আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রশিবিরের জাতীয় সিরাতুন্নবী (স.) পাঠ প্রতিযোগিতা: ছাত্রসমাজের চারিত্রিক বিকাশ সাধনে এক অনন্য কর্মসূচী

দেশকে ভালবাসা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একটি আদর্শবাদী ছাত্র ইসলামী আন্দোলন। এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (স) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পূণর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্র“য়ারী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি বাংলাদেশকে “সমৃদ্ধ বাংলাদেশ” হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে তরুণ ছাত্র সমাজকে সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের আলোকে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। যার ফলে সারা দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই লাখ লাখ ছাত্র ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নিজেদের জীবন গড়ার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐশী বিধানের আলোকে মানব চরিত্র গড়ে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টার পাশাপাশি তরুণ ছাত্র সমাজকে অনৈসলামিক ও অনৈতিকতার পথে টেনে নেয়ার প্রচেষ্টাও সমাজে রয়েছে।

যার ফলে এ দেশের ছাত্রদের অনেকেই ইদানিং পড়ালেখা কিংবা আগামীর দেশ পরিচালনার যোগ্য মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ইভটিজিং, মাদকাসক্তি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে এসব ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার পাশাপাশি সমাজ সচেতন মানুষেরা শংকিত আমাদের জাতি সত্ত্বার ভবিষ্যৎ নিয়েও। মহান আল্লাহ তায়ালা এই বিশ্বকে শুধুমাত্র সৃষ্টি করেই তাঁর দায়িত্ব শেষ করেননি। পাশাপাশি তাঁর পক্ষ থেকে গাইড লাইনসহ পৃথিবী পরিচালনার জন্য যে সব পথ প্রদর্শক বা নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন তাঁদের মাঝে হযরত মোহাম্মদ (স) হচ্ছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। আজ থেকে প্রায় ১৫শ বছর পূর্বে আরবের অবস্থা যখন ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় মূহুর্ত অতিক্রম করছিল, অজ্ঞতা-বর্বরতা ও স্বেচ্ছাচারিতার দাপটে মানবতা যখন ভুলুন্ঠিত ঠিক তখনই তাঁর আগমন।

তিনি এসেছিলেন ওহীর বার্তা এবং প্রেমের অথৈই সাগর বুকে ধারণ করে মানবতাবদী মানুষ হিসেবে। তাঁর আগমনে সৃষ্টির পরতে পরতে নেমে আসে প্রশান্তির ছোঁয়া। প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠে আশাহত শিশু-কিশোর, আলোয় বেরিয়ে আসে অন্ধকারে থাকা নারী সমাজ, বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দাস-দাসী এবং সমাজের অস্পৃশ্য মানব মন্ডলী। আইয়ামে জাহেলিয়াতের হাত থেকে তৎকালীন সমাজকে মুক্ত করে তিনি তাঁর কালের ও অনাগত ভবিষ্যতের মানবতার জন্য প্রতিষ্ঠা করে গেছেন পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু জীবন ব্যবস্থার। তিনি নিজের জীবনে দেশ-জাতি-সমাজ-ধর্ম-অর্থ সকল ক্ষেত্রে নীতির আদর্শ প্রয়োগ করে ছোট-বড়, ধনী-গরীব, উঁচু-নীচু, সাদা-কালো, নর-নারী সকলের জন্য রেখে গেছেন তাঁর অমোঘ শিক্ষা।

তাঁর অতুলনীয় চরিত্রে ঘটেছে যার সম্যক বিকাশ। তাঁর কাছেই আল্লাহ রাব্বুল-আলামীন প্রেরণ করেছিলেন পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আল কুরআন। তিনি তাঁর জীবনে আল কুরআনের প্রতিটি বাণী অনুসরণ করে মানব জীবনের প্রতিটি কাজ কিংবা প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রন ও আল্লাহর উপর আস্থা-বিশ্বাসের শিক্ষা দিয়ে গেছেন । তাই তাঁর জীবন-ই আমাদের জন্য আদর্শ হওয়া উচিৎ। কেননা তাঁর চরিত্রে রয়েছে সর্বগুণের অনুপম সমন্বয়।

এজন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ২১ নং আয়াতে বলেন- “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুল (স) এর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ”। রাসুল (স) এর জীবন সম্পর্কে ঐতিহাসিক লা মার্টিন বলেন- “দার্শনিক, বক্তা, ধর্ম প্রচারক, যোদ্ধা, আইন রচয়িতা, ভাবের বিজেতা, ধর্ম মতের ও প্রতিমা বিহীন ধর্ম পদ্ধতির প্রবর্তক, ২০ টি পার্থিব রাজ্যের এবং একটি ধর্ম রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সে মোহাম্মদের দিকে তাকাও মহত্বের যতগুলো মাপকাঠি আছে তা দিয়ে পরিমাপ করলে বিশ্বের কেউ কি তাঁর চেয়ে মহৎ হতে পারে?” আর জর্জ বার্নার্ড শ’ মোহাম্মদ (স) সম্পর্কে বলেন- “ওভ ধষষ ঃযব ড়িৎষফ ধিং ঁহরঃবফ ঁহফবৎ ড়হব ষবধফবৎ ঃযবহ গঁযধসসধফ ড়িঁষফ যধাব নববহ ঃযব নবংঃ ভরঃঃবফ সধহ ঃড় ষবধফ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ াধৎরড়ঁং পৎববফং, ফড়মসধং ধহফ রফবধং ঃড় ঢ়বধপব ধহফ যধঢ়ঢ়রহবংং”. অর্থ্যাৎ যদি গোটা বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম, সমপ্রদায়, আদর্শ ও মতবাদ সম্পন্ন মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে একজন একনায়কের শাসনাধীনে আনা হত, তবে মোহাম্মদ (স) সর্বাপেক্ষা যোগ্য নেতা রূপে তাদেরকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করতে পারতেন। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। কিন্তু নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য আর অপার সম্ভাবনার এই বাংলাদেশ চলছে ধুকে ধুকে। এখানে আজ নৈতিকতা ও মনুষত্বের চরম অভাব।

চারদিকে হক-বাতিল, ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব। মূল্যবোধের জন্য, মনুষত্বের জন্য সর্বত্র, সবার মধ্যে এক অসাধারণ আর্তি। ন্যায় বিচারের আশা, সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের কামনা আজ প্রতারণার শিকার। ব্যক্তি ও সমাজ জীবন হতাশায় জর্জরিত। মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ-দন্দ্ব, সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে অনুপ্রবেশ করে মানব জীবনকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

মানুষ শান্তির প্রত্যাশায় মানব রচিত নানাবিধ মতবাদ কিংবা ধর্মহীন বিভিন্ন মতবাদের দারস্থ হয়েও মুক্তির নিশ্চয়তা বিধান করতে পারছেনা। চীনের সমাজতান্ত্রিক আন্দেলনের নেতা মাও সে তুং এর ভাষ্য মতে- সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬৭ সালে চীন বিপ্লবে ২ কোটি ৭০ লাখ লোক প্রাণ হারায়। রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েম ও রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে প্রায় ৪ কোটিরও অধিক মানুষকে। আর হাজার হাজার মানুষের জীবনের বিনিময়ে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার স্লোগান বুকে ধারণ করে সংগঠিত ফরাসী বিপ্লবও মানবতার সত্যিকার মুক্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে আজ প্রায় ৪০ বছর।

কিন্তু সত্যিকার আদশর্ আর নৈতিকতার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব তৈরী করতে না পারায় এ দেশের ১৫ কোটি মানুষের কাছে আজও স্বাধীনতার সুফল পৌঁছানো যায়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে মহান ব্যক্তির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। কিন্তু তাঁদের জীবনী অধ্যয়ন করতে গেলে দেখা যাবে তাদের অবদান বিশেষ এক কিংবা দু’টি বিষয়ে সীমাবদ্ধ । এক জীবনে মানব জীবনের সকল বিষয়কে ঐক্যবদ্ধ করে সব সমস্যা সমাধানের পথ দেখাতে পেরেছে এমন মহামানব শুধুমাত্র একজনই আর তিনি হচ্ছেন মনুষ্যত্বের ধ্বংসস্তুপের উপর নতুন পতাকা হাতে মানবতার কান্ডারী হিসেবে প্রেরিত মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) । তাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী অধ্যয়ন ও তাঁর জীবন নিঃসৃত শিক্ষা-ই অশান্ত এই পৃথিবী কিংবা আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্যারান্টি।

তাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ২০১০ সাল থেকে তার নিয়মিত প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম এবং কুরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি আয়োজন করে আসছে ইতিহাসের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মোহাম্মদ (স) এর জীবনী অধ্যয়ন বিষয়ক প্রতিযোগিতা তথা সীরাত পাঠ প্রতিযোগীতার। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় সীরাত পাঠ প্রতিযোগীতা ২০১১ এর আয়োজন। আমরা এ অনন্য কর্মসূচীর সার্বিক সফলতা কামনা করছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.