আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধুসূদন দত্ত

নিজের জন্য সব গ্লাণী, সবার জন্য ভালোবাসা। মধুসূদন দত্ত মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুন কলকাতায় পরলোকগমন করেন। অসম্ভব প্রতিভাবান এই কবি ও নাট্যকার যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি এক জমিদার বংশে। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন পেশায় উকিল। মা জাহ্নবী দেবী।

গাঁয়ের পাঠশালায় তার পড়াশোনায় হাতেখড়ি। কলকাতায় আসার পর খিদিরপুর স্কুল এবং হিন্দু কলেজে পড়াশোনা করেন। হিন্দু কলেজে বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন। কাব্যচর্চাও তার এ সময় থেকেই। অসম্ভব উচ্চাভিলাষী মাইকেলের স্বপ্ন ছিল ইংরেজি ভাষার কবি হিসেবে খ্যাতিলাভ।

এ জন্য তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে বিলেতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এসময় তিনি নামের আগে মাইকেল শব্দটি জুড়ে দেন। ১৮৪৪ সালে বিশপস কলেজে ভর্তি হন। এখানে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। ধর্মান্তরিত মাইকেল আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

বাবা তাকে অর্থ-সাহায্য বন্ধ করে দেন। ভাগ্যান্বেষণে মাইকেল মাদ্রাজে আসেন ১৮৪৮ সালে। এখানে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। এছাড়া হিন্দু ক্রনিকল পত্রিকা সম্পাদনা ছাড়াও মাদ্রাজ স্পেকটেটরের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তার কাব্যগ্রন্থ দ্য ক্যাপটিভ লেডি এবং ভিশনস অব দ্য পাস্ট প্রকাশিত হয়।

এখানে তার ছদ্মনাম ছিল টিমলি পেনপয়েম। মাদ্রাজেই তিনি রেবেকা ও পরে হেনরিয়েটাকে বিয়ে করেছিলেন। এরই মধ্যে মাইকেল বাবা-মা দু'জনকেই হারান। পিতার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তিনি কলকাতায় আসেন ১৮৫৬ সালে। এসময় পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে প্রচুর অর্থোপার্জন করতেন।

রামনারায়ণ তর্করত্বের রত্নাবলী নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করতে গিয়ে বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব বোধ করেন। এই পরিস্থিতিতে নাট্যকার হিসেবেই বাংলা সাহিত্যে তার আগমন। এক অর্থে মধুসূদনই বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাট্যকার। ১৮৬১ সালে তিনি উপহার দেন কালজয়ী সৃষ্টি 'মেঘনাদবধ' মহাকাব্য। ১৮৬২ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে বিলেত যান।

এর দু'বছর পর ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে আসেন। এখানেই তিনি বাংলায় সনেট লেখা শুরু করেন। এসময় মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রচণ্ড অভাববোধ থেকে বিখ্যাত চতুর্দশপদী কবিতা 'কপোতাক্ষ নদ' ও 'বঙ্গভাষা' লেখেন। এখান থেকে বিলেতে ফিরে এসে ব্যারিস্টারি সনদ গ্রহণ করেন। পরে কলকাতায় ফিরে হাইকোর্টে যোগ দেন।

কিন্তু আইন ব্যবসায় সফল হননি। অমিতব্যয়ী মাইকেল এক পর্যায়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এর চরম মাশুল তাকে শেষ বয়সে গুনতে হয়েছিল। মহান যুগস্রষ্টা এই কবি অর্থাভাব, অসুস্থতা ও চিকিত্সাহীনতায় এক দুর্বিষহ জীবনের মধ্যে পড়েন। স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর তিন দিন পর ১৮৭৩ সালের এই দিনে কলকাতার জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন অবস্থায় শেষ বিদায় নেন তিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.