আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিই সবচে বড় দেশ প্রেমিক!

হাই! সাধারণ দেশ প্রেমিক প্রিয় জনগণ। আমি ব্লগে না লিখলেও এবার আর না লিখে থাকতে পারলাম না। কারণ আমি দেশে সবচেয়ে বড় দেশ প্রেমিক হওয়ার পরও এই নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যার কারণে আমি যে দেশের সবচে বড় প্রেমিক তার প্রমাণ দেয়ার জন্যই এ লেখা দিতে হল। যদিও পৃথিবীতে মানুষ সঙ্গবদ্ধভাবে বসবাসের শুরু থেকেই দেশ প্রেম নিয়ে কথা উঠেছে বার বার।

দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্রাট , রাজাদের স্বার্থে বিনা বাক্যে মুর্হুতে প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার যুবক। হেলেন কে নিয়ে দুই দেশের সম্মানের কথা বলে গ্রিক এবং ট্রয় সম্রাটেরা নিরহ নাগরিকদের ঠেলে দেয় এক ধ্বংশযজ্ঞে । যার ফলে ধ্বংশ হয়ে যায় ট্রয় আর দেশপ্রেমের নামে হাজার হাজার যুবক প্রাণ দেয় সম্রাটদের আত্ম -সম্মান রক্ষায়। এই আধুনিকও যুগে দেশপ্রেমের নামে আমেরিকা তাদের যুবকদেরকে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ায় ভয়ংকর যুদ্ধে ঠেলে দিয়েছে। যদিও এসব যুবকেরা দেশপ্রেম না টাকা, কোন কারণে যুদ্ধ করছে তানিয়ে সন্দেহ আছে।

বাদদেন তাদের দেশ প্রেমের সন্দেহের কথা । এবার আসি আমার কথায় । আমার দেশ প্রেম নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলে। আমি মনে করি আমার দেশ প্রেম নিয়ে সন্দেহ করা গেলেও এই নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন রকম সুযোগ নেই। কারণ আমার চেয়ে বড় দেশ প্রেমিক বাংলাদেশতো নেই, এমনকি পৃথিবীতেও আছে কিনা সন্দেহ।

কখনো ছিল বলে মনে হয় না (তবে আমার বাবার কথা আলাদা )। আর ভবিষ্যতে কারো আসার কোন সম্ভাবনায়ই নাই। যাক এসব কথা এবার আসি আমার দেশ প্রেমের প্রমাণ নিয়ে। আমার জন্মটা আসলে দেশ প্রেমের প্রমাণ দিয়ে। জন্ম ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পর ।

ভারত ভাগ হওয়ার পর আমি জন্ম গ্রহণ করায় আমার মাঝে হিন্দুস্থানি কোন ছোঁয়া নাই। তার পরও আমাকে নিন্দুকেরা ! ভারতের কিছু একাটা প্রমাণ করতে চায় । আমার দেশ প্রেমের প্রতি ইর্ষান্বিত হয়ে কিছু লোক এসব উল্টা কথা বলে। যেহেতু পূর্ব-পাকিস্তানে জন্মেছি সেহেতু আমাকে পাকিস্তানের কিছু একটা বললে হত। কিন্তু তাদের সে সুযোগ নেই ।

কেননা আমি যে পরিবারে জন্মেছি সেই পরিবার পাকিস্তানিদের এ দেশ থেকে বিদায় করতে সবার সামনে আবস্থান করছে । সুতারং উত্তরাধিকার সুত্রে আমার ভাই-বোন, পিতা-মাতা সহ সবাই মুক্তিযোদ্ধা। যদিও আমার পরিবারের কেউ সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে নাই। তাতে কি? আমাদের পরিবারের একজনইতো মুক্তিযুদ্ধের নেতা। এ ক্ষেত্রে পারিবারিকভাবে আমার চেয়ে আর কেউ বড় দেশ প্রেমিক নাই।

১৯৭৫ সালের পর আমি আর দেশে আসি নাই ,তা কেবল দেশের প্রতি বিশেষ ভালবাসা থাকায়। আমি যখন বিদেশে অবস্থান করি তখন দেশের প্রতি টান আরও বাড়ে। যেহেতু বিদেশে থাকলে দেশের প্রতি টান বাড়ে সে জন্য আমি সুযোগ পেলেই বিদেশে চলে যাই। এটি আমার দেশ প্রেমের আরেকটি প্রমাণ। এর পর আমার ছেলেকে দেশে না পড়িয়ে বিদেশে পড়িয়েছি।

কারণ এত জনসংখ্যার দেশে আমার ছেলে বাংলাদেশে কোন স্কুলে, কলেজে পড়া-লেখা করলে ওর কারণে স্কুল, কলেজের একটি সিট দখল হয়ে যেত। সে না পড়ায় আরেকটি ছেলে ভর্তি সেই সিটে হতে পেরেছে। ফলে বাংলাদেশের একটি ছেলে বেশি শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পেল। আমি বিদেশে দীর্ঘ দিন থাকার পর দেশের টানে ৮১ তে ফিরে আসি । এর পর দেশকে সৈরশাসকের হাত থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন করি।

কিন্তু জনগণকে আন্দোলনে নামিয়ে বার বার পিছু হটি শুধু দেশকে স্থিতিশীল রাখার জন্য। সৈরশসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই যে এই সেনা শাসকের অধীনে আমরা কেউ নির্বাচনে যাবনা। এবং আমি বিভিন্ন সমাবেশে ঘোষণা দেই , যে দল এই সেনা শাসকের অধীনে নির্বাচনে যাবে সে জাতীয় বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। এসব ঘোষণার পরও আমি ঐ সেনা শাসকের অধীনে নির্বাচনে যাই। তা শুধু আমার দেশ প্রেমের কারণেই।

এর পর গনতান্ত্রিক সরকার আসার পর তাকে ক্ষমতা হতে নামনোর জন্য বহুদিন হরতাল দিয়েছি। যাতে ঐ দেশ প্রেমহীন সরকারকে হটিয়ে আমি ক্ষমতায় যেয়ে দেশকে উন্নায়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে পারি। এর পর ক্ষমতায় গিয়ে আমি দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শামীম ওসমান, হাজারী দেরকে লালন-পালন করেছি শুধু দেশ প্রেম থেকে। ধর্ষনে সেঞ্চুুরিকারী জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানিক এবং বাধনের ইজ্জত হরনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে যাতে সোনার ছেলেরা আরও সাহসিক কাজ করতে পারে ও দেশকে এগিয়ে নিতে পারে । এ কাজ শুধু আমার দেশ প্রেমের প্রমাণ দিতেই করেছি।

এছাড়া আমি আমার মেয়েকে রাজাকারের নাতির সাথে বিয়ে দিয়েছি। যিনি আসলে প্রকৃতি রাজাকার নয়। বরং পাকিস্তানিদের সাহয্যে করে বাংলাদেশেই উপকার করেন। তবে নিন্দুকেরাতো কতকিই বলে। বিয়ের পর মেয়েটা আমার বিদেশেই রেখে দিয়েছি।

বাংলাদেশে এমনিতে জনসংখ্যা বেশি। তার পর আমার মেয়েটা আসলে জনসংখ্যা আরও বাড়বে। যা আমার এই ছোট দেশের অর্থনীতির উপর চাপ বাড়াবে। আমি দেশ প্রেমিক হিসেবে তা করতে পারিনা। আমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠায় আমার ছেলের বিয়ে নিয়ে যাতে কোন ধারণের প্রশ্ন না উঠতে পারে অর্থাৎ ভুলেও যাতে আমার ছেলের শশুর অথবা দাদা শশুর রাজাকার না হয় সে জন্য আমার ছেলেকে আমি বিদেশি খৃস্টান মেয়ে বিয়ে করিয়েছি।

এ ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে দেশের স্বার্থে পাশের দেশকে সুযোগ দিয়েছে বিনা প্রশ্নে। আমি যেহেতু দেশে সবচে বড় দেশ প্রেমিক তাই আমারই ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন । এ কারণে ক্ষমতায় আসার জন্য অবৈধ সেনা সর্মথিত সরকারের কাজকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছি। ক্ষমতায় এসে পাশের দেশকে আমাদের দেশের স্বার্থে বিনা শর্তে আমাদের ভুখন্ড ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছি। এসবই আমার দেশ প্রেমের কারণে করেছি।

আমি যে সবচে বড় দেশ প্রেমিক তার আরও বহু এবং বড় বড় প্রমাণ আছে। কিন্তু আমার দেশ প্রেমের বর্ণনা আসলে বলে শেষ করার নয় । আশা করি উপরে আমার দেশ প্রেমের যে অল্প কয়েকটি কাজের বর্ণনা দিলাম এতে বুঝতে পারছেন যে, আমারচেয়ে বড় দেশ প্রেমিক সারাজাঁহানে বড়ই দুষকর। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।