আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলিং বেল

জানি বরাবরের মত আজও ও এ কাজটাই করবে । চার-পাঁচ মাসতো হলো তবু সেই একই ব্যবহার। যথারীতি এ চিরাচরিত নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটুক এ প্রার্থনা করে কলিং বেল টিপলাম। সাধারণত আমাকে ২৫/৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হয়। আজ সাত সেকেন্ডে পর দরজা খোলার শব্দ হলো।

দরজা কিছুটা ফাঁকা হলে আর কোন সাড়া শব্দ নেই যেন হরর মুভির কোন ক্লিপ যেখানে হঠাৎ বিচ্ছি একটা ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ আওয়াজ করে দরজা খুলে যায় কিন্তু কাউকে দেখা যায়না। আমি এ দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত, শুধু একটু অবাক হলাম এত তাড়াতাড়ি খুলে গেল বলে তবে আমার প্রার্থনা কবুল হয়নি তা বলাই বাহুল্য। প্রতিদিন এমন অভ্যর্থনায় আমিও যেন কোথায় একটু ‘র ইমোশন’ খুজে পাই। দু রুম পার হবার পর আমার গন্তব্য- আমার ছাত্রের রুম। খোলাসা করেই বলি।

আমি যে বাসায় পড়াই সেখানে কলিং বেল টেপার পর ছাত্রের চাচাতো বোন দরজা খুলে দেয় কিন্তু আমি জানিনা ঠিক কি কারনে সে দরজা খোলার পরই একদৌড়ে তার রুমে চলে যায়। আমি ঐ বাসায় পড়ানো শুরু করার পর তার সবচাইতে বড় বেদনার কারণ ছিলাম সম্ভবত আমি । আমার কারণে সে সব রুমে যেতে পারত না। তার পর হঠাৎ একদিন ছাত্রকে দিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে আসলাম। খুব লাজুক আর কম্পিত স্বরে তাকে আসতে বলার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিল সেদিন।

আমি বরাবরই আর্টসের ছাত্র তাই তার কাছে ত্রিকোনমিতি আর সূচকের অংক শিখব বলার পর তার চেহারার ভুগোলে যে পরিবর্তন হয়েছিল তা ছিল দেখার মত। আমার থেকে যথেষ্ট জুনিয়র তাই ‘ছোট্ট মানুষ’টার এমন অবস্থা খুবই উপভোগ করেছিলাম। ঘটনার সাত আটদিন পর আমার ছাত্রের মাধ্যমে সে সূত্র লেখা একটা খাতা পাঠিয়ে দেয়। দেখ জ্বালা- ত্রিকোনমিতি আর সূচকের সূত্রগুলোই তো আমি পড়তে পারি না। এ কেমন শিখানো হলো? তবে অঙ্ক যতটুকুই শেখা হোক না কেন অনেক দিনের না মেলা একটা জটিল অঙ্ক যে এঘটনার মাধ্যমে ভাগশেষ ছাড়াই মিলে গেছে এটুকুই যা প্রাপ্তি--- মানসিক ভাবে পুরো প্রস্তুতি নিয়ে তারপর বেল টিপলাম।

সতের সেকেন্ড পর দরজাটা খুলে গেল । বিকেল বেলা । সাধারণত এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘুমায়। আমি বললাম ‘মিশিলা দাড়াও’। দরজাটা তখনো আলগা।

আমি আর ও একদম সামনাসামনি। লজ্জাবনত চোখে এমন একটা ভাব যেন স্কুল পালাতে গিয়ে ধরা পড়া বালিকা হেডমিস্ট্রেসের সামনে। ‘‘আমি দেখতে খুব কুৎসিত ?’’ কিছুটা ঝাঁঝের সাথে আমার প্রথম প্রশ্ন। খানিকটা সচকিত আর অপ্রস্তুত হয়ে সে আমার দিকে তাকালো। সাথে সাথে আমি তাকে দ্বিতীয় আঘাত করলাম- ‘‘ আমার গা থেকে পচা মাছের গন্ধ আসে?’’ এবার কিছুটা ভয় মিশ্রিত সরল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো সে।

কি একটা বলতেও গেল বুঝতে পারলাম। আবারো তাকে সে সুযোগ না দিয়ে বললাম ‘‘আমাকে দেখলে এরকম দৌড়াও কেন?’’ শেষ প্রশ্নটার পর ওর এক্সপ্রেশনটা আমি সারা জীবন মনে রাখব। যেন ক্লোজআপ ওয়ানে বিচারক ফাহমিদা নবী মুখকালো করে সবাইকে অবাক করে হঠাৎ প্রতিযোগীকে তার গানের প্রশংসা করে ‘ইয়েস কার্ড’ নেবার জন্য বললেন। ওমা ‘ছোট্ট’ মেয়েটা কিনা বলে ‘‘আমি দৌড়াই না কিন্তু আপনাকে দেখলে আমার হাটার গতি বেড়ে যায়। ভাবছি কলিংবেলটাই ফেলে দিতে হবে তাহলে দরজা খোলার অপেক্ষায় আমাকে আর নিয়মিত বিকেলের ঘুমটা বিসর্জন দিতে হবে না’’।

‘‘সেক্ষেত্রে আমি একটা নতুন কলিংবেল কিনে আনব’’ আমার উত্তর। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.