আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রধানমন্ত্রীর মায়ানমার সফর

পঁচা মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মায়ানমার সফরে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে দেশটির সরকারে কাছ থেকে। এ ছাড়াও দুদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা, যোগাযোগ সুবিধা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়গুলো খুবই আশাব্যঞ্জক। মায়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। মায়ানমার বা পূর্বের বার্মা এক সময় অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুরোনো। এককালে মায়ানমারের উর্বরা আকিয়ার প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য আসতো। দুভূখ-ের বাণিজ্য সম্পর্কও ভালো ছিল। তবে বার্মায় সামরিক শাসন দেশটির অভ্যন্তরে যেমন সংকট সৃষ্টি করেছে, তেমনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সংকট তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে বিদ্যমান সবচেয়ে বড় সমস্যা রোহিঙ্গা সমস্যা, তারপর রয়েছে সমুদ্রসীমা নিয়ে টানাপড়েন ইত্যাদি।

মায়ানমারের সামরিক সরকারের দমন-পীড়নের মুখে দেড় যুগ আগে মিয়ানমারের ব্যাপক সংখ্যক মুসলিম নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে এবং অধ্যাবদি এরা এ দেশে অবস্থান করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের দুটি শরণার্থী শিবিরে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অন্তত দুই লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে সরকারি হিসেবেই। এরা এ দেশের নাগরিক সুবিধা ও অধিকার ভোগ করতে পারছে না, অন্যদিকে মায়ানমার সরকারের অনাগ্রহের কারণে তারা স্বদেশেও ফেরত যেতে পারছে না। এমতাবস্থায় এ দেশে এদের অনেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হয়ে পড়েছে, এটা শুধু অভিযোগ নয়, এর অনেক প্রমাণ রয়েছে।

বলাই বাহুল্য জনসংখ্যাধিক্যের এ দেশে কয়েক লাখ বাড়তি জনসংখ্যা দেশের ওপর একটা বিরাট চাপ। এর বিরূপ প্রভাব রয়েছে দেশের অর্থনীতি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা, সামাজিক শৃঙ্খলা সর্বক্ষেত্রে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সীমান্তে চোরাচালানি, নানা সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ভুয়া নামে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অনেকে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে বলেও নজির রয়েছে। বিদেশে তাদের নানা অপকর্ম বাংলাদেশী অভিবাসীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শ্রমবাজার।

বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা হয়ে ওঠা এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরত নেয়ার ব্যাপারে মায়ানমারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় মৌখিক আশ্বাস পাওয়া গেলেও এ ব্যাপারে তাদের কোনো আন্তরিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। এবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উ থেইন সেইনের বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে এবং মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছেন। এটা আশাব্যঞ্জক ঘটনা। আমরা আশা করবো, এবারো শুধু আশ্বাসলাভই সার হবে না। দুই দেশের সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই সমঝোতাকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যেতে কর্মকর্তা পর্যায়ে জোরালো তৎপরতা অব্যাহত রাখা হবে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা, সড়ক ও আকাশপথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ছাড়াও শিক্ষা ও পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয় নিয়েও দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার ও পর্যাপ্ত মজুদ সাপেক্ষে বাংলাদেশে গ্যাস রপ্তানিকে অগ্রাধিকার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট। আমরা আশা করবো, দুদেশের মধ্যকার অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সুরাহার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক স্বার্থ সম্পর্কীয় নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার হবে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.