আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে বেশি ক্ষমতাবান- আইজিপি নাকি ওসি!

ঢাকা, ১৪ জুন (শীর্ষ নিউজ ডটকম): পুলিশ বিভাগে একটি কথা প্রচারিত আছে যে, কোন কোন ক্ষেত্রে ওসি'র ক্ষমতা এসপি'র চেয়েও বেশি হয়ে থাকে, যদিও ওসিদের চেয়ে এসপিরা তিন ধাপ উপরের কর্মকর্তা। বিশেষ করে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালীন এ প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ক্ষমতার যুদ্ধে ওসি'র কাছে এসপি হেরে গেছেন এমন অনেক ঘটনা অতীতে ঘটেছে। কিন্তু আইজিপি একজন সাধারণ ওসি'র কাছে হেরে গেছেন এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য হলেও তাই ঘটেছে। সাভার থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মাহবুবুর রহমানের কাছে পুলিশের আইজি হেরে গেছেন।

আইজিপির নির্দেশে এই ওসির দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাস্বরূপ শাস্তিমূলক বদলি আদেশ জারি হওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ওই এলাকার এমপি তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদকে দিয়ে সরকারের উপরের মহলে তদবির করে ওসি মাহবুবুর রহমান তার বদলি আদেশ বাতিল করান। সেই থেকে ওসি মাহবুবুর রহমান দুর্নীতি-অপকর্মে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, এমনকি আইজিপিও এখন তার ব্যাপারে বলা যায় একরকমের অসহায়। জানা গেছে, ওসি মাহবুবুর রহমানকে এমপি মুরাদ জং তার নানা অপকর্মের একজন সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

তাই তিনি চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ নানা অপকর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ওসি মাহবুবুর রহমানকে স্বপদে আসীন রাখেন। বিশেষ ক্ষেত্রে ওসি'র কাছে এসপি হেরে যাওয়ার কিছু কারণ থাকে। বিশেষ করে ওসিদের সঙ্গে যদি ওই এলাকার এমপি'র ঘনিষ্ঠতা থাকে। এই সম্পর্কের খাতিরে এমপিরা অনেক সময় অবৈধ কর্মকা- বাস্তবায়নের জন্য ওসি'র মাধ্যমে পুলিশের সহযোগিতা নেন। বিনিময়ে শাস্তির হাত থেকে ওসিদের রক্ষা করার দায়িত্বও পালন করেন এমপিরা।

এমপিদের ক্ষমতার বলে বলীয়ান হন বলে পদমর্যাদায় বিশাল ব্যবধান হওয়া সত্ত্বেও ওসি'র কাছে এসপি হেরে যান। এসব ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে ওসি তার অবস্থানে ঠিকই থাকেন। বদলি হয়ে যান এসপি। এমন ঘটনা দু'একটি নয়, অনেক আছে পুলিশ বিভাগের ইতিহাসে। সাভার থানার ওসি মাহবুবুর রহমানের কাছে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হেরে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ ভালোভাবেই আলোচিত হচ্ছে।

সাভার থানার এই ওসি'র মাদক ব্যবসা, দুর্নীতি এবং ভূমিদস্যুদের সহযোগীসহ নানান অপকর্মের কথা পুলিশ বিভাগের কনিষ্ঠ থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যন্ত সবার কাছে বহুল আলোচিত। তদন্তে এসব অপকর্মের প্রমাণও পাওয়া গেছে। পুলিশের নিচের দিক থেকে শীর্ষ পর্যায়ে মাহবুবুর রহমানের দুর্নীতি-অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে একাধিবার। অথচ এমপি'র প্রভাবের কারণে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। নেপথ্য কাহিনী: সুনির্দিষ্ট অভিযোগসহ সাভার থানার ওসি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইজিপি'র কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়।

ওই অভিযোগে মাহবুবুর রহমানের অপকর্ম সম্পর্কে জেনে আইজিপি মহাক্ষুব্ধ হন। আইজিপি তাকে শাস্তিমূলক বদলির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু শীর্ষ কর্মকর্তার এই নির্দেশও তামিল হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে মাহবুবুর রহমানের বদলির ব্যবস্থা করেন। আদেশও জারি হয়।

কিন্তু ওই আদেশ কার্যকর করা যায়নি সাভার-আশুলিয়ার এমপি তৌহিদ জং মুরাদের কারণে। জানা গেছে, এমপি মুরাদ জংয়ের চাঁদাবাজি, অন্যের জমি দখলসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকা-ে সহযোগী হিসেবে কাজ করে থাকেন ওসি মাহবুবুুর রহমান। বদলির আদেশ জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওসি তার প্রিয় মানুষ মুরাদ জংকে জানান। এই আদেশ বাতিল করার জন্য মুরাদ জং প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ না হওয়ায় তিনি গাজীপুরের এমপি জাহিদ আহসান রাসেলকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় পর্যন্ত যান।

সবকিছু ম্যানেজ করে এমপি ওসি মাহবুবুর রহমানের বদলি ঠেকিয়ে দেন। এ ঘটনার পর ওসি মাহবুবুর রহমান আইজিপিকে এখন থোড়াই কেয়ার করেন। অন্যদেরকেতো কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না। সুযোগ বুঝে এখন তিনি আগের চেয়ে দুর্নীতির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন এডিশনাল এসপিও:ওসি-এমপি দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে আরো একজন পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত আছেন। তিনি হলেন ঢাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম।

এ দু'কর্মকর্তা জোট বেঁধে এমপি মুরাদ জংয়ের নানা অবৈধ কর্মকা-ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। রফিকুল ইসলামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। নামের সঙ্গে শেখ আছে। তাই তিনি নিজেকে শেখ বংশের লোক হিসেবে দাবি করে থাকেন। গোপালগঞ্জের মানুষ এবং শেখ হিসেবে খেতাব ব্যবহার করে পুলিশ প্রশাসনে বেশ দাপট খাটাচ্ছেন অতিরিক্ত এসপি রফিকুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, এডিশনাল এসপি রফিকুল ইসলাম সম্প্রতি আশুলিয়া থানার একটি অপহরণ মামলায় মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আসামীদের অবৈধভাবে বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কেন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না: বর্তমানে সাভার বাংলাদেশের নামকরা মাদকের আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে মাদক ব্যবসার সঙ্গে সাভার থানার ওসি মাহবুবুর রহমান সরাসরি জড়িত। তিনি এমপি মুরাদ জংয়ের সঙ্গে যোগসাজশে এ অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। পুলিশের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত এসব ঘটনা প্রচারিত আছে।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে বেশ ক'বার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে অভ্যন্তরীণ তদন্তও হয়েছে। তদন্তে ওসি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি শুধুমাত্র এমপি মুরাদ জংয়ের বাধার কারণে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি: সাভার-আশুলিয়া এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।

কিন্তু এখানকার থানা পুলিশ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এমপি'র প্রশ্রয়ে বরং সন্ত্রাসীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের কেউ কেউ। বর্তমান সরকারের আমলে গত প্রায় সোয়া দু' বছরে সাভার এবং আশুলিয়া এলাকায় ৭০টিরও বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত একজন ডাকাতও আটক হয়নি। উল্টো ডাকাতদের হাতে ২ জন নিহত হওয়া ছাড়াও প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন। স্বর্ণের দোকানও ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা ৩০০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে গেছে। এদের ধরার ব্যাপারে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা প্রকাশ পাচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা কেউ কেউ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাইলেও পারছেন না এমপি'র বাধার কারণে।

এ ব্যাপারে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শীর্ষ কাগজকে বলেন, 'একজন ওসি'র কাছেই আমরা পুরো পুলিশ বাহিনী হেরে যাচ্ছি। এই ওসি'র এতো ক্ষমতা! তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা নিয়ে শুধু একবার নয়, কয়েক দফায় রিপোর্ট পাঠিয়েছি ওপরের পর্যায়ে। কিন্তু কোন কাজই হচ্ছে না। আইজি সাহেবও চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন। ওসি মাহবুবের বদলির আদেশ বাতিল হবার পর সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

কারণ, তার ক্ষমতার মূলে এমপি'। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.