আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাহাদের নাম "এপ্রন উইমেন"

যতোবার আমি শান্তি খুঁজেছি, ঠিক ততোবার আমার মাথায় শুধু একটি চিন্তাই এসেছে। সেটা হচ্ছে একটা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলিটা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তা। সুপারম্যান, স্পাইডার ম্যান, ক্যাট ওম্যান, আয়রন ম্যান এর পর দুনিয়া কাপাতে যারা চলে এসেছে তারা হলেন "এপ্রন ওমেন"। তবে অন্যান্য সুপার হিরো বা হিরোইনদের মতো এরা সংখ্যায় শুধুমাত্র একজন নয়, এরা একাধিক। সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে এদের অনেক বেশি দেখা যায়।

প্রতিটা সুপার হিরো, হিরোইনের মতো তাদেরও একটা আলাদা পোশাক আছে। নামেই বুঝতে পারছেন। হ্যা, সেটা এপ্রন। অন্যান্য হিরো হিরোইনরা নিজেদের পরিচয় চেপে রাখতে চাইলেও এপ্রন ওমেনরা নিজেদের পরিচয় আলাদাভাবে প্রকাশ করার জন্য মনে হয় বদ্ধপরিকর। তাইতো তাদের অহরহ প্রায়শই রাস্তায়, বাসে, মার্কেট এ, ফাস্ট ফুড শপে সেই বিশেষ পোশাকে দেখা যায়।

তবে তারা সেখানে কি হিরোইন গিরি করেন, সেটা একটা রহস্য। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, কেন আমি শুধু হিরোইন দের কথা বলছি? "এপ্রন ম্যান" বা "এপ্রন মেন" দের কি দেখা যায় না? হয়ত দেখা যায় , তবে উইমেন দের মতো এতোটা না। অন্তত আমি রাস্তাঘাটে ২০ জন এপ্রন মহা মানবী দেখে থাকলে এপ্রন মানব দেখেছি ১ বা ২ জন। আরেকটা কারন হল বিভিন্ন শপিং মল বা মার্কেট। শুনলে হয়তো অবাক লাগবে তবুও এটাই সত্যি যে আমি এখন পর্যন্ত যে কয়দিন বসুন্ধরা সিটি তে গিয়েছি, প্রতিদিনই কোন না কোন এপ্রন মহা মানবী এর সাক্ষাত পেয়েছি!! এপ্রন মানব কিংবা এপ্রন মানবীরা কি জন্মসুত্রেই এই ক্ষমতার অধিকারি?নাকি পরবর্তীতে অর্জন করেছেন? না, উনারা মায়ের পেট থেকেই এপ্রন নিয়ে বের হন নি।

এটা অর্জন করতে হয়েছে। আমিও কি চাইলেই এপ্রন মানব কিংবা মানবী হতে পারবো? উত্তরঃ হ্যা, আপনি চাইলে আপনি নিজেও এই সুপার পাওয়ার অর্জন করতে পারেন। এপ্রন মানব কিংবা এপ্রন মানবী হতে হলে কি করতে হবে? এপ্রন মানব কিংবা এপ্রন মানবী হওয়ার জন্য আপনাকে মেডিকেল কলেজের ফর্ম কিনতে হবে। সরকারী কিংবা বেসরকারি যেকোনো মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর একাডেমিক কাজ শেষে সারাদিন এপ্রন পরিহিত অবস্থায় যেখানে সেখানে ছুটাছুটি করলেই আপনি এপ্রন সুপার হিরো বা হিরোইন এ পরিনত হবেন। তবে ফার্মাসি, কিংবা বায়োকেমিস্ট্রি তে পড়লেও এটা করা যায়, তবে এইসব অনুষদের শিক্ষার্থীরা এমনটা করেন না বলেই আমার ধারনা।

বিঃদ্রঃ ল্যাব টেকনিশিয়ানদেরও এপ্রন পরিধান করতে হয়। এপ্রন মানবীদের কোন দিন বা দিনের কোন সময়ে বেশি সাক্ষাত পাওয়া যায়? যেকোনো দিনেই পাবেন। এমনকি শুক্রবারেও গাউছিয়াতে এপ্রন মানবীদের দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। তাছাড়া মেডিকেলে ক্লাস শুরু হবার ৭ দিন আগে একবার আমাদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমাদের ব্যাচের একজন মানবী এপ্রন পরে সংবর্ধনায় এসেছিলেন (সেটাও শুক্রবার ছিল) এছাড়া যে কোন দিনের সকাল ৯ টা থেকে শুরু করে রাত ৯ টা পর্যন্ত এদের বেশি দেখা যায়। এদের দেখতে পাওয়ার জন্যে আপনার কষ্ট করার দরকার নেই।

এরা নিজেরাই আপনাকে পেলে নিজেদের দেখিয়ে যাবে। এপ্রন মানবীদের কাজটা কি? বহুত কাজ!!!ভাবছেন কি? তারা অন্য সুপার হিরোদের চেয়ে কম যায়না। ১ নম্বর কাজঃ ভাব মারা। তারা মেডিকেলে পড়ে, লোকজনকে বুঝানো লাগবে না? ( তারা ভাব মারবে না তো কি আপনে মারবেন? বিঃদ্রঃ যদিও বছরের ৩৬৩ দিন এই ভাব থাকে, কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারনে ঈদের দিনগুলিতে কোন মানবীকে এপ্রন পড়তে দেখতে পাওয়া যায় নি, বড়ই আশ্চর্য! ২ নম্বর কাজঃ বদ পুলাপান দের শিক্ষাদান। তারা কিন্তু নিজেরা বদ দের মারে না, কিন্তু জনগণদের প্ররোচিত করে বদ দের শায়েস্তা করে।

আমি একবার একটা ঘটনা দেখেছিলাম। এটা রাপা প্লাজাতে। তিনজন এপ্রন মানবী একই সাথে এসেছিলেন। ( হয়তো রাপা প্লাজা এর কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো!) যাই হোক, এক ছেলে তাদের কাছে যেয়ে বলল- তার বেশ ঘনঘন বুক ধড়ফড় করে। এটার ওষুধ কি? প্রত্যুত্তরে তারা তো ওষুধ এর কাছে থেকেও গেলেন না!! উল্টা সারা রাপা প্লাজা এর মানুষ জড় করলেন ডেকে।

চোখের পলকে ইভ টিজিং এর দায়ে অভিযুক্ত বেয়াদপ ছেলের কপালে জুটল বেশ ভালো কিছু ওষুধ। চড়, কিল, ঘুষি, লাত্থি। হিরোইনদের জয় হল, শয়তান বাঁদরেরা উচিৎ শিক্ষা পেলো। ৩ নম্বর কাজঃ তিন নম্বর কাজটা অনেক কঠিন! অনেক চিপা এর মধ্য থেকেও নিজেদের কাজ হাসিল করে নেওয়া। এটা যে কতটা কঠিন, তা আমি জানি, আমি চিপার মধ্য থেকে আমার কাজ হাসিল করতে পারিনাই, অথচ একজন এপ্রন মানবী পেরেছেন।

এইজন্য তাকে একটা হাততালি। কয়দিন আগে বরিশালে গিয়েছিলাম। বরিশালে যাওয়ার কিংবা বরিশাল থেকে ঢাকা আসার দুইটা উপায় আছে। একটা হল, সড়ক পথে অর্থাৎ বাস এর মাধ্যমে। আরেকটা হল নৌ পথে, অর্থাৎ লঞ্চ।

আমার লঞ্চ জার্নি ই বেশি ভালো লাগে। তো ছুটি শেষ, বরিশাল থেকে ঢাকা আসবো, এমন অবস্থায় লঞ্চ অফিসে গেলাম একটা সিট বুকিং দেওয়ার জন্য। বুকিং কাউন্টার এ দাঁড়ানো মাত্র কাউন্টার এর লোক আমাকে বলে দিলো যে কোন সিট খালি নাই, যেয়ে রাস্তা মাপেন। আমি ছাগলের মতো দাড়িয়ে আছি ,এমন সময় একজন এপ্রন মানবী এর আগমন ঘটলো। মিষ্টি করে হেসে কাউন্টারে যেয়ে মহা মানবী বললেন- এক্সকিউজ মি ভাইয়া, আজ আপনাদের কোন লঞ্চটা ঢাকা যাবে? আসেন আসেন আপা, কয়ডা সিট লাগবে খালি কন।

আমি ভাবলাম ইশ! কেন যে এপ্রন ম্যান হইয়া আইলাম না, হইলেই তো কাহিনী হইয়া যাইত। পরিশিষ্টঃ যেকোনো কিছু ব্যবহার করতে হলে আগে সেই জিনিসটার প্রকৃত গুরুত্ব জানা উচিৎ। এপ্রন ভাব মারা কিংবা স্টাইলের জন্য নয়। এপ্রন ব্যবহারের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল হাসপাতাল কিংবা কর্মক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত ভাবে সেবা প্রদান। পুরা শহরে চক্কর মেরে রাজ্যের ধুলো গায়ে মেখে রোগীর কাছে যাওয়ার মানেটা কি? একই ভাবে হাসপাতালে ব্যবহৃত এপ্রন অনেক ভাবেই রোগীদের শরীরে থাকা বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।

সেই জীবাণুগুলিকেও সারা শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার কোন অর্থ নেই। এপ্রন একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট এর আইডেন্টিটি ও বটে, সেই হিসেবে ব্যবহার করলে কিন্তু রাস্তাঘাটে সবার সব স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর ও দেওয়াটা বাঞ্ছনীয়। ইদানিং হরহামেশা রাস্তাঘাটে ,শপিং মলে এদের বেশি দেখা যায়, তাই না লিখে পারলাম না। ঘুরতে হলে এপ্রন খুলে ঘুরলেই তো হয়। ভাব না হয় একটু না ই নেওয়া হল, ক্ষতি কি?  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।