আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ছোট্টবেলার অভিযান

আমি যা আছি তাই ভালো। :) এবার অনেক ক’মাস হলো বাসায় যাওয়া হয় না । ছোটবেলার একটা কাহিনি খুব মনে পড়ছিলো,তাই ভাবলাম লিখে ফেলি । তখন আমি ক্লাস থ্রিতে এ পড়ি,আর আমার বড় বোন সিক্স এ পড়তো। আমরা তখন থাকতাম আমাদের গ্রামের বাড়িতে।

আমাদের বাড়িটা ছিলো একদম একটা ফাঁকা জায়গায়,আশেপাশে আমাদের বাড়িসহ মোট ৩টা বাড়ি। কিছুদূর গেলেই একটা নদী। নদীটার শেষ মাথা কোথায় আমাদের জানা ছিলো না। আমাদের বাড়ির আশেপাশে ছিলো অনেক ধানের জমি। আমি যে সময়টার কথা বলছি ওই সময় জমি গুলোতে কচি কচি ধান গাছ ছিলো।

যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। সেই সবুজ ছাড়িয়ে নদীর থেকে কিছু দূরে একটা উচু মতন জায়গা ছিলো(এখনো আছে)। আর ছিলো ৩টা গাছ। একদম সারি বেধে। আমাদের ধারণা ছিল ওগুলো আমগাছ।

ওই জায়গাটার আশেপাশে কোন বাড়ি ছিলো না। দ্বীপের() মত একা একা মুখ ভার করে যেনো আমাদের দিকেই তাকিয়ে থাকতো। আর আমাদের যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকতো। ওই সময় প্রচুর তিন গোয়েন্দা পড়তাম। আম্মুকে লুকিয়ে একটু চান্স পেলেই হলো,আমাদের আর পায় কে।

আমাদের বাড়ি থেকে বের হলেই জায়গাটা চোখে পড়তো। এভাবে সে আমাদের মনযোগ কেড়ে নিলো। আমরা দুবোন পড়তে বসলেই আমাদের মনে হতো ওই দ্বীপ টার কথা। দু জন একসাথেই পড়তে বসতাম আর আম্মু ওই সময় রান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকতো তাই আমাদের দিকে বেশি নজর রাখতে পারতো না। যদি জিজ্ঞেস করত পড়ছি না কেন বলতাম আম্মু অংক করছি()।

আমরা চুপিচুপি প্লান করতে থাকলাম, ওই দ্বীপে আমাদের যেতেই হবে। সাথে কি কি নিতে হবে তাও ঠিক করে ফেল্লাম। সব কিছু যদিও আমার আপু প্লান করতো তবুও আমার উত্তেজনার একটুও কম ছিলো না()। আমাদের স্কুল যদিও ১২টার মধ্যে শেষ হয়ে যেতো তবুও আমরা ঠিক করলাম বিকেলের দিকে রওনা দিব তাহলে আম্মু ভাব্বে আমরা খেলতে গেছি(আম্মু স্কুল এর চাকরি করতো,ছুটি হইতো ৪টায়)। সেদিন ঠিক কি বার ছিলো আমার মনে নেই,আমরা রওনা দিলাম,সাথে নিলাম একটা বড় দড়ি,একটা চাকু,একটা পাউরুটির প্যাকেট,একটা চানাচুর আর দুইটা কলা(অবশ্যই দু;জনার ব্যাগে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলাম)।

ও সাথে মোমবাতিও নিয়ে ছিলাম। একেবারে পারফেক্ট অভিযান()। আম্মু তখন আমাদের একটা গান গেয়ে শুনাতো। বাংলা ছিনেমার। ‘আমরা যাবো অভিযানে সংগে যাবে কে,এইতো আমার বীর বাহিনী কোমর বেঁধেছে’।

এই গান টা আমাদের অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছিলো। তো আমরা রওনা দিলাম,মনে মনে আম্মুর গান টা গাচ্ছিলাম। আমরা নদীর কাছে যাওয়ার জন্য মেইন রাস্তা দিয়ে না যেয়ে ধানের জমির মাঝখান দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। জমিতে নামার একটু পরেই আমার এক চাচার সাথে দেখা হয়ে গেলো। ওই চাচাকে আমরা যমের মতো ভয় করতাম।

ওনাকে দেখে আমাদের একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। আমরা হাঁটতে থাকলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর আমার ভয় লাগতে শুরু করলো। আমি আপুকে বললাম আজ আর না যাই চাচা যদি আব্বুকে বলে দেয়(ভয়ের কথা কি আর বলা যায় )। আমার আপু ভীষন সাহসী।

সে বলল আজ যেহেতু রওনা দিয়েই দিয়েছি,দেখিনা যেয়ে কি হয়। আমি আর কি বলব, ওর পিছু পিছু হাঁটা শুরু করলাম। যতো দূরে যাচ্ছিলাম ততো আমার ভয় বাড়ছিলো। এরপর আর থাকতে না পেরে আমি শুরু করে দিলাম হাউমাউ করে কাঁন্না। আমার বোনতো আমার কাঁন্না দেখে ঘাবড়ে গেল।

কি করবে কিছু ভেবে না পেয়ে ব্যাগ থেকে খাবার বের করা শুরু করলো,খাবার দেখেই আমার কান্না থেমে গেলো(খুব পেটুক ছিলাম কিনা )। তারপর আমরা জমির আইলের মধ্যে বসেই সব খাবার খেয়ে ফেললাম। আমার খুশি আর দেখে কে()। কিন্তু আমার আপু বেশ হতাশ হলো,সে এত কষ্ট করে সব কিছু যোগাড় করেছে। আমি তখন বললাম আমরা আর এক দিন যাব,দেখেই আসবো ওখানে কি আছে,তারপর সবাইকে বলব আমরা ওখানে গিয়েছিলাম(মনে মনে আমার ফ্রেন্ডদের কথা ভেবে একটু দুঃখও পেলাম,ওরা আজকের কথা জানতে পারলে তো অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে,কিন্তু আজকে তো আমার ভীষন ভয় করছে )।

আমার আপু বললো ঠিক আছে,কিন্তু তুই কাউকেই কিন্তু আজকের কথা কোন অবস্থাতেই বলতে পারবি না। আমি তো মহা খুশি,আজকে তো আর যেতে হচ্ছেনা()। আমি বললাম ঠিক আছে,এবার চল। এরপর আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। মন টা একটু একটু খারাপ লাগছিলো,কি আর করা।

পথে আবার সেই চাচার সাথে দেখা()। উনি আমাদের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকালেন যে আমরা ভয়ে দিলাম এক ভো দৌঁড়। দৌঁড়ে এক্কেবারে রুম এর মধ্যে। আম্মু আমাদের দৌঁড়ানো দেখে একটু অবাক হলেন। কিন্তু আমরা এমন ভাব দেখালাম যে আমরা তো এমন মাঝেই মাঝেই করি কে আগে রুম এ যেতে পারবে()।

এরপর ক’দিন তো আমাদের এই দুঃসাহসিক অভিযানের কথা সবাইকে বলার জন্য আমার পেট গুড় গুড় করছিলো। কিন্তু কাউকেই বলতে পারি নাই আমার বোনের জন্য()। মনের কথা মনেই রয়ে গেলো। এরপর অনেক বছর পর আম্মুকে ঘটনাটা বলেছিলাম,আম্মুতো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো,আমাকে আবার মাঝে মাঝে টীপ্পনীও দিতো আমার সাহস নিয়ে()। এখন গ্রামের বাড়ি যাওয়াই হয় না,সেই সময়টাও নাই,কিন্তু তারপরেও আমার আপু চেষ্টা করে নদীটার কাছে যেতে,আর গেলে তো আমাদের এমন হাসি পায় যে ওখানকার মানুষ জন আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে(মাথা খারাপ নাকি এমন দৃষ্টিতে)।

আর আমারো মাঝে মাঝে অবাক হই দ্বীপটা এখনো আগের মতই একই যায়গায় আছে,কেউকি আমাদের মতো এখনও ভাবে ওখানে যাওয়ার কথা,আমাদের মতো,আমাদের মতো করে...। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।