আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বল্প পুঁজি নিয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন ঃ এমএলএম ব্যবসার ফাঁদে শিার্থীরা

আমাদের বশুবাড়ীর ঘাটের ঐতিয্য আর রক্ষাকরা গেলনা সেখানে াখেন এখন বাজে লোকেরা আড্ডা মারে। চাকরি করে হবে, আপনি মাসে কত টাকা আয় করেন, আমার সাথে ব্যবসা করেন অল্প দিনেই কোটিপতি হয়ে যাবেন। রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে এমএলএম কোম্পানী। তদের ফাঁদে পড়ে অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দেশের কোমলমতি শিার্থীরা। রাজধানীসহ দেশজুড়ে প্রায় ২৭টি এমএলএম কোম্পানী ব্যবসা করছে।

এদের প্রতারণা বুঝতে না এ ব্যবসা করতে এসে সফল হতে না পেরে অনেকেরই নৈতিক অবয় ঘটছে। শিাথীরা মনে করছে, টাকা তাদের কাছে পড়াশুনার চেয়ে দামি। এমনই একজন ভুক্তভোগী স্কুলছাত্র আতাউর রহমান (১২)। সে পূর্বে পড়াশুনায় অত্যন্ত মনযোগী ছিল। কিন্তু এমএলএম ব্যবসা করতে এসে সে পড়াশুনার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পরে।

এখন সে নানা ধরণের অনৈতিক কাজ করতে পিছপা হয় না। আতাউর জানায়, সে সম্প্রতি কম্পিউটার প্রশিনের জন্য মগবাজারে মেডস আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। একমাস যেতে না যেতেই সে তার বাবার কাছে ৫ হাজার টাকা চায়। কিন্তু বাবা টাকা দেয়নি। এর কিছুদিনের মাথায় লেখাপড়ার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে সে।

পরীায় ফলাফলও তুলনামূলক খারাপ করে। বাবা তার অনিহার কারণ অনুসন্ধান করতে থাকেন। তিনি জানতে পারেন, আতাউরের কম্পিউটার প্রশিণ প্রতিষ্ঠানটিতে আসলে এমএলএম ব্যবসা চলে। এখান থেকে আতাউরকে ১১ মাসে কোটিপতি বানিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। আতাউর প্রতারণা বুঝতে না পেরে এতে জড়িয়ে পড়েছে।

এখন টাকা তার কাছে পড়াশুনার চেয়ে দামি মনে হচ্ছে। আতাউরের বাবা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা তিনি জানালেন সন্তান নিয়ে তার এ উদ্বিগ্নতার কথা। আতাউরের মতো অসংখ্য শিার্থীর শিাজীবন বিপন্ন হতে চলছে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য। তারা প্রায় অর্ধলাখ শিার্থীর শিাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ রাজধানীতেই এরকম প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে মগবাজারের গ্রান্ড প্লাজা মার্কেটের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে, মেডস আইটি ডেভেলপমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চারটি ক। একটি একাইন্টস, আরেকটি ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের এবং অন্যটিতে বসে কাগজে ছক একে কোটি টাকার হিসেব শিখছে প্রায় অর্ধশত কোমল শিশুসহ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থীরা। পলকে কোটিপতি হতে ওরা ছুটছে দিগি¦দিক। ভর্তিইচ্ছু শিার্থী পরিচয় দিলে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আন্দালিব হোসেন জানান, ‘চারটি কোর্স রয়েছে।

এর যে কোন একটি কোর্সে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। এরপর একজন শিার্থী ভর্তি করালেই পাওয়া যাবে নগদ ৫শ’ টাকা। একই শিার্থীর মাধ্যমে ৬ জন ভর্তি হলে সে পাবে ৩ হাজার টাকা ও ২০ ডলার। এভাবে ৫টি স্টেপ অতিক্রম করলে সে পূর্ব নির্ধারিত টাকার সাথে একটি ১৬ জিবি পেনড্রাইভ পাবে। তার র‌্যাংক হবে জুনিয়র মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ।

এভাবে ১১টি স্টেপ পার হতে পারলেই এক কোটি টাকা কমিশন পাবে সে। এরপর গাড়িসহ কোম্পানির অন্য সুবিধাতো রয়েছেই। জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা আসলে এমএলএম নয়, এমএলএমের মতই। এডুকেশনের সাথে আয়েরও একটি পথ রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ হাইকমিশন এবং কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়েই এমএলএম ব্যবসা করছে বলে আন্দালিব হোসেন দাবী করেন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম জানান, কয়েকজন অভিভাবকও সমস্যাটির কথা বলেছে। প্রায় ১০ জন শিার্থীকে তাদের বাবা-মা আমার সহায়তায় ঐ পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছে। এটা বন্ধ করা উচিৎ। কেননা ওদের এখন টাকার নেশা মাথায় ঢুকলেই পড়াশুনা আর হবে না। বিপন্ন হবে শিাজীবন।

সবুজবাগের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক মিজানুর রহমান জানান, এমএলএম ব্যবসা এমন ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে যা কল্পনাই করা যায় না। বিশেষ করে তারা মানুষকে উদ্বদ্ধ করছে যে টাকাই সব কিছুর মুল। এব্যবসায় পা বাড়িয়ে কয়েকজন শিার্থী স্কুল ছেড়ে অন্যত্র ভর্তি হয়েছে। কারণ হচ্ছে তাদের এব্যবসায় জড়াতে না করায় তারা এই স্কুল থেকে চলে গেছে। পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তার সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলাপ হলে তিনি জানান, শুধু স্কুল কলেজ পড়–য়া ছেলে, মেয়েই নয়, অনেককের গৃহবধু, মাদ্রাসার ছাত্র, মসজিদের ঈমাম, পান বিক্রেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এমএলএম প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে।

তাদের এপথ থেকে ফেরানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও অভিবাভকরা পারছেন না। আপে করে পুলিশের ঐ কর্মকর্তা বলেন, এক মসজিদের ইমাম আমার ছেলেকে কোরান শরীফ শিা দিতেন। যেভাবেই হোক ইমাম এমএলএমের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আমার স্কুল পড়–য়া ছেলেকে সে কম্পিউটার প্রশিণের কথা বলে মেডস আইটি নামের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে। সেখান থেকেই টাকার নেশা মাথায় ঢোকে ওর।

এরপর সে আমার কাছে ৫ হাজার টাকা চায়। আমি না দিলে সে আমার শ্বশুড়ের কাছ থেকে গোপনে টাকা আনে। এরপর সে এবং ঐ ইমাম আমার স্ত্রীকেও এমএলএমে ভর্তি করে। এরপর আমার মেয়েকে নেয়ার চেষ্টা করলে তারা ব্যর্থ হয়। আমার ছেলেটি মেধাবী।

পড়াশুনায়ও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এ ব্যাবসায় জড়িয়ে সে এখন স্কুলে খারাপ করছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, নিউমার্কেটের প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে মেডস আইটির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। মগবাজার, ধানমন্ডি, রায়েসাবাজার, কাচপুরসহ ঢাকায় তাদের ৫টি শাখা রয়েছে। সারা দেশে তাদের মোট শাখার পরিমান ৬০টি।

প্রতিটিতে ১ হাজার সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠািনর কর্তৃপ। রমনা জোনের ডিসি কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে প্রতারণা বা শিার্থীদের জীবন নিয়ে কেউ খেলা করলে তা অবশ্যই প্রতিহত করা হবে। প্রতারিতরা লিখিত অভিযোগ করলেই আমরা ব্যবস্থা নেব। তাদের অনুমতি আছে কিনা তাও কতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে প্রতারণার অভিযোগে জিজিএনসহ কয়েকটি এমএলএম প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। সম্প্রতি জব্দ করা হয় ইউনিপে টু ইউ নামের একটি এমএলএম প্রতিষ্ঠানের সকল একাউন্ট। প্রতিষ্ঠানটি ১০ মাসে দ্বিগুন লাভ দেয়ার টোপ ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা জমা নিচ্ছিল। বাংলাদেশ ব্যংক সাফ জানিয়ে দেয় এরকম চুক্তিতে কোন কোম্পানীকে অর্থ লেনদেনের অনুমতি দেয়া হয়নি। কোন এমএলএম কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হবে না বলেও সরকারের প থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এমএলএম দেশের মানুষের কাছে এক ধরনের প্রতারনা হিসেবে গণ্য হওয়ায় সরকার এমএলএম বিষয়ে এখন জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরন করছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।