আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শতভাগ ফেলের পরে

একপাই জুজখোলা পঞ্চগ্রাম বিদ্যালয়ে বিশেষ মতবিনিময় সভার আয়োজন চলছে। মঞ্চ বানানো অনেক আগেই শেষ। ডেকরেটরের লোকেরা মঞ্চের সামনে চেয়ার ফিট করছেন। সভা শেষে এক ঘন্টার বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান এবং তারপর হালকা মিষ্টি মুখের এন্তেজাম আছে। এ বিষয় গুলো সঠিক ভাবে আয়োজনের জন্য দুটো কমিটি করে দেয়া হয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কমিটি ঠিক মতোই কাজ করছে কারণ স্কুলের এক রুমে বিনোদন মূলক অনুষ্ঠানের রিহার্সাল চলছে আর এক দল গেছে আমিত্তি আর গোপালভোগ আনতে। কিছুক্ষন আগে হেড স্যার এসে ঘুরে গেছেন। সবকিছু দেখে তাকে সন্তুষ্ট বলেই মনে হয়েছে। তিন ঘন্টা পরের কথা। হেড স্যার মঞ্চে আরোহন করেছেন।

তার আগে একদল কোমলমতি শিক্ষার্থী ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরন করে নিয়েছেন। হেড স্যারের পাশে অংক স্যার, সমাজ স্যার আর ব্যায়াম স্যার বসেছেন। অন্য স্যাররা শিক্ষার্থীদের সাথে মঞ্চের সামনে চেয়ারে আসন গ্রহণ করেছেন। উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইংরেজী স্যার। তিনি মাইক্রোফানের সামনে এসে সভার কাজ শুরু করলেন।

হ্যালো, ওয়ান টু থ্রি, ওয়ান টু থি মাইক্রোফোন টেষ্টিং....হ মাইক বেশ ভালা আছে। যাইহোক আমাদের আজকের মতবিনিময় সভার সন্মানীত অতিথি, বিশেষ অতিথি এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনারা জানেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের স্কুল শতভাগ ফেল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। সারা বাংলাদেশের মধ্যে মাত্র ৪৯টি স্কুল এবার এই সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের হাজার হাজার স্কুলের মধ্যে থেকে এই বিরল সন্মান ছিনিয়ে আনার পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি সেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য রইলো আমাদের সবার পক্ষ থেকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

এ পর্যায়ে আমাদের সামনে বক্তব্য রাখবেন সকল বিষয়ে এফ গ্রেড পাওয়া আমাদের সবার স্নেহধন্য ছাত্র আবুল হাসান। উপস্থাপকের ডাক পেয়ে আবুল হাসান মঞ্চে উঠে এলেন। ধন্যবাদ, আজ আমি অনেক অনেক খুশি। আমার বাবা এক দিন বলেছিলেন, ‘আবুইল্যা, আমার কেন জানি মনে লয় তুই বুঝি একদিন এই গেরামের নাম উজ্জল করবি। ’ আজ আমার বাবার সেই অনুমান সত্যি হয়েছে।

আমার বাবা যে জ্যোতিষি লাইনে ভালো করবেন তা আমি হলফ করে বলতে পারি। যে স্কুলকে কেউ চিনতো না আজ সেই স্কুলের নাম পত্র পত্রিকায় উঠেছে। দেশের সবাই আমাদের গেরামের কথা জানতে পারছে। এই সাফল্যের দাবী আমি একা করলে অন্যায় হবে। স্যাররা যদি ক্লাসে না ঘুমাতেন তাহলে আমাদের পক্ষে এই সাফল্যের পালক সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যেতো।

আশা করি আগামী পরীক্ষায় এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আপনাদের আশির্বাদ আমাদের পথের পাথেয়। ধন্যবাদ। আবুল হাসানের বক্তব্য শেষ হলে ইংরেজী স্যার আবার মাইক্রোফোনের সামনে এলেন, ‘ধন্যবাদ স্নেহধন্য পুত্রসম আবুল তোমার বক্তব্যের জন্য। এবার আমাদের সামনে বক্তব্য রাখবেন ছয় বিষয়ে এফ এবং চার বিষয়ে ডি গ্রেড পাওয়া স্কুলের গর্ব আকলিমা খাতুন।

আকলিমা তার বক্তব্য রাখার জন্য মঞ্চে উঠে বক্তব্য শুরু করলেন। উপস্থিত সবাই শ্রেণীমতো আমার সালাম এবং আদর দিবেন। শুধু উত্তর পাড়ার মধু মিয়ার ছেলে চান মিয়া আমার ভালোবাসা নিবেন। আজ সত্যি বলতে দ্বিধা নেই, আমার এই সাফল্যের পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি সে আর কেউ না, উত্তর পাড়ার মধু মিয়ার ছেলে চান মিয়া। সে নিজেও ক্লাস এইট ফেল।

একজন ফেল্টুসই বুঝতে পারে ফেল করার সুবিধা। তার কাছ থেকে অনুপ্রেরনা না পেলে আমার পক্ষে এই সাফল্য অর্জন করা কোন ভাবেই সম্ভব হতো না। তাই আমি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাব, সভা শেষে মিষ্টিমুখ করানোর সময় তাকে যেন দুই পিচ আমিত্তি বেশি দেয়া হয়। সে আবার আমিত্তির বিরাট ফ্যান। আজকের মতো এখানেই ইতি।

উপস্থাপক ইংরেজী স্যার আবার মাইক্রোফোন হাতে নিলেন, ধন্যবাদ আকলিমা। এবার আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখনে আসছেন আজকের মতবিনিময় সভার সভাপতি আমাদের সবার প্রিয় হেডস্যার। আপনাদের সামনে বলার জন্য আজ আমার মুখে কোন ভাষা নেই। যে সাফল্য এই কোমলমতি শিশুরা দেখিয়েছে তাতে আমি অবিভূত এবং গর্বিত। আজ আমরা সারা দেশের দিকে তাকালে কি দেখতে পাই? দেখতে পাই পাশ করা ছেলে মেয়েদের মধ্যে কলেজে ভর্তি হবার জন্য হাহাকার।

এত শিক্ষার্থী পাশ করেছে যে তাদের জায়গা দেবার মতো কলেজে দেশে নেই। এই টেনশনে ছেলে মেয়েদের উপরে মানুষিক চাপ পড়ছে এবং তাদের শারীরীক বৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে। সেই দুঃশ্চিন্তা থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা মুক্ত এটা ভেবে আমার যে কি ভালো লাগছে তা আজ ভাষায় ব্যক্ত করতে পারবো না। তোমরা সত্যিই দেশ দরদি। পরীক্ষায় ফেল করে অন্যদের কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ দিয়ে তোমরা ত্যগের যে স্বাক্ষর রেখেছ তা আজ জাতি বিষ্ময় ভরা নয়নে অবলোকন করছে।

আশারাখি আগামীতেও ফেলের এই ধারাবাহিকতা যে কোন মূল্যে তোমরা বজায় রাখবে। ফুলে যেমন কাঁটা থাকে তেমনি ভালো কাজেরও কিছু খারাপ দিক আছে। আজ ভেবে অবাক হই, তোমাদের সাফল্যকে খাটো চোখে দেখে এক শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা স্কুলের সরকারী অনুদান বন্ধের পায়তারা করছে। আমার দ্যার্থহীন চিত্বে বলতে চাই, কারো কোন ষড়যন্ত্র আমাদের এই ফলাফলের ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে পারবে না। আমি আমার বক্তব্য দীর্ঘায়িত করবো না।

তাছাড়া এই মাত্র খবর পেলাম আমিত্তিতে পিঁপড়া ধরেছে। সুতরাং দেরি না করে তোমরা মিষ্টিমুখ করো। সবাইকে শুভেচ্ছা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.