঠূক। হয়ে যাক নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.