আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মুনতাজার আল-জাইদি

সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা 'সাপ্তাহিক অগ্রযাত্রা'র সম্পাদক মাসিক ' সুন্নিয়ত' পত্রিকা ও সাপ্তাহিক জা'আল হক পত্রিকা'র উপদেষ্টা ওলামায়ে আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা'য়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক, বিশ্ব সুন্নী ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আঞ্জুমানে আশেকা

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মুনতাজার আল-জাইদিঃপ্রেসিডেন্ট বুশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মেরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণ্য ইরাক-নীতির প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মুনতাজার আল-জাইদি। পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বারুদেই আগুন দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিদ্রোহকে উস্কে দিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই ইরাকি সাংবাদিক। ঘটনার পর ইরাকে জুতা রীতিমতো প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে। ইরাকিরা মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারছে, ঘৃণার প্রকাশ হিসেবে রাস্তায় রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখছে জুতা। এরই মধ্যে এক সৌদি নাগরিক এক কোটি ডলার দিয়ে মুনতাজারের সেই জুতা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

মুনতাজারের সাহসের প্রশংসা করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ। মুনতাজারের মুক্তি, সেই সঙ্গে মার্কিনিদের হটাও দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো ইরাকের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল ইরাকের তৃতীয় বৃহত্তম নগর মসুল ও শিয়া অধ্যুষিত শহর নাসিরিয়ায় কয়েক হাজার মানুষ মুনতাজারের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে। ইরাকের সাংবাদিক সমিতি মুনতাজারের মুক্তি দাবি করেছে। সমিতির প্রধান মুয়াদ আল-লামি বলেন, মুনতাজার যদি ভুলও করে থাকেন, কম বয়স বিবেচনায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

আগের দিন বাগদাদের সদর সিটির লোকজন জুতার মালা বানিয়ে খুঁটিতে ঝুলিয়ে দেয়। ওই দিন নাজাফে মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। তরুণ মুনতাজার রাতারাতি আরব বিশ্বের নায়ক হয়ে উঠেছেন। তাঁকে নিয়ে এখন বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে, টেলিভিশনে বারবার দেখানো হচ্ছে জুতা ছোড়ার সেই দৃশ্য। ইউটিউবে এ দৃশ্য দেখার জন্য লাখ লাখ মানুষ ইন্টারনেটে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।

বুশকে লক্ষ্য করে মুনতাজারের জুতা ছুড়ে মারার ঘটনায় ইরাকের চিরবৈরী শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদও ঘুচে গেছে। শিয়া নেতা মুকতাদা আল-সদরের দল মুনতাজারকে 'নায়ক' আখ্যা দিয়েছে। সুন্নি মুসলমানদের সংগঠন বলেছে, মুনতাজার মার্কিন দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির মেয়ে আসিয়া ঘোষণা দিয়েছেন, বীরত্বের জন্য তিনি মুনতাজারকে বিশেষ পুরস্কার দেবেন। লেবাননের গেরিলা সংগঠন হিজবুল্লাহও ইরাকি এ সাংবাদিককে 'নায়ক' অভিহিত করেছে।

গত রোববার বাগদাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বুশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারার পরমুহূর্তেই ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনী মুনতাজারকে গ্রেপ্তার করে। এরপর জানতে চাওয়া হয় মুনতাজার স্বেচ্ছায় এ কাজ করেছেন, নাকি কেউ অর্থের বিনিময়ে তাঁকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাবাসাদে মুনতাজার কী বলেছেন, তা এখনো জানা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কর্মকর্তারা গতকাল জানিয়েছেন, মুনতাজারকে ইতিমধ্যেই ইরাকি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মুনতাজার যে টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক, সেই বাগদাদিয়া টিভি চ্যানেলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলে ইরাক সরকার যে দাবি করেছে, টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তা অগ্রাহ্য করেছে।

বাগদাদিয়া টিভির কর্মকর্তারা মুনতাজারের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মিসরের কায়রোভিত্তিক এই টিভি চ্যানেলটি এক বিবৃতিতে বলেছে, মুনতাজার একজন উদারপন্থী গর্বিত আরব। গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অবিলম্বে এই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়া উচিত। টিভি কর্তৃপক্ষ জানায়, বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্মাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ২০০৫ সালে মুনতাজার তাদের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ইউটিউবের বিপণন ব্যবস্থাপক ডেভিড বার্চ ওয়াশিংটন টাইমসকে বলেছেন, প্রতি ঘণ্টায় ২০৯ জন ব্যক্তি ভিডিওটি আপলোড করছে এবং প্রথম দিনেই ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ব্যক্তি ফুটেজটি ইউটিউবে দেখেছে।

মিসরের কায়রোয় চারুকলার শিক্ষার্থী তামের ইসমাইল বলেন, ?আমি ইউটিউবে ফুটেজটি এ পর্যন্ত অনেকবার দেখেছি। বুশকে 'কুত্তা' বলে গালি দেওয়ার দৃশ্যটি আমাকে যেমন উত্তেজিত করে, তেমনি হতাশ করে জুতা দুটো লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার দৃশ্যটি। ? বিভিন্ন মহল মনে করছে, ঘটনাটি একজন তরুণ সাংবাদিকের অনিয়ন্ত্রিত আবেগের বহিঃপ্রকাশই শুধু নয়, এ ছিল প্রতিবাদের বড় অস্ত্র। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিষয়ের অধ্যাপক আসাদ আবু খলিল বলেন, 'এ ঘটনা দেখিয়ে দিল যে জুতা কলমের চেয়েও শক্তিশালী। ' তিনি বলেন, ঘটনাটির ব্যাপ্তি ছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড।

কিন্তু এর মধ্য দিয়েই মুনতাজার সবার মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। জর্দানের আল-গাহদ পত্রিকার সম্পাদক মুসা বারহুমেহ বলেছেন, 'বুশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারার চেয়ে বড় কোনো বিদায়-চুম্বন হতে পারে না। ইরাকসহ আরব বিশ্ব বুশকে কতখানি ঘৃণা করে· এ ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। ' সৌদি আরবের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি মুনতাজারের সেই জুতা জোড়ার এক পাটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ওই ব্যক্তি বলেছেন, এক কোটি ডলার দিয়েও যদি মুনতাজারের এক পাটি জুতা কেনা যায় তবে তিনি ধন্য বোধ করবেন।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজও ইরাকি সাংবাদিকের সাহসের প্রশংসা করেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠক চলার সময় টেলিভিশনে জুতা মারার দৃশ্যটি দেখে শাভেজ হো হো করে হেসে ওঠেন। এরপর তিনি বলেন, 'ভালোই হলো যে জুতা বুশের গায়ে লাগেনি। আর আমি নিজেও কখনো এমন কাজে কাউকে উৎসাহিত করব না। তবে ইরাকি সাংবাদিকের সাহসের প্রশংসা করতেই হয়!' সোমবার দিনভর ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টিভিতে দৃশ্যটি দেখানো হয়।

দৃশ্যটি ফলাও করে প্রচার করে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ মধ্যপ্রাচ্যের সব টিভি নেটওয়ার্ক। দামেস্কের রাজপথের পাশে বিশাল এক ব্যানারে শোভা পাচ্ছিল এ লেখাটিঃ 'হে সাহসী সাংবাদিক, মহান ওই কাজের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ'। এদিকে মুনতাজারের ভাই দুরগাম আল-জাইদি অভিযোগ করেছেন, নিরাপত্তাকর্মীরা মুনতাজারকে বেদম মারধর করেছেন। মারধরের ফলে মুনতাজারের হাত ও বুকের খাঁচা ভেঙে গেছে, চোখ ও পা জখম হয়েছে। তাঁকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, জুতা ছুড়ে মারার পর পরই নিরাপত্তাকর্মীরা মুনতাজারকে ধরে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যান। এরপর অনেকক্ষণ ধরেই তাঁর চিৎকারের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ঘটনায় মুনতাজার আল-জাইদি খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। রোববারের ঘটনাটি ছিল তারই বহিঃপ্রকাশ। ইরাকি আইনে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে অপদস্থ করার দণ্ড হচ্ছে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড।

তবে মুনতাজারের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হবে, তা জানা যায়নি। গত জানুয়ারি মাসে মার্কিন সেনারা মুনতাজারকে ধরে নিয়ে যায় এবং এক দিন পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। গত বছরও মুনতাজারকে ইরাকি অস্ত্রধারীরা অপহরণ করে এবং তিন দিন পর মুক্তি দেয়। পরিবারের সদস্যরা জানায়, এই দুটি ঘটনার পর থেকেই মার্কিনিদের প্রতি মুনতাজারের ঘৃণা আরও বেড়ে যায়। বাগদাদে রোববারের ওই সংবাদ সম্মেলনে মুনতাজার "কুত্তা, এই নে তোর বিদায়ী চুম্বন" বলে বুশকে লক্ষ্য করে একটি জুতা ছুড়ে মারেন।

বুশ সরে গিয়ে আঘাত এড়াতেই উড়ে আসে মুনতাজারের আরেকটি জুতা। তবে এটিও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এ সময় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নূরি আল মালিকি বুশের পাশেই ছিলেন। সূত্রঃ এএফপি, এপি, রয়টার্স ও বিবিসি অনলাইন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.