আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তনশীল রূপ

এষড়নধষরুধঃরড়হ বা বিশ্বায়নের বিকাশ ঘটে মূলত সমগ্র বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের আবির্ভাব এবং সমাজতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়ে। এষড়নধষরুধঃরড়হ ঃবৎস টি প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী তথা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের দ্বারা সৃষ্ট। পুঁজিবাদী বিশ্ব ব্যবস্থায় ঈধঢ়রঃধষরংস কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বিশ্বায়ন বা এষড়নধষরুধঃরড়হ একটি কার্যকর হাতিয়ার রূপে কাজ করে। আর বিশ্বায়নকে ব্যবহার করে প্ুঁজিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে পৃথিবীর বুকে গড়ে উঠেছে ওগঋ, ডড়ৎষফ ইধহশ ও ডঞঙ এর মতো দাতা গোষ্ঠী। সেই সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন গঁষঃরহধঃরড়হধষ ঈড়সঢ়ধহু।

এ সকল ঈড়সঢ়ধহু এবং দাতা গোষ্ঠীর মাধ্যমেই বিশ্বে এষড়নধষরুধঃরড়হ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে দিন দিন পুঁজিবাদী সমাজ তথা পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে। বিশ্বায়নের সূচনা ঘটে মূলত অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে। তবে বর্তমানে বিশ্বায়ন রাষ্ট্রীয় সীমানাকে উঠিয়ে একটি বৈশ্বিক পটভুমি রচনা করেছে যেখানে পণ্য, অর্থ, চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি ও তথ্যসহ কোন কিছুকেই আর রাষ্ট্রীয় সীমানায় সীমায়িত করা যচ্ছেনা। ‘এষড়নধষ ারষষধমব’ নামক ধারনাটি এ অবস্থার প্রেক্ষিতেই এসেছে।

বিশ্বায়নের বিকাশ বিশ্বায়নের ধারণাটি মূলত বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। বিশ্বায়নের প্রাথমিক চালু হয় মোঙ্গলদের মাধ্যমে ষোড়শ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীতে যখন সিল্করুটের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার বড় বড় দেশের সাথে বাণিজ্য করতো। পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় বানিজ্যের মাধ্যমে বিশ্বায়নের সূচনা ঘটে বলে মনে করা হয়। তবে বিশ্বায়নের মূল বিকাশ ঘটে ১৯৭০ এর দশকে পুঁিজবাদের বিকাশের মাধ্যমে। এরপর ১৯৮০ সালে ডঞঙ বা ডড়ৎষফ ঞৎধফব ঙৎমধহরুধঃরড়হ এর প্রতিষ্ঠার পর এষড়নধষরুধঃরড়হ বিশ্বব্যাপী সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

বিশ্বায়নের বিকাশকে নিম্নোক্তভাবে দেখানো যায় - উপনিবেশবাদ সাম্রাজ্যবাদ স্নায়ুযুদ্ধ নব্য সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বায়ন লাভবান হচ্ছে কারা পুঁজি, পণ্য ও শ্রমের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্ব বা পশ্চিমা বিশ্ব দ্বারা বলা হয়ে থাকে বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বব্যাপী পুঁজি, পণ্য, সেবা, শ্রম ও তথ্য প্রযুক্তির অবাধ বিচরন হবে এবং উন্নয়ন হবে। কিন্ত কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় যে, পুঁজি ও পণ্য সহজে সঞ্চালন হয় কিন্ত শ্রম সঞ্চালন হয় না। আবার উন্নত দেশের বহুজাতিক কোম্পানীর পুঁজি ও পণ্য সকল দেশে অনুপ্রবেশ করলেও উন্নয়নশীল দেশ থেকে পুঁজি ও পণ্য উন্নত দেশের বাজারে প্রবেশ করে না। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন শর্ত প্রয়োগ করে থাকে। যেমন গার্মেন্টস সেক্টরে কোটা পদ্ধতির কারনে বাংলাদেশ আমেরিকাতে ব্যাপকভাবে তাদের বাজার ধরতে পারছে না।

আবার বাংলাদেশের প্রায় ৪৮ টি পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে পারছেনা তাদের শর্তের কারনে। ফলে দেখা যাচ্ছে ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটি বৈশ্বিক এলিট ও তাদের সহযোগীদের জন্য খুলে দেয় অপরিমিত ভোগের দুয়ার। অপরদিকে দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষকে রাখে দরিদ্রের মধ্যে। একটি হিসেবে দেখা গেছে বছরে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ দরিদ্র দেশগুলো থেকে ধনী দেশে চলে যায়।

অথচ দরিদ্র দেশের প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও কল্যাণমূখী বাজেট কেটে নেওয়া হয় এবং উন্নত দেশগুলো থেকে ঐ পরিমাণ পুঁজি দরিদ্র দেশে সঞ্চালিত হয় না। ফলে দরিদ্র দেশগুলো আরো বেশি দরিদ্রের মধ্যে নিপতিত হয়। দাতা গোষ্ঠীর শোষণ ওগঋ, ডড়ৎষফ ইধহশ, ডঞঙ, এ-৮ প্রভৃতি সংস্থা বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমা বিশ্বের স্থার্থই রক্ষা করছে। ডঞঙ নির্দেশিত বিশ্বায়ন আমাদের পরিচিত করছে এক নয়া নীতিবোধের সাথে যেখানে ঈশ্বরের অপর নাম ডলার আর মুনাফা অর্জনে ব্যর্থতা নৈতিক পাপের নামান্তর। ডঞঙ চুক্তি একবার কার্যকর হলে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের সরকারের জন্য ডঞঙ আইন পরিপন্থী বৈদেশিক বাণিজ্য, পরিষেবা এবং কৃষি ও প্রযুক্তি নীতি অবলম্বন করা খুবই কঠিন।

এবং এসব আইন কানুন ঐ দেশের ভবিষ্যত সরকার গুলোর জন্য হয় বাধ্যতামূলক। ১৯৮০ এর দশকে যখন ৩য় বিশ্বের দেশসমূহ বিশেষ করে নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশসমূহের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে তখন পশ্চিমা বিশ্ব তৈরি করে ওগঋ এবং ডড়ৎষফ ইধহশ. টেকসই উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য এ সকল দাতাগোষ্ঠী ঐ দেশসমূহে ঋন দেয় এবং ঋনের জালে জর্জরিত করে। ফলে এ দেশগুলো ঋন পরিশোধ করতে গিয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনে এবং একই সাথে ঐ সকল দাতাগোষ্ঠীর উপর আরো বেশি নির্ভশীল হয়ে পড়ে। ফলে তাদের নির্দেশিত নীতি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হয় ঐ সকল দেশগুলো। যেমন ৯০’র দশকে ওগঋ প্রদত্ত আর্জেন্টিনার ‘কারেন্সী পেগিং’ নীতির মাধ্যমে মুক্ত বাজার নীতি গ্রহন দেশটিকে অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে।

৬০’র দশকেও কেনিয়া ছিল একটি ধনী এয়ং উর্বর রাষ্ট্র। কিন্ত ওগঋ এর পরামর্শে মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহন করায় দেশটিতে সংকটের সূচনা হয়। বহুজাতিক সংস্থার স্বার্থ বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর ক্ষমতা বিশ্বের যে কোন সরকারের চেয়ে বেশি। বিশ্ব সম্পদের তিন ভাগের এক ভাগের চেয়েও বেশি সম্পদের মালিক এ কোম্পানীগুলো। বিশ্বায়নের সুফল ভোগকারী কর্পোরেট কেম্পানীর সংখ্যা খুব বেশি নয়।

‘কনসাস চয়েস’ নামক একটি পশ্চিমা ওয়েব সাইটের মতে এ ক্ষদ্র গোষ্ঠীটাই পৃথিবীকে শাসন করছে। বিশ্বায়নকে ব্যবহার করে তারা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী তথা দু’শ আশি কোটির অধিক দরিদ্র ও কম সম্পদের জনগোষ্ঠীর মোট সম্পদ ও অর্থের চেয়েও বেশি সম্পদ ও অর্থের মালিক হয়ে গেছে। মাত্র .৩৫৮ জন মিলিনিয়ামের সম্পদরাজি বিশ্বের শতকরা ৪০ ভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোট সম্পদের চেয়ে বেশি। এঅঞঞ, ডঞঙ ইত্যাদি সংস্থা মূলত বহুজাতিক সংস্থার স্বার্থেই কাজ করে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের কৃষিতে বিশ্বায়ন বিশ্বায়ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় আঘাত করছে।

বিশ্বায়ন সর্বত্রই ক্ষুদে কৃষকদের প্রান্তিক করে দিয়েছে। এই প্রান্তিকীকরন চরম আকার লাভ করেছে Ñ  ‘সবুজ বিপ্লব’ এর সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত কৃষি ব্যবস্থায় বহুজাতিক সংস্থা অধীনস্ত কৃষি ব্যবসায়ের মাধ্যমে।  কৃষি বাণিজ্যের অসম উদারীকরনের মাধ্যমে, বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভর্তুকী নীতিমালা এর অন্তর্ভূক্ত।  জৈব প্রযুক্তির কর্পোরেট মনোপলির মাধ্যমে এবং  বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের সরকারের কৃষিতে ভর্তুকী প্রত্যাহার এবং শিল্পখাতে পক্ষপাত তৈরির মাধ্যমে। অথচ উন্নত দেশগুলো নিজ দেশের কৃষিতে অধিক ভর্তুকি প্রদান করছে এবং উন্নয়নশীল দেশের সাথে কৃষিতে অসম চুক্তি সম্পাদন করছে।

যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্লিনটন প্রশাসনের সময় মেক্সিকোকে এক বাণিজ্যিক চুক্তি করার ক্ষেত্রে বাধ্য করে যা মেক্সিকো থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সস্তা দরের টম্যাটো রফ্তানী করাকে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মেক্সিকো প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। বলা বাহুল্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের টম্যাটো চাষীরা এতে লাভবান হয়। শুধুমাত্র ডঞঙ এবং ঘঅঋঞঅ উভয়ের নির্ধারিত আমদানী রফ্তানী নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে, পেশি শক্তির প্রদর্শনে আমেরিকা এ কাজ করে। উন্নত দেশগুলোর পারস্পারিক সম্পর্ক আমরা যদি বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর পারস্পারিক সম্পর্কের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই উন্নত দেশগুলো এ প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে উন্নত হচ্ছে।

আজকে ইউরোপীয় দেশগুলো উন্নত কারন সমঅর্থনৈতিক শক্তি সম্পন্ন দেশগুলো বিশ্বায়নের ধারনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠন করেছে এবং এর দ্বারা উন্নত হচ্ছ্। ে আজকে যুক্তরাষ্ট্র , চীন, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মালয়েশিয়া, ভারত প্রত্যেকটি দেশই তাদের পারস্পারিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করছে এ বিশ্বায়নের দ্বারা। পূর্ব এশিয়ার অধিক সফলতা সম্পন্ন দেশ যেমন মালিেশয়া, জাপান, চীন, দক্ষিন কোরিয়া নিজেদের বাজারকে বহিঃবিশ্বের কাছে খোলামেলা করেছিল খুবই দীর স্থির ভাবে এবং কিছু নিয়মনীতি মেনে। এসব দেশ বিশ্বায়নের সুযোগ গ্রহন করে তাদের রফ্তানী বাড়িয়েছে এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তাই বলা যায় বিশ্বায়ন শুধুমাত্র উন্নত দেশগুলোর পারস্পারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিক সফলতা নিয়ে আসে যেটা উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে ঘটেনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.