আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চুক্তি না দেখেই কনোকো-ফিলিপস'র পক্ষে ২ সংসদীয় কমিটি

গত বিকেলে জমা দিয়েছিলাম সংবাদটি। কোন কারনে বার্তা সম্পাদকরা একটু দেরীতেই ছেড়েছেন। তাও 'এক্সক্লুসিভ' নয়; দেশের আরো খবর হিসেবে। বুঝুন অবস্থা। তবে নিউজটা কইরা মজা পাইছি; তাই শেয়ারাইলাম।

সমুদ্র বক্ষের খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বহুজাতিক কোম্পানি কনোকো-ফিলিপস'র সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি না দেখেই তার পক্ষে সাফাই গেয়েছে পৃথক দুটি সংসদীয় কমিটি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সমপর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আলোচিত এই চুক্তিকে 'যৌক্তিক' এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এটিকে 'দূরদর্শী' ও 'সাহসী' আখ্যা দিয়েছে। অবশ্য পূর্ণাঙ্গ চুক্তি তো দূরের কথা এর সার-সংক্ষেপও দেখেননি ওই দুটি কমিটির কোন সদস্য। পৃথক দুটি বৈঠকে চুক্তির ব্যাপারে তারা শুধু জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিনের মৌখিক বক্তব্য শুনেছেন। আর এর জোরেই তারা প্রবলভাবে এ চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

গত ২৯ জুন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সমপর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৭তম বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে না থাকলেও এই চুক্তিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই সময় চুক্তির ব্যাপারে কমিটির সদস্যদের মৌখিক উপাত্ত দেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। এ সময় চুক্তির কোন সার-সংক্ষেপ দিতে পারেননি তিনি। তবে এর পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। সচিবের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই কমিটি কনোকো-ফিলিপস'র সাথে সম্পাদিত চুক্তি যৌক্তিক আখ্যা দেয় কমিটি।

ওই বৈঠকের পর সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখা থেকে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দেশের জনগণের বিভ্রান্তি দূরীকরণে গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিরাজমান অবকাঠামোগত সমস্যা, যন্ত্রপাতির স্বল্পতা ও সরকারি অর্থের সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষাপটে 'কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির যৌক্তিকতা' গণমাধ্যমে জনগণকে জানানোর সুপারিশ করা হয়। প্রসঙ্গত, এই চুক্তির বিরুদ্ধে তেল গ্যাস খনিজ বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা কমিটির হরতালের মাত্র ৩ দিন আগে এমন সুপারিশ করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আলাপের জন্য আজ সোমবার দুপুরে ও বিকেলে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। এ সময় 'ছালামত' নামে পরিচয়দানকারী তার এক ব্যক্তিগত সহকারী ফোনটি রিসিভ করে বার বারই শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, 'স্যার বিশ্রামে আছেন।

' এর আগে তার একান্ত সচিব মোহাম্মদ হাসান আরিফ জানান, সুবিদ আলী তার নির্বাচনী এলাকাতে আছেন। অন্যদিকে, গত ১৯ জুন কনোকো ফিলিপস'র সাথে সম্পাদিত চুক্তিকে 'দূরদর্শী' ও 'সাহসী' আখ্যা দেয় সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ওই দিন কমিটির ৪৬তম বৈঠকের পর সভাপতি এ বি এম গোলাম মোস্তফা শীর্ষ নিউজ ডটকমকে এ তথ্য জানান। তবে কমিটির বিরোধী দলীয় সদস্য (প্রধান হুইপ) জয়নুল আবদিন ফারুক ওই চুক্তিকে 'দেশের স্বার্থ-বিরোধী' আখ্যা দিয়ে এ ব্যাপারে কমিটির দেয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। ওই বৈঠকেও কমিটির সদস্যরা চুক্তির কোন সার-সংক্ষেপ দেখার সুযোগ পাননি।

সেই একই সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন একই ভাবে তাদের সামনে চুক্তি সম্পর্কিত মৌখিক উপাত্ত তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা জানান, বৈঠকে কনোকো-ফিলিপস'র সাথে সম্পাদিত চুক্তির ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের সচিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় জানানো হয়, 'ওই চুক্তি অনুযায়ী উত্তোলিত সমস্ত গ্যাস বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য থাকবে কনোকো-ফিলিপস। ' এছাড়াও ওই চুক্তির অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বৈঠকে এটিকে 'দূরদর্শী' আখ্যা দেয়া হয়। সভাপতি বলেন, এই চুক্তি নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তারা এ ব্যাপারে কিছু না জেনে-বুঝেই এমনটা করছে।

গোলাম মোস্তফা দাবি করেন, প্রায় ১৫ বছর পর কোন কোম্পানিকে সমুদ্র বক্ষের খনিজ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়া প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার 'সাহসী' পদক্ষেপ। এর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বসে থাকলেও ভারত-মিয়ানমার তো আর বসে থাকবে না। অবশ্য ওই কমিটির সদস্য ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, কনোকো-ফিলিপস'র সাথে সম্পাদিত ওই চুক্তি নিঃসন্দেহে দেশের স্বার্থ-বিরোধী। বিদেশিদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রেই এই চুক্তি করা হয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, আমি কমিটির বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ওই বিতর্কিত চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিরোধী দলীয় সদস্যের অনুপস্থিতিতে কমিটি ওই চুক্তিকে এভাবে 'দূরদর্শী' বা 'সাহসী' বলতে পারে না। আমি কমিটির ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। জয়নুলের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে গোলাম মোস্তফা বলেন, এটা সত্য যে তার (জয়নুল আবদিন ফারুক) অনুপস্থিতিতেই এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি (জয়নুল আবদিন ফারুক) তো বৈঠক শেষ না করেই চলে গেছেন। সর্বশেষ আজ সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে আলাপকালে গোলাম মোস্তফা শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, ওই দিনের বৈঠকে জ্বালানি সচিবের কাছে ওই চুক্তির সার-সংক্ষেপ দেখতে চেয়েছিল।

কিন্তু তিনি তা দেখাতে পারেননি। এদিকে, জাতীয় সংসদে এই চুক্তিটি প্রকাশের দাবি জানিয়ে বিগত অধিবেশনে দু'দফা বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গত ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, বহুজাতিক কোম্পানির সাথে চুক্তি করে জাতীয় সম্পদ বিদেশের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ওই দিন মেনন বলেন, শেখ হাসিনা গত মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ক্লিনটনকে বলেছিলেন- ৫০ বছরের গ্যাস মজুদ রাখার পর গ্যাস রপ্তানি করা হবে। কিন্ত এখন তার বিপরীতে দেখছি কনোকো-ফিলপসের চুক্তির মাধ্যমে ৮০ শতাংশ গ্যাস রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে চুক্তির বিষয়ে কোন কিছু জনসম্মুখে প্রকাশ করা হচ্ছে না। বলা হয়- জনগণ সম্পদের মালিক। কিন্তু 'মালিকরা' চুক্তি সম্পর্কে কিছুই জানবে না; শুধু উপদেষ্টা, সেক্রেটারি, চেয়ারম্যানরা তা জানবে- এটা হতে পারে না। হয়ত ভবিষ্যতে শোনা যাবে কনোকো-ফিলিপসের সাথে সম্পাদিত এই চুক্তির পেছনেও অনেক লেনদেন হয়েছে। মূল নিউজের লিংক ::চুক্তি না দেখেই কনোকো-ফিলিপস'র পক্ষে ২ সংসদীয় কমিটি ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.