আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উল্কিতে হেপাটাইটিস,এইডসের ঝুঁকি

উল্কি তরুণদের ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। হলিউড, বলিউড, খেলোয়ারদের শরীরে নতুন নতুন উল্কি দেখে অনেকেই উল্কি আঁকায় উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন। এর কারণে হতে পারে হেপাটাইটিস, এইডস, ত্বকে ইনফেকশন, অ্যালার্জি, এমনকি ক্যান্সার। উল্কি আঁকায় সচেতনতার বিকল্প নেই। প্রাচীনকাল থেকেই উল্কির ব্যবহার জানা যায়।

মিশরের মমি-র শরীরে উল্কি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২ হাজার অব্দে উল্কি আঁকা হয়েছিল। ১৭৬৯ সালে জেমস কুক দক্ষিণ প্যাসিফিক অঞ্চলে উল্কি-র ব্যবহার লক্ষ করেন। আধুনিকযুগে এটি ১৯৯০ সালের আগেও কিন্তু হাল সময়ের মত এত জনপ্রিয় ছিল না। বর্তমানে আমেরিকার ২৫-২৯ বছর বয়সীদের প্রায় ৩৬ ভাগের শরীরেই উল্কি আছে।

এর ঢেউ এসে লেগেছে আমাদের যুব সমাজেও। শরীরে উল্কি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। চাহিদার কথা মাথায় রেখে বাড়ছে উল্কি দোকান। বসুন্ধরা মার্কেটের নিচতলায় বারান্দায় চেয়ার-টেবিল পেতে উল্কি আঁকাতে দেখা যায়। ভীড় সবসময় থাকে সেখানে।

একজনের আঁকা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওই যন্ত্র দিয়েই আরেকজনের শরীরে উল্কি আঁকা হয়। রাজধানীর আরো অনেক জায়গায় উল্কির দোকান আছে। তবে সংখ্যায় কত তার হিসাব নেই। এমনকি ফেসবুকেও আছে উল্কি আঁকার গোটা কয়েক অ্যাকাউন্ট আছে। উল্কি করা হয় ছোট একটি সূঁচযুক্ত মেশিন দিয়ে।

সুঁচ দিয়ে ত্বকে ফুটা করে রং লাগিয়ে দেয়া হয়। ৭-১০ দিন পর ফুটা করা ত্বক মরে গেলে রং ভেসে ওঠে যে উল্কি আঁকা হয়েছে তা শরীরে দেখা দেয়। এ প্রক্রিয়ার সময় হাল্কা রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। এটিই মারাত্মক। যেহেতু একই সূঁচ বারবার ব্যবহার করা হয়।

অটোক্লেভ করে জীবানুমুক্ত করা হয় না। তাই খুব সহজেই একজনের শরীর থেকে রক্তবাহিত জীবাণু অন্যের শরীরে ঢুকে যেতে পারে। হতে পারে হেপাটাইটিস, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, টিটেনাস ও জীবনহারী এইডস। আমেরিকায় অঙ্গরাজ্যে উল্কি আঁকার দোকানগুলোকে অনুমোদন নিতে হয় ওই অঙ্গরাজ্য থেকে। ওই অঙ্গরাজ্যের সরকার এদের নিয়ন্ত্রণ করে।

ঠিকমত পরিচ্ছন্নতা, যন্ত্রপাতি অটোক্লেভের মাধ্যমে পরিশোধন করা হচ্ছে কি না তা নিয়মিত দেখাশুনা করে। তারপরও সেখানে মোট হেপাটাইটিস-বি, সি আক্রান্তের শতকরা ৮ ভাগ আক্রান্ত হয় শুধুমাত্র উল্কি আঁকার কারণে। এ পরিসংখ্যান ১৯৯৬ সালের। এখন উল্কি ব্যবহারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উল্কির কারণে হেপাটাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে নিশ্চয়। আমাদের দেশে যেখানে পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই সেখানে অটোক্লেভ মেশিনে জীবাণুমুক্ত করার কথা চিন্তাই করা যায় না।

উল্কি আঁকার মাধ্যমে হেপাটাইটিসে কত জন আক্রান্ত হচ্ছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও আমেরিকার কথা বিবেচনা করলে তা হবে ভয়াবহ। আমেরিকায় উল্কির মাধ্যমে এইডসে আক্রান্তের কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। এইডস ছড়িয়ে পড়ার একটি কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহার করা। আমাদের দেশে মোট এইডস আক্রান্তের বেশিরভাগই কিন্তু মাদকসেবী। যারা অন্যের ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহার করে।

সে হিসেবে উল্কি আঁকার মাধ্যমে দেশে যে এইডস ছড়াচ্ছে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এছাড়াও উল্কি আঁকায় বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অ্যালার্জি। সাধারণত লাল ও হলুদ রঙের প্রতি অ্যালার্জি বেশি দেখা যায়। অ্যালার্জির কারণে উল্কি আঁকা অংশে চুলকায়, লাল হয়ে যায়।

এটি যে সাথে সাথে হবে এমন কথা নেই। এমনকি কয়েকবছর পরেও হতে পারে। ত্বকে ইনফেকশন খুব বেশি দেখা যায়। খোদ আমেরিকায় প্রথমদিকে ত্বকে ইনফেকশনের কারণে উল্কি আঁকা নিষিদ্ধ করে। সেখানে উল্কি আঁকার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।

তারপরও এত ইনফেকশন। আর আমাদের দেশে পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। যেখানে বারান্দায় বসে, শত শত লোকের সামনে নোংরা পরিবেশে উল্কি আঁকা হয় সেখানে ইনফেকশনের হার তো বেশি হবেই। অনেকসময় উল্কি আঁকা স্থান ফুলে টিউমারের মত আকার ধারণ করতে পারে। কালো হয়ে ফুলে যেতে পারে।

যেটাকে কিলয়েড বলা হয়। উল্কির ভয়াবহ দিক হচ্ছে এটি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। উল্কি আঁকায় যে রঙ বা ডাই ব্যবহার করা হয় তাতে ভারী মেটাল ও রঞ্জক থাকে। এগুলো ক্যান্সারের জন্য দায়ী। ইউরোপীয় কমিশনের গবেষণায় জানা গেছে উল্কি আঁকায় যে ডাই ব্যবহার করা হয় তাতে ৪০ ভাগের বেশি রঞ্জক থাকে।

এ রঞ্জকের পরিমান ২০ ভাগের কম হলেই তা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। যে রঞ্জক ব্যবহার করা হয় সেগুলো সাধারনত লেখা, ছাপার কালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডাই-এ ব্যবহৃত লেড বা সীসা গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত স্বাস্থ্য সমস্যা, ক্যান্সার ও প্রজনন আক্ষমতার জন্য দায়ী। আমেরিকান ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ( এফডিএ) স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি মনে করে শরীরে ডাই বা রঙ ব্যবহারের অনুমতি দেয় নি। এ নিয়ে দেহঘড়িকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের যৌন ও চর্মরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদ মো. খান বলেন, একই সূঁচ বারবার ব্যবহারের ফলে হেপাটাইটিস, এইডসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তবে দেশে এ নিয়ে কোন গবেষণা হয় নি বলে সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় নি। এছাড়া ত্বকে ইনফেকশন, কিলয়েড, ক্যান্সার তো হতেই পারে। ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।