আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জনস্বার্থ প্রতিষ্ঠার নামে কেন এই অরাজকতা

জনস্বার্থ প্রতিষ্ঠার নামে কেন এই অরাজকতা ফকির ইলিয়াস ======================================= বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকারি দল এবং বিরোধীদলের মাঝে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে দেশে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল পালিত হয়েছে। মাঠে নেমেছে 'ভ্রাম্যমাণ আদালত'। হরতালে পিকেটার দমনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ উদ্যোগকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এটা নতুন হলেও ক্রমে মানুষ তাতে অভ্যস্ত হবে। কারণ সরকার গণমানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর।

দেশে হরতালের নামে যা করা হচ্ছে তাহলো বিনা কারণে মানুষের প্রতি আক্রমণাত্মক হওয়,গাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুর ইত্যাদি। দাবি আদায়ের নামে, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে এমন নাশকতামূলক কর্মকান্ড কখনই মানা যায় না। মানা উচিতও নয়। এটা কে না জানে, বাংলাদেশে ভাড়াটে পিকেটারের কোন অভাব নেই। কিছু নগদ টাকা ছড়ালে টোকাইরা দুর্দান্ত পিকেটারে পরিণত হয় রাতারাতি।

এদের কাছে রাজনৈতিক আদর্শ কোন বিষয় নয়। কিন্তু যারা এদের দিয়ে এমন হীন কাজকর্ম করাচ্ছেন, তারা তো দেশের প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ দাবিদার। তারা এমন জঘন্য কাজকর্মের মদত দিচ্ছেন কীভাবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে পুরোপুরি এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তিনি বিভিন্ন সমাবেশে বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার নতুন ফর্মুলা বিএনপিকেই জাতীয় সংসদে এসে দিতে হবে।

আর প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বলছে, পুরনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথা বহাল রাখতে হবে। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে একটি সংবাদ দেখলাম। তাতে বলা হয়েছে, আদালতের রায়ের আগেই সরকারি উদ্যোগে ছাপা করা নতুন সংবিধানে 'তত্ত্বাবধায়ক প্রথা বাতিল, এই প্রথায় বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা রহিতকরণ' ইত্যাদি অনুচ্ছেদ নাকি ছাপা হয়েছে। এ বিষয়ে দেশের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বর্তমান আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন বলেও টিভি রিপোর্টে দেখানো হলো। কথা হচ্ছে, আদালতের রায়ের আগেই রায়ের অনুকূলে ধারা-উপধারা কি সংবিধানে ছাপা হয়েছে? যদি হয়ে থাকে তবে কীভাবে হলো? কেন হলো? আইন মন্ত্রণালয় আগাম রায়ের খবর জানল কী করে? বিষয়টি আসলেই অত্যন্ত শঙ্কাজনক।

এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য জাতির সামনে খোলাসা করা অত্যন্ত জরুরি। আদালতের রায়ে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল হয়ে গেলেও আগামী দুই টার্ম এ প্রথা রাখার বিষয়ে আদালত যে সুপারিশ করেছে সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার। রাষ্ট্রীয় আইন, রাষ্ট্রের বিচার বিভাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মানলে তাদের রায়কেও মানতে হবে সবাইকেই। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় কিংবা নতুন ফর্মুলায় কীভাবে নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায় সেজন্য সরকারি দল এবং বিরোধীদলকে অবশ্যই ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। দুই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, অতীতে খালেদা জিয়া ছবিসহ ভোটার কার্ড, ক্লিয়ার ভোটবাক্স, নতুন ভোটার লিস্ট, অনেক কিছুই মানেননি, কিন্তু পরে মানতে বাধ্য হয়েছেন।

এখন তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং পদ্ধতিও মানছেন না। তা-ও তিনি মানতে বাধ্য হবেন। এ বক্তব্য সৈয়দ আশরাফ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দিয়েই যাচ্ছেন। অন্যদিকে পত্র-পত্রিকায় খবর বেরুচ্ছে, খালেদা জিয়া নব্বইয়ের মতো গণআন্দোলনের প্রস্তুতির জন্য জুলাই মাস থেকে দেশ চষে বেড়াবেন। তিনি আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করবেন বলে জানাচ্ছেন তার দলের শীর্ষ নেতারা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রথাই যদি অবৈধ হয় তবে তো বর্তমান সরকারও অবৈধ। কারণ এ প্রথার মাধ্যমেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। একটি কথা মনে রাখা দরকার, সম্মিলিত আন্দোলনের ফসল হিসেবে এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন স্পষ্ট করে বলা হয়নি কয় মেয়াদে এ সরকারের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এখন হঠাৎ করেই প্রধান একটি রাজনৈতিক দলকে আন্দোলনের মুখে ঠেলে দিয়ে পুরো দেশকে সহিংসতার দিকে পরিচালনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের কোনমতেই উচিত হবে না।

বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টিকে প্রধান বিরোধীদল করা হবে, এমন খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধীদল বানিয়ে আওয়ামী লীগ কোনমতেই দেশ-বিদেশে নির্বাচনের স্বীকৃতি পাবে না। এতে জনদুর্ভোগ শুধুই দীর্ঘায়িত হবে। রাজনীতি যদি মানুষের কল্যাণের জন্য হয় তবে ইজমের বাইরে বেরিয়ে রাষ্ট্রের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দলগুলোর পারস্পরিক মতবিরোধ জাতীয় উন্নয়নের মাঠকে নানাভাবেই দুর্বল অতীতে করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।

হরতাল হলেই শেয়ারবাজারের সূচক পতন, কল-কারখানা, দোকানপাট বন্ধ সেই অশনি সংকেতই বহন করে যায়। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে যা কোনমতেই কাম্য ছিল না। এ আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বিষয় জরুরি ভিত্তিতে খেয়াল রাখা দরকার। তা হচ্ছে এ রক্তাক্ত সহিংসতার সুযোগ নিয়ে মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী শক্তি যাতে মাথাচড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এটা ওপেন সিক্রেট, জঙ্গিতন্ত্র এ দেশে বিস্তার লাভ করলে বিএনপি অখুশি হবে না।

কারণ যারা বিএনপির শীর্ষ নীতিনির্ধারক তারা জঙ্গিতন্ত্রের মদতপুষ্টতায় সবসময়ই বিশ্বাসী। কিন্তু চরম ক্ষতি হবে এদেশের প্রগতিবাদী মানুষের। বিষয়টি প্রতিটি সচেতন মানুষের ধ্যানে-জ্ঞানে রেখেই পথ চলতে হবে। জনস্বার্থ প্রতিষ্ঠার নামে মূলত দলীয় অরাজকতা প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে নতুন নয়। দেশে কোন 'ভিখারি সমিতি'ও হরতাল ডাকলে তা 'ফলপ্রসূ', 'সার্থক' হয়, সে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি কীভাবে সম্ভব তা ভাবার বিষয়।

অতীতে আমরা দেখেছি, রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের পর শাসক ও তাদের অনুগত শ্রেণীরা কীভাবে অর্থ, অস্ত্র এবং অসত্যকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। এ বলয় থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। কিন্তু কাউকে না কাউকে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। হরতাল বাংলাদেশে এখন সংক্রামক ব্যাধি, যা যে কোন দলের আহ্বানেই হোক। অথচ কোন সরকারই আইন করে হরতালের মতো জনস্বার্থবিরোধী কাজটিকে চিরতরে রহিত করছে না।

কারণ তাদের ভয়, তারা ক্ষমতাচ্যুত হলে একই হাতিয়ার ব্যবহারের দরকার হতে পারে। এই ভয়াবহ মানসিকতা রুখবে কে? নিউইয়র্ক/ ১৫ জুন ২০১১ -------------------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ / ঢাকা / ১৭ জুন ২০১১ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি- মার্ক বিয়াস ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.