আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুলামী এবার কোচিং এ (১৩+ পোষ্ট এবং আপুরা নিজ দায়িত্বে ঢুকবেন)

আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং। জীবনের একটা চরম আনন্দের + বাদরামীর সময় ছিল ক্লাস এইট এবং তার পরের সময়। কুমিল্লা জিলা স্কুলের নারীবিহীন জীবন খুবই খারাপ কাটত।

নারী থেকে দুরে থাকতে থাকতে নারী সম্পর্কে আউল-ফাউল একটা ধারণা জন্মিয়ে গেল। যদিও রাস্তাঘাটে যেভাবে তাকায়া থাকতাম তা খুব একটা আউল-ফাউল তাকানো ছিলনা। ভীষণ অর্থপূর্ণ ছিল। যাউগ্গা। আসল আলাপে যাই।

ক্লাস এইটে জীবনে প্রথমবারের মত একটা কোচিং এ ভর্তি হলাম। গঙ্গা কোচিং সেন্টার। এ কোচিংটায় এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢোকা লাগত এবং টিচার ছিলেন দুই ভাই। টেষ্টে জিলা স্কুল আর ফয়জুন্নেসা স্কুল(কুমিল্লার বেস্ট গার্লস স্কুল) থেকে ২০ জন করে নেয়া হত এবং সেখানে স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা চান্স পেত (আমি চামে চুমে পেয়ে গেসি)। আমি তখন এতকিছু জানতাম না।

এডমিশন টেস্টের দিন পরীক্ষা দিতে গিয়ে পড়লাম ব্যাপক ফাপরে। অইখানে দেখি মেয়েরাও ঢোকে। কাহিনী কি? কাহিনী কিছুক্ষণ পর বুঝিলাম ও আনন্দে আটখানা হইয়া উঠিলাম ইহা ভাবিয়া যে আমার শ্রেণীকক্ষে আবারো নারীর আগমন ঘটিয়াছে । টেস্টে চান্স পেলাম এবং ভর্তি হয়ে গেলাম। প্রথম ক্লাসে সবাই ব্যাপক নার্ভাস ছিল, খালি আমি আমার এক বন্ধু নারীদের দিকে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে রইলাম।

ক্লাসে যাই, মেয়ে দেখি পড়ার ফাকে। ভালই লাগে। ভাল ছাত্রীরা মনে হয় দেখতেও সুন্দর হয়, আর ভাল ছাত্ররা বান্দর টাইপ। আমরা আমাদের বাদরামী চালিয়ে যেতে লাগলাম। নারীঘটিত বাদরামীতে পড়ে যাই, আগে নরঘটিত বাদরামীর কিছু কাহিনী বলি।

বাদরামীর ঘটনা ১০০-১৫০ হবে। চারটা শেয়ার করলাম। কোচিংটা ছিল ৪ তালায় আর ৩ তালায় একজন ডাক্তার থাকতেন। উনার নাম পরিমল দেবনাথ। উনার দরজায় একটা কালো সাইনবোর্ডে সাদা কালিতে নাম লেখা ছিল।

একদিন ক্লাস শেষে কেন জানি তাল উঠল আর আমি নামার সময় উনার কলিংবেলটা টিপ দিয়ে নেমে গেলাম। টানা ১ সপ্তাহ কলিংবেল টেপার পর কমপ্লেন এল যে ক্লাস এইটের ছুটির পর কে জানি কলিংবেল বাজায়। গুরুতর অভিযোগ। স্যার বেত নিয়ে এনকোয়ারী শুরু করলেন কে বাজায় বের করার জন্য। সবাই জানে কে করসে, কিন্তু কেউ কিছু বলেনা।

হঠাৎ এক মোটা পোলা আমারে ফাসায়ে দিল। খাইলাম ধরা। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী ছুটির সময় আমরা বের হতাম আগে। এর ১০ মিনিট পর মেয়েরা বের হত। ছেলেরা বের হবার পর দুই স্যার আমাকে দরজার বাইরে বারান্দায় নিয়ে দুই দিকে ধরে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে পিঠে বাড়ি মারতে লাগলেন।

নারীদিগের সম্মুখে এমত বেকায়দা অবস্থায় পড়িয়া কোনরকমেই তাহা কায়দা করিতে না পারিয়া আমার মস্তিকে বায়ুবেগে আগুন বহিতে লাগিল আর আমি ভাবিলাম, খাইছি তোরে পরিমল ((। আর চিন্তা করলাম আমি যেহেতু বেইজ্জত হচ্ছি মেয়েদের সামনে, স্যারদেরও একটু পেইন দেই। এক স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কলিংবেল টিপো কেন?” –আমি বললাম, “স্যার কি নাম বললেন? কলিংবেল? উ আচ্ছা, সুন্দর নাম। স্যার জীবনে কোনদিন টিপিনাই তো, তাই আস্তে আস্তে দুইটা টিপ দিসি। বেশী জোড়ে দেইনাই।

বিশ্বাস করেন”। হাত দিয়ে অঙ্গভঙ্গি করে দেখালাম। কিরকম অঙ্গভঙ্গি করেছিলাম তা নাই বা বললাম, শুধু এইটুক বলি, ক্লাসের মেয়েরা লজ্জায় লাল হয়ে গেছিল। স্যাররা আমাকে অনেক আদর করতেন বলে আর কিছু না বলে মাইরের প্রেশারটা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “ফাইজলামী কর? বাপের কাসে ফোন দিয়া দেমু। ” আমি চুপসিয়ে গেলাম।

স্যাররা মারতে থাকলেন আর আমি বীরপুরুষের মত সটান দাড়িয়ে থাকলাম চোখ মুখে একটা তৃপ্তির ভাব নিয়ে। কিছুক্ষণ পর মার শেষ হল আর সাথে সাথে আমি বললাম, “স্যার আর মারবেন না? আরামই তো লাগে। মনে হল দলাই-মালাই”- বলেই দৌড়। তার ১ সপ্তাহ পরের ঘটনা। কে বা কারা(আমি কিসু জানিনা ) ৩ তালার সাইনবোর্ডের পরি টা কালো পারমানেন্ট মার্কার দিয়ে কেটে দিয়েছিল।

দরজার সাইনবোর্ডের মালিক হয়ে গেলন "মল দেবনাথ"। স্যাররা আমাদেরকে অনেক আদর করতেন আর ধমক দিতেন গরুচোর, বনশুয়র, গাধা, অথর্ব ইত্যাদি বলে। ধমক খেলেও খুব ভাল লাগত। একদিন ক্লাসে এক বন্ধু শয়তানী করে ধরা খেল। যথারীতি স্যার অনেক ধমক, জালিবেতের মাইর প্রয়োগের পর ভাব নেয়া শুরু করলেন।

- “তোমাদের মত কত গরুচোর মানুষ করে বের করলাম আর তোমরা শয়তানী করবে, আমি ধরতে পারবনা তা অসম্ভব। ক্লাসে কে কি করে সব আমি জানি। কে কতটুকু শয়তান আমি মুখ দেখেই চিনতে পারি। ” সাথে সাথে আরেক বন্ধু বলে উঠল, “জি স্যার, রতনে রতন চিনে। ” ওইসময় স্যারের মুখের যে কি অবস্থা হয়েছিল মনে করে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।

এবার দুইটা নারী বিষয়ক বাদরামী শেয়ার করি। স্যাররা ছেলেদের উপর খেপলে ধমক, মাইর দিয়েই খালাস। মেয়েদের অবস্থা মুখ দিয়েই আরো খারাপ করে দিতেন। স্যারের কমন ডায়লগ ছিল, “বুচ্ছনিগো? তোমরা মাইনষের কামের বেডির চাকরিও পাইতানা। কামের বেডিরাও তোমরার চাইতে অনেক ভালা।

বিয়ার পরে হাউরী(শ্বাশুরী) আর জামাইয়ের কনি খাইতে খাইতে টাইট হইবা। এর আগে মানুষ হইবা না। ” তারপর শেষ করতেন “কামের বেডী কোনখানের..” বলে। মেয়েদের মধ্যে ইউনিটি তেমন ছিলনা। কেউ কোন দোষ করলে অন্যরা স্যারকে বলে দিত।

আর আমরা ছিলাম পুরা উলটা। শত মারলেও তথ্য ফাস করতামনা। একদিন এমনি একটা ঘটনা নিয়ে স্যার নারী সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক ক্ষিপ্ত। স্যারের শেষ ডায়লগ ছিল এরকম, “তোমরা মাইয়ারা খারাপ। একজনের নামে আরেকজন কুটনামী কর।

পোলারা দেহ কত্ত ভাল। মাইর খাইলেও বন্ধুরারে ফাসায়না। আর তোমরা কুটনী। ”। আমার মুখ দিয়ে ফস করে বের হয়ে গেল, “স্যার, কামের বেডীরা কুটনাই হয়।

কি করবেন আর?” জালিবেতের ৪টা বাড়ির দাগ সারতে ১ সপ্তাহ লেগেছিল। / পরের ঘটনাটা একটু সেন্সরড টাইপের। তখন টিনএজ ছিলাম। এতকিছু বুঝতাম না। খুব বাজে কাজ করেছিলাম একটা।

শেয়ার করতে কেমন জানি লাগছে আবার শেয়ার না করেও পারছিনা। শেয়ার করেই ফেলি। কোচিং এর ক্লাসে দুটা রো ছিল বেন্চের। মেয়েদের সারির শেষের বেন্চে ছেলেরা বসতাম। একদিন সেই বেন্চ ৩ বন্ধু বসে ক্লাস(শয়তানী) করছি, এমন সময় দেখলাম সামনের বেন্চের একমাত্র মেয়েটার ঘাড়ের পাশে কাধের উপর জামার নিচ দিয়ে কি জানি বের হয়ে আছে।

প্ল্যান করলাম পেইন দেয়ার। এক বন্ধু বলল, “দেখতো অইটা কি?” আমি বললাম, “মোটা সুতার মত লাগে। কালো না”? বন্ধু বলল, “হুমম, ধরে দেখব নাকি?” বলার সাথে সাথে মেয়েটা কেপে উঠে ওড়না দিয়ে ঢেকে ফেলল। আমরা বললাম, “সুতা না সাপ ছিল। পুকুরে ডুব মারসে।

বাদ দে, পরে ধরমু”। একটু পর জিনিসটা আবার উকি ঝুকি মারতে শুরু করল। বন্ধু বলল, “আবার বের হইসে। এবার ধরেই ছাড়ব। খাড়া।

”- বলে হাত দিয়ে একটু আওয়াজ করার সাথে সাথেই মেয়েটা কাদো কাদো মুখে দাড়িয়ে বলল, “স্যার পেছন থেকে অশ্লীল কথা বলে। ” আমরা বললাম, “না স্যার সাপ দেখতে চাইসিলাম”। ৮-১০ টা বেতের বাড়ি খেয়েছিলাম সেদিন। তবে মেয়েটার কাছে এখন মাফ চাইতে ইচ্ছা করে। বিশাল খারাপ কাজ করে ফেলেছিলাম।

হাউএভার, রিয়েল ডেমোন ভাইয়ের ভাষায়, “এক্স ইজ এক্স। ট্রাই ফর দা নেক্সট । ” নেক্সটের পেছনে ট্রাই করতে করতে স্কুল ছাড়লাম, কলেজ ছাড়লাম। এখন পরবর্তী নেক্সট ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেটের জন্য ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। সব জায়গায়ই অনেক মজা করেছি।

কিন্তু গঙ্গা কোচিং এর ৩ বছরই বলব জীবনের সবচেয়ে মজার সময়। সবাই যখন স্কুল লাইফে ফিরে যাবার জন্য আফসুস করে আমরা গঙ্গার সতীর্থরা আফসুস করি কোচিং এ ফেরার জন্য। আমাদের স্কুলের রিউনিয়ন এখনো হয়নি। কিন্তু গত ঈদের বন্ধে কুমিল্লা ধর্মসাগরের পাড়ে আমরা কোচিং এর রিইউনিয়ন করি। একটা ছবি দিয়ে দিলাম দুই অসম্ভব প্রিয় স্যারের।

অনেক শিক্ষক পেয়েছি জীবনে। কিন্তু উনাদের মত একই সাথে ভালবাসা এবং শাসন কারো কাছে পাইনি। যাই হোক, এ পোষ্ট একটু মজা করতে চেয়েছিলাম। শেষে কেমন জানি নষ্টালজিক হয়ে পড়লাম। মাইন্ড খাইয়েন না কেউ।

কেমন লাগলো মতামত দিয়েন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।