আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাশরুম হতে পারে বিকল্প অর্থকরী ফসল

আমি একজন সাধারন মানুষ। মাশরুম হতে পারে বিকল্প অর্থকরী ফসল উন্নত বিশ্বে মাশরুম একটি পুষ্টিকর ও উপাদেয় খাবার হিসেবে প্রচলিত। বাংলাদেশে এটি নতুন হলেও সাধারণ মানুষের কাছে মাশরুমের নাম ‘ব্যাঙের ছাতা’ হিসেবে পরিচিত। এটি এমন একটি ছত্রাক জাতীয় সবজি যা বাড়ির ছাদে, টবে, ছায়াযুক্ত স্থানে এমনকি খুব অল্প জায়গাতেও চাষ করা যায়। এক শ্রেণীর নিম মোল্লা প্রথমে ফতওয়া দিয়েছিল যে, মাশরুম হলো ব্যাঙের ছাতা।

আর ব্যাঙের ছাতা খাওয়া জায়িয নেই। অথচ নিম মোল্লা বা অজ্ঞ উলামায়ে ‘ছূ’দের সে ফতওয়া ছিল সম্পূর্ণ ভুল। মাশরুম সম্পর্কে সে ভুল ফতওয়ার অপনোদন হয়েছে বেশ আগেই। আর আত্মকর্মসংস্থানের অন্যতম একটি ক্ষেত্র হওয়ার উপযুক্ত এটি। যদিও আমাদের দেশে এখনো মাাশরুমের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেক কম।

সাধারণত নগরীর অভিজাত চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও আধুনিক রেস্টুরেন্টগুলোতে মাশরুম অত্যন্ত অপরিহার্য আইটেম হিসেবে পরিবেশন করা হয়। ঢাকার বনানী ও গুলশানের কাঁচা বাজারগুলোতে এটি অত্যন্ত উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া মাশরুমের চাষ প্রক্রিয়াও অত্যন্ত সহজ। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে খাদ্যোপযোগী মাশরুমের খাদ্যাভাস চলছে সুপ্রাচীনকাল থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ বছরেরও অধিককাল আগে থেকে মাশরুম বহু দেশেই আদরনীয় খাদ্য হিসেবে চলছিল।

মাশরুমের প্রোটিন অত্যন্ত মানসম্মত এবং নির্দোষ। একটি ভালো প্রোটিনের পূর্বশত হলো অত্যাবশ্যকীয় ৯টি এমাইনো এসিড। মাশরুমে প্রয়োজনীয় ৯টি এমাইনো এসিডই প্রশংসনীয় মাত্রায় বিদ্যমান। মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও মিনারেলের এমন সমন্বয় রয়েছে, যা শরীরে ‘ইমনু সিস্টেম’কে উন্নত করে। ফলে সন্তান-সম্ভবা মা ও শিশুরা নিয়মিত মাশরুম খেলে দেহে রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং আঁশ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি আদর্শ খাবার।

মাশরুমে আছে শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাভেনিন, লোভাইটিন এবং এনটাভেনিন। নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় হয়। গরুর গোশ্তের সঙ্গে মাশরুম সবজি হিসেবে ব্যবহার করলে কোলেস্টেরেল ঝুঁকি থাকে না। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি থাকায় শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে উত্তম ভূমিকা রাখে। মাশরুমে ফলিক এসিড ও লৌহের উপসি'তি থাকা রক্তশূন্যতা দূর করতে এটি খুবই কার্যকর।

লিঙ্কজাই নামক পদার্থ থাকায় জন্ডিস প্রতিরোধেও মাশরুম উপকারী। ক্যান্সার প্রতিষেধক হিসেবেও মাশরুম কার্যকর। আমাশয়ের উপশম, ক্ষমতা বৃদ্ধি, ডেঙ্গু নিরাময়, রুচিবর্ধক, পেটের পীড়া নিরাময়সহ চুলপড়া ও চুলের অকালপক্কতা রোধে মাশরুম খুবই কার্যকর। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ এবং হজমে সাহায্যকারী এনজাইম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে থাকে ৩.১ গ্রাম আমিষ, ০.৮ গ্রাম স্নেহ, ১.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ০.৪ গ্রাম আঁশ, ৪.৩ গ্রাম শর্করা, ৬ মি. গ্রাম কেলসিয়াম, ১১০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ১.৫ মি. গ্রাম লৌহ, ০.১৪ মি. গ্রাম ভিটামিন বি১, ০.১৬ মি. গ্রাম বি২, ২.৪ মি. গ্রাম নায়াসিন, ১২ মি. গ্রাম ভিটামিন সি।

এছাড়া খাদ্যশক্তি থাকে ৪৩ কেলোরি। সাধারণত মাশরুমে মাছ-মাংসের চেয়ে কিছু বেশি এবং প্রচলিত শাক-সবজির চেয়ে দ্বিগুণ খনিজ পদার্থ থাকে। আমিষের পরিমাণ থাকে বাঁধাকপি ও অন্যান্য শাক-সবজির চেয়ে চারগুণ। এছাড়াও এতে যে ফলিক এসিড থাকে তা অ্যামিনিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। বহুমুত্র রোগী এবং যারা মোটা তাদের জন্য মাশরুম একটি উত্তম খাবার।

এটা খেতে বেশ সুস্বাদু এবং সহজেই হজম হয়। মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাত্র ১০-১৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়। এটা চাষের জন্য আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজলভ্য।

বেকার যুবক-যুবতী এবং মহিলারা ঘরে বসেই এর চাষ করতে পারেন। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশি, এজন্য এটা চাষ করা অত্যন্ত লাভজনক। অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বিদেশে রফতানির সুযোগ বিদ্যমান। গ্রীষ্মকালে যে কোনো চালা ঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে এমন ঘরে এর চাষ করতে হয়।

শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে এর চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে ‘স্ট্র মাশরুম’ এবং শীতকালে ‘ওয়েস্টার’ জাতের মাশরুম চাষ উপযোগী। মাশরুম পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণসম্পন্ন একটি উৎকৃষ্ট সবজি। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। মাশরুম চাষের উপকরণ খড়, কাঠের গুঁড়া, আখের ছোবড়া অত্যন্ত- সস্তা ও সহজে পাওয়া যায়।

এ সবজিটি ঘরের মধ্যে চাষ করা যায় এবং মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যেই মাশরুম পাওয়া যায় যা অন্য ফসলে পাওয়া যায় না। চাষাবাদে কোন খরচ নেই বললেই হয়। জমির প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশে চাষকৃত মাশরুম হচ্ছে কিং ওয়েস্টার, বাটন, শিতাকে, ইনোকি, মিল্কী হোয়াইট, বীচ, স্যাগী, নামেকো, পপলার ও স্ট্র । গ্রীষ্মকালে স্ট্র, মিল্কী, শীতকালে বাটন এবং সারাবছর চাষ হয় ওয়েস্টার নামের মাশরুম।

মানুষের খাওয়ার উপযোগী মাশরুম ব্যাঙের ছাতার মতো বিষাক্ত নয়। মাশরুমের চাষ প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য সাভার ছাড়াও চন্দনপুরায় বিজ্ঞান চেতনা সমিতিতে যোগাযোগ করা যেতে পারে। সরকারের কৃষি বিভাগও দেশব্যাপী মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দানের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। মাশরুম চাষের জন্য আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রয়োজন সামান্য পুঁজি। সাভারের মাশরুম চাষ কেন্দ্র সরকারি ভর্তুকিতে প্রতি আধা কেজির রেডি প্যাক মাত্র ৩ টাকা এবং এক কেজির রেডি প্যাক মাত্র ৫ টাকায় বিক্রি করে।

প্যাকেট পিছু সাধারণত ২০০ গ্রাম মাশরুম উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বাজেট নিয়ে মাশরুম উপাদন শুরু করলে মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। মূলত মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও সামান্য পুঁজি। এই মাশরুমের মাধ্যমেই বাংলাদেশের বিকল্প অর্থকরী ফসলরূপে দেশে-বিদেশে এর বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব। এর ব্যাপক বাজার তৈরি হলে দেশে কর্মসংস্থানের অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করা সম্ভব হবে।

মাশরুম চাষ ও প্রশিক্ষণের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সাভারে কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর 'মাশরুম চাষ সেন্টার' নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। এখানে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণার্থীকে আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এই প্রশিক্ষণ প্রকল্পের মেয়াদ তিন দিন পর্যন্ত। এখানে প্রশিক্ষণার্থীদের সরকারিভাবে সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে কিভাবে মাশরুম চাষ করা যায়, কিভাবে বিপণন করা যায়, মাশরুম চাষের সমস্যা সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদান করে থাকে।

মাশরুম চাষ প্রশিক্ষন, বীজ ও লোনসহ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য গ্রীন বাংলা মাশরুম কর্নার মাশরুম লাভলু বি-১৯, বিটিআরসি মার্কেট, বগুড়া মোবাইল: ০১৭১৬-৮৮৪৩৬৮ বীজ, তাজা, শুকনা ও পাউডার মাশরুম পাইকারী ক্রয়-বিক্রয় এবং প্রশিক্ষন খাদেম মাশরুম সেন্টার শফিউল আজম খান মোবাইল: ০১৯১৬-৮২০৪৫৮, ০১৭১৫-৪৭৫০১২ ৫৮১/সি, খিলগাঁও, ঢাকা-১২২৯ মাশরুম উৎপাদন এবং ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র সৈকত মাশরুম প্রকল্প মো: সোহরাব আলী মোবাইল: ০১৭১৬-৪০৮৮৮০ ১০৪/১ কাতলাপুর, সাভার, ঢাকা মাশরুম স্পন ও পাইকারী ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র এম. আর. টি মাশরুম প্রজেক্ট রতন ইসলাম মোবাইল: ০১৭১৫-৮৭৩৭৮০ মডেল কলেজ রোড, ডগড়মোড়া, সাভার, ঢাকা তাজা, শুকনা এবং মাশরুম স্পন (বীজ) বিক্রয় কেন্দ্র সুখী মাশরুম আবদুল হালিম মোবাইল: ০১৯১২-৪১১৭৫৫ ১৯/৯, আই ব্লক, ব্যাংক কলোনী, সাভার, ঢাকা মাশরুম বীজ, মাশরুমের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (অটোক্লেভ মেশিন, পিপি, নেক, তুলা, রাবার) বিক্রয় কেন্দ্র উদ্যম মাশরুম কর্নার মো: সাইফুল ইসলাম (জামান) মোবাইল: ০১৮১৬-৪৩০২৬৬, ০১৭১৬-৫০৩৮৩০, ০১১৯৯-১৬১২৯১ বি-১১১, সোবাহানবাগ, সাভার, ঢাকা এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে হলে ফোন করা যেতে পারে। মোবাইল নং-০১৭১০৪০৭০৭৪, ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৯১১৪০৫৩৬৬ -----তাহাসিন আহমেদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।