আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনালী ঘাসফড়িং ও নীলপরীর ভালোবাসা

তেল চিটচিটে গায়ের কিশোর এই ছেলেটির নাম সকাল পর্যন্ত রাজনই ছিল। ওর মা নাম রেখেছিল রাজা। কি জন্য রাজা কিম্বা কার জন্য রাজা এসব কোন প্রশ্নই ঐ কিশোরের মনে জাগেনি। বাসায় অসুস্হ মা আর অভুক্ত দেহের তেল মবিলের মাখামাখি ওকে রাজা প্রজার বিভেদ শেখায়নি। সারাদিন সুবাট মিয়ার মোটর গ্যারেজে কাজ করে যে দু দশটাকা বকশিশ হিসাবে সাহেব মেমরা দ্যায় তাই দিয়ে ও মায়ের জন্য খাবার কেনে হেটে হেটেই বাসায় যায়।

বাসা বললে হয়ত বাবুদের অবমাননা করা হবে তাই ঘর বলাই ভাল। ফুটা টিনের চালার বাথরুমের বারান্দার ও জায়গাটা আসলে ঘরও নয় তবে ঘরের মত যা আগে সুবাট মিয়ার দুটো ভেড়ার বসবাস ছিল। এ বাথরুমটা আবার সাহেব বাবুদের বাথরুম নয় অন্যরকম বাথরুম। মিয়ার গ্যরেজ এবং অন্যান্য ফ্যক্টরীর কম বেতনের ছেলে ছোকড়াদের ফ্রী থাকার ঘরের ফ্রী বোনাস হাগুলাশয়। কখন যেন কোন এক দুস্টু চোকরা এটার নাম দিয়েছিল চন্দ্রমূখী।

কিজন্য তা কেউ জানে না তবে রাজনকে জিজ্গেস করলে উত্তর দেয় ও কখনও ঔ বাথরুমের ছাদ কিম্বা লাইট দেখেনি, চাদের আলোতে সব কিছু সারতে হয় তো তাই চন্দ্রমুখী। পাঠকের রাগ না বাড়িয়ে আসল কথায় যাই গেরেজ বালকের নাম পরিবর্তের ইতিহাসে। মেম সাহেবের গাড়ীর নিচে কোমর পর্যন্ত মাথা ঢুকিয়ে রাজন দেখছিল কোথা থেকে জি করোল্লার মবিল লিক হচ্ছে। ও আগেই দেখেছে গাড়িতে ওন্য কেউ নেই , ছোট স্কাট , লাল হিলের জুতো আর গরিবের ছেড়া গেন্জীর মত জামা পরা মেম একাই ড্রাইভিং সিট থেকে নেমেছিল। পুরোনা প্রবাদ কিন্তু সত্যিতো -ঔপর থেকে সাজানো দেখা যায় আর নিচ থেকে দেখে আসলটা চিনে নেওয়া যায়।

রাজন কিন্তু আসলে ওভাবে বোঝেনি ইন্জিনের নিচে থেকে মাথা একটু বার করে মেমকে বলছিল হট ডিভাইডার পাইপ ফেটে মবিল বেরুচ্ছে। গাড়ীর পাশ ঘেসে দাড়ানো মেম ভেবেছে ছোকরা তাকে টিজিং করছে আর তাই হেসে দিয়ে বললো নটি বয় । হোয়াট ইজ ইওর নেম ? রাজন প্রথমটা কিছুই বুঝল না কিন্ত শেযটা নেম বলাতে বুঝল নাম জানতে চাইছে। বলল- রাজন - হোয়াট রাজনো। নো নো ইওর নেম রাজ হো।

এগেইন টেল ইওর নেম রাজ্য - ইয়েস স্টেট। রিপিট উইথ মি রাজ্য। রাইট। টেল হোয়াট ইজ দা প্রবলেম ? রাজ্য হোয়াট মোয়াট বুঝল না কিন্ত প্রবলেম বলাতে বুজল আর ওর মত করে বলল- আনডার ডিভাইডার হট, নো কভার , অটার মবিল লিকিং - ও নটি বয় , এগেইন ইউ টেলিং মাই এপার্ট। টেল মি প্লিজ মাই কার ইন্জিন প্রবলেম।

রাজ্য চেস্টা করল হাত দিয়ে আকার ইংগিতে কিছু বুঝানোর কিন্তু মেম সাহেব কিছু না বুঝে রেগে মেগে গাড়িতে গিয়ে বসল। রাজ্য কিছু না বলে আবার গাড়ীর নীচে গেল এবং চেস্টা করতে লাগল পাইপটা রিপিয়ার করার। কথায় বলে না ইয়ং লেডী, শিশুর মন আর বউয়ের রাগ বোঝা মুস্কিল। এরা কখন যে লেবারাল আর কখন যে ফেরোসাস নিজেরাই জানে না। সাকসেসের জন্য প্রথমটায় রিক্স নিতে হয়, দ্বিতীয়টায় সরল হতে হয় আর তৃতীয়টায় কোন চেস্টাই কাজে লাগে না।

নতুন করে ইনস্টল করতে হয়, আপলোড এবং রি স্টাট দিতে হয়। ভাগ্য সুপ্রশন্ন হলে প্রথম চেস্টায়ই ফল হাতে ভবিয্যতের বীজ বপন নথুবা বুকিং ক্যানসেল অনিদ্রায় রাত্রি যাপন। এবং বোনাস হিসাবে ডিসটিলড ওয়াটার ক'ফোটা চোখের জল ডাক্টারি ভাযায় ডাস্ট ক্লিয়েরেন্স ফোরোম আইস। এখানে অবশ্য এর কোনটাই কোন পর্যায়ে পড়ে না। ধুসর কিশোর মবিল বালকের ইগনোরেন্স আর পরভাযী ইয়ং লেডীর অভিমান।

কে কার মুল্য বোঝে কিন্ত অনিশ্চয়তার পৃথিবীতে সব কিছুই কাউনটেবল বিশ্বাসিরা ভাল করেই জানে। কথপথনের এই পর্যায়ে তুরুন অটোমোবাইল ইন্জিনিয়ারের দৃস্টিগোচর হোল এবং তিনি এগিয়ে এলেন গাড়িটির দিকে। মেম সাহেবও কি মনে করে গাড়ী থেকে নামতে গেলেন কিন্ত যেটা করলেন তার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। ভুল করে গাড়ীর স্টার্ট দিয়ে ফেললেন আর প্রায়শ্চিত্তের অবশিস্টাংশ রাজ্যের ঘাড়ে। খোলা পাইপে মবিল পড়ে পাপী কিশোরের পূণ্যস্নান মুখ চোখ একাকার।

মেম তার ইগনোরেস্স বুঝতে পেরে দ্রুত স্টার্ট বন্ধ করে নেমে এলেন গাড়ী থেকে এবং অপরাধীর মত বললেন- -সরি রাজ্য , আ্যাম ইক্সট্রেমলি সরি। ফরগিভ মি প্লিজ বয়। আই হ্যাভ ডান ইট এ্যজ রাবিস। বলতে বলতে সে নিজেই রাজ্যকে টেনে বের করে আনলেন গাড়ীর নিচ থেকে। দেখলেন পুরো মুখে মবিল মাখা , চোখ দুটোয় ও তাকিয়ে দেখতে পারছে না।

কিন্ত অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটল এখানেই। মেমের হাতের স্পর্স আর কাছাকাছি অবস্হান থাকায় রাজ্য হেসে দিয়ে বলল - কিছু হয়নি মেম, আমি ভাল আছি। অবিশস্য অনিশ্চয়তার অসম্পূর্ন অভিলাস সৃস্টির রহস্য লীলার অপরিসীম বদান্যতায় আগ্নেয়গিরির লাভাও যেমন হীম শীতল বরফে ঢেকে যায় তেমনি মবিল বালকের সরলতার কাছে বিদেশী মেম অকস্যাৎ খেই হারিয়ে ফেলল। নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন, দুফোটা জল বেরিয়ে পড়ল মনের গহীন বন থেকে। নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে অকস্মাৎ বুকে জড়িয়ে ধরল মবিল বালককে।

নিজের গায়ের জামা খুলে ওর মুখ চোখ মুছে দিতে দিতে বলল - - আই আ্যাম সরি বয়। আই লাভ ইউ ঠু মাস। আই লাভ ইউ ঠু মাস। নিজের পারস থেকে একটা পাশ শ ডলারের নোট রাজ্যের হাতে দিতে গিয়ে বলল- আই হ্যাড এ লিটিল ব্রাদার লাইক ইউ হূ লাভড মি ভেরী মাস বাট লস্ট হিম এ্যান একসিডান্ট। রাজ্য ইংরেজীর কম অংশটা কমই বুঝল আর বেশী অংশটার পুরোটুকুই মেমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল- মেম আমার মা অসুস্হ , বিছানায় শুয়ে আছে।

আমি যাব তবেই খাবে। তোমার কাছে যদি দশ টাকা থাকে তাই দাও । দশ টাকার বেশী দিয়ে আমি পারুটি কিনি না আর অর্ধেকটা আমার মা খায় আর অর্ধেকটা আমি। অত টাকা আমি নেবো না। আমার মা বলেছে দু:খ বেশিদিন থাকে না আর সুখও না।

এটা তোমার কাছেই রেখে দাও , আমার চেয়ে দুখী কাউকে খুজে পেলে তাকে দিও। জান মেম আজকে আমার মায়ের বকা খেতে হবে। মেম এই কথার কোন মানে না বুঝেই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকাতে বলল- আমার জন্য তুমি যে তোমার শার্ট টা নস্ট করলে এর দাম আমি কি দিয়ে দেবো। মা শুনলে আমাকে আস্ত রাখবে ভেবেছো। মেম ঠিক সঠিক বুঝলনা ওর ভাযা তবে অনুভূতির অবিধানে বুঝে নিল এ মবিল বালক অন্যদের মত নয়, খাটি সোনা।

এক টানে ও গাড়ীর আড়ালে নিয়ে ওকে বলল- আম নট এ লেডী। আ্যাম নোরা , কাম ফোরোম এলিয়েন ফোর্স। সামান্থা গিভ ইউ এ গ্রাস হোপার। বলেই ও গাড়ীর দরজা খুলে ট্রান্সপারান্ট একটা ছোট কৌটায় রাখা ধুসর ঘাস ফড়িংটা ওর হাতে দিয়ে মুহুর্তেই গাড়ী সহ বিলীন হয়ে গেল। ........চলবে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।