আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জনস্বার্থ পরিপন্থী পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকায় যানজট (৩)



জনস্বার্থ পরিপন্থী পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকায় যানজট (৩) যেভাবে মানুষকে প্রাইভেট গাড়ির উপর নির্ভরশীল করে তোলা হচ্ছে পাবলিক পরিবহণ, জ্বালানীমুক্ত যান ও পথচারীদের সুবিধা হ্রাসকরণ ১.১ সড়কে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য পাবলিক পরিবহণের জায়গা সীমিতকরণ: সমপ্রতি যানজট নিরসনে সিদ্ধানত্দ নেয়া হয়েছে শেরাটন মোড় থেকে বাংলামোটর, ফার্মগেট, মহাখালী ফ্লাইওভার ও প্রগতি সরণি হয়ে আব্দুল্লাহপুর (এরারপোর্ট) পর্যনত্দ মহাসড়কে কার, জিপ, সিএনজি (থ্রি হুইলার) ও ট্যাক্সি ক্যাবসমুহ ডান পাশ দিয়ে চলবে। সড়কের বাম পাশ দিয়ে চলবে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপসহ অন্যান্য পাবলিক পরিবহণ। তাছাড়া কার, জিপসহ অন্যান্য বাহন ব্যবহারকারীরা ইচ্ছা করলে বামের লেন ব্যবহার করতে পারবে। এর ফলে পাবলিক পরিবহণের গতি হ্রাস পাওয়ায় মানুষকে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহিত করবে। ১.২ ঢাকার অভ্যনত্দরীণ বাস রুট কমানো: ঢাকা শহরে এখন পর্যনত্দ বাসে করে সব এলাকায় যাতায়াত করা যায় না।

যানজট নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানী নির্ভরতা হ্রাসকরণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও যাতায়াত খরচ কমানোর লক্ষ্যে পাবলিক সার্ভিসকেই গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকার সর্বত্র মানসম্মত পাবলিক পরিবহণের সুবিধা না থাকায় প্রাইভেট গাড়ীসহ সিএনজি (থ্রি হুইলার) ও ট্যাক্সি ক্যাবের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পূর্বের তূলনায় অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে প্রায় অনেক এলাকাতেই অনেক ভালো মানের বাস সার্ভিস রয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাসের যাত্রী সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে।

কিন্তু এটি খুবই আশঙ্কার কথা যে, যানজট নিরসনের নামে বিদ্যমান ১২৯টি বাস রুট কমিয়ে ৪০টি করার সিদ্ধানত্দ নেয়া হয়েছে। এর ফলে অনেক এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যমান বাস সার্ভিসে যেসব এলাকায় চলাচলের সুবিধা রয়েছে সেটুকু সংরক্ষণের পাশাপাশি মানুষ যাতে ঢাকার সব এলাকা থেকে বাস পেতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাবে। ১.৩ আনত্দজেলা বাস রাজধানীর অভ্যনত্দরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা: পাবলিক পরিবহণের নিয়ন্ত্রণ মানুষের দূর্ভোগ এবং যানজট আরো বৃদ্ধি করবে।

যানজট দূর করার কথা বলে আনত্দঃজেলা বাসগুলোকে ঢাকার অভ্যনত্দরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে সিদ্ধানত্দ নেয়া হয়েছে। ফলে এসব বাসগুলি নগরীর ভিতর থেকে যাত্রী নিতে পারবে বিধায় যাত্রীদের নগরের বাইরে থেকে আনত্দঃজেলা বাসে উঠতে হবে। এর ফলে শহরের বাইরে থেকে যারা ভিতরে আসতে চাইবে বা ভিতর থেকে বাইরে যাবে তাদেরকে প্রচুর পরিমাণে ছোট ছোট বাহনের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। কারণ নগরের বাইরে থেকে মানুষকে শহরে ঢুকতেই হবে। একটি বাস প্রায় ৫০ জন যাত্রী বহন করে।

এই ৫০ জন যাত্রীকে ঢাকার অভ্যনত্দরে প্রবেশ করতে কমপক্ষে ছোট ছোট ২৫ টি বাহন ব্যবহার করতে হবে। এই ধরনের পদক্ষেপ প্রাইভেট গাড়ীর ব্যবহার বৃদ্ধি করবে। এতে সড়কে বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়বে যা যানজট বৃদ্ধি করবে। এর সঙ্গে পরিবহণ খাতে জ্বালানী ব্যবহার, মানুষের যাতায়াত খরচ ও গাড়ী পরিবর্তনের ঝামেলা এবং পরিবেশ দূষণ বাড়বে। ১.৪ ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন: একটি ট্রেনে এক হাজার থেকে পনেরশ যাত্রী চলাচল করতে পারে।

অথচ সিদ্ধানত্দ হয়েছে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যনত্দ কমলাপুর স্টেশনে কোন ট্রেন ঢুকতে এবং ছাড়তে দেওয়া হবে না। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই অনেক মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়বে। এটি করার কারণ প্রাইভেট গাড়িকে সুবিধা দেওয়া। রেল ক্রসিংয়ে গাড়ির অপেক্ষাকে যানজটের কারণ বলা হচ্ছে কিন্তু সেখানে রেলের ভূমিকা গৌণ। বরং বিগত বছরগুলিতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রাইভেট গাড়ি বৃদ্ধি পাওয়ায় রেল ক্রসিংয়ে দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ না করে রেলের চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ কোন সমাধান নয়। ১.৫ বিভিন্ন সড়কে রিকশা বন্ধ করা: ইতিপূর্বে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে রিকশা বন্ধ করায় যাতায়াতের সময়, খরচ ও সর্বোপরি দূর্ভোগ বেড়েছে। যে সকল সড়কে রিকশা বন্ধ করা হয়েছে সে জায়গা এখন প্রাইভেট গাড়ির দখলে। কিন্তু যাত্রী পরিবহণ করছে খুবই কম। কারণ প্রাইভেট কার এর চেয়ে রিকশার যাত্রী ধারণ ক্ষমতা আড়াই গুণ বেশি।

তাছাড়া রিকশা বাসকে সাইড দিলেও প্রাইভেট কার দেয় না। ফলে রিকশা বন্ধ করায় বাসের গতি কমেছে, যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও একের পর এক ঢাকার সড়কগুলি থেকে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হচ্ছে। সমপ্রতি কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সায়েদাবাদ পর্যনত্দ এবং কাকরাইল থেকে রাজারবাগ পুলিশ হসপিটাল, দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে সায়েদাবাদ পর্যনত্দ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এ সকল পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র প্রাইভেট কারের বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে।

একটি রাস্তায় যখনই কোন বাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই শুন্যস্থান পূরণের জন্য অন্যান্য বাহন বেড়ে যায়। রিকশা নিষিদ্ধ করার ফলে সৃষ্ট শুন্যস্থান পূরণের জন্য পাবলিক বাসের পাশাপাশি আগমন ঘটে বিপুল পরিমাণ ছোট যানবাহন (প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি ইত্যাদি)। মিরপুর রোডে রিকশা নিষিদ্ধ করায় সেখানে বর্তমানে ৬০ ভাগ রাস্তা জুড়েই আছে প্রাইভেট কার এবং অন্যান্য ছোট যান, যে স্থানে ২০০০ সনে রিকশাই ছিল মূল বাহন। এখন এই ছোট যান্ত্রিক যানগুলো বেড়ে যাওয়ায় মিরপুর সড়কে আবার যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং উপরন্তু বেড়ে গিয়েছে জ্বালানী নির্ভরতা ও পরিবেশ দূষণ। বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত International Symposium for Sustainable Transport for Developing Countries মারুফ রহমানের লিখিত Increase of Traffic Congestion & Private Cars in Dhaka Through Planning Against Public Interest: A Solution এর অনুবাদ জনস্বার্থ পরিপন্থী পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকায় যানজট (১) Click This Link জনস্বার্থ পরিপন্থী পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকায় যানজট (২) Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.