আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুলেটপ্রুফ

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। --- নেতা, আমরা তো রাস্তায়। সবাই আজ একসাথে বসেছি।

দাবী আদায় হবে, তারপর যাবো। --- বেশ বেশ। তোমরা আছ বলেই তো আমি আছি। তোমাদের স্পিরিট প্রশংসার যোগ্য। --- আপনি আসবেন না নেতা? সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

ওপাশে নীরবতা। ব্যগ্র কণ্ঠের জিজ্ঞাসা, “নেতা, আপনি আছেন?” এবার নেতা জবাব দেন। হ্যাঁ হ্যাঁ, আছি। শোন, আমার একটু জরুরী কাজ আছে। এখন আসতে পারবো না।

তবে আসবো ঠিকই। একটু দেরী হতে পারে। ততক্ষণ একটু সামলে-সুমলে চল, কেমন? --- ঠিক আছে নেতা। সবাই জান দিয়ে দেবে, তবু রাজপথ ছাড়বে না। --- আচ্ছা, রাখি তাহলে।

সাবধানে থেকো। --- নেতা, আমাদের প্রোটেকশনের কথাটা একটু মাথায় রাখবেন। শুনলাম, এখানে নাকি পুলিশ আসছে। --- আরে ভয় পেও না তো, আমি আছি না? আমি থাকতে তোমাদের গায়ে কেউ টাচ করতেও সাহস পাবে না। --- থ্যাংক ইউ নেতা।

আপনার মুখের কথার ওপর তো কোন কথা থাকতে পারে না। --- ঠিক আছে, রাখছি। --- সালাম নেতা। নেতার কালো রঙয়ের গাড়িটির ইঞ্জিন প্রায় নিঃশব্দ, রাস্তায় অবস্থান নেয়া লোকগুলোর কয়েকশো গজ দূর দিয়ে গাড়িটি চলে যায়। সবাই উত্তেজিত বলে এদিকে কেউ খেয়াল করে না।

নেতা জানালার ভেতর দিয়ে তাকালেন। দূরে দেখা যাচ্ছে মানুষের সারি, সবাই রাস্তায় বসে আছে। সামনের দিকে হাত মুঠি করে একটু পর পর কেউ একজন স্লোগান দিচ্ছে। নিশ্চয়ই খানিকক্ষণ আগে তাঁর সাথে যার কথা হল, সে-ই। অত্যন্ত ডেডিকেটেড একজন কর্মী।

নিশ্চয়ই নেতার নাম নিয়ে বলছে জিন্দাবাদ। এবং সবাই গলা মেলাচ্ছে। অথবা বলছে, রাজপথ ছাড়ি নাই, ছাড়বো না। কেউ কেউ হয়তো পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণার তাগাদা দিচ্ছে; প্রতীকী অনশন কিংবা “কঠোর কর্মসূচী” দেয়া ইত্যাদি। নেতার গাড়িটা আরও একটু সামনে যেতেই পুলিশের কয়েকটা গাড়ি দেখা যায়।

বেশ “প্রস্তুতি” নিয়ে যাচ্ছে তারা। নিশ্চয়ই ঐ অবস্থান নেয়া লোকগুলোর দিকে। কে জানে, কতজনের মাথায় আজ লাঠির বাড়ি পড়বে। পড়ুক। স্যাক্রিফাইস ছাড়া কোন অর্জন হয় না।

নেতা আরও “বৃহত্তর বিষয়াবলী” নিয়ে চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি ব্যস্ত মানুষ, একসাথে অনেক কিছু চিন্তা করতে হয়। একটা জিনিস নিয়েই পড়ে থাকলে তো আর চলবে না। ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। নানা চিন্তা তাঁর মাথায়।

নিজের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করা, আরও উঁচুতে ওঠা। অবাক হয়ে দেখেন, বেশীরভাগ চিন্তাই তিনি নিজেকে নিয়ে করছেন। এটা তাঁর পক্ষে অশোভন। একজন মহান নেতা নিজেকে নিয়ে চিন্তা করবেন না; করবেন মানুষকে নিয়ে। তারপরও চিন্তা করতে গেলে দেখা যায়, নিজেকে নিয়েই চিন্তা এসে পড়ে।

কে জানে, এটাই হয়তো মানুষের স্বভাব; নিজেকে নিয়ে আগে চিন্তা করা। হয়তো তার ভেতরে ব্যাপারটা ঠিক করে দেয়া হয়েছে, সে সবচেয়ে গুরুত্ব দেবে নিজের অস্তিত্বের বিষয়ে। হঠাৎ তাঁর চোখ চলে যায় গাড়ির উইন্ডশিল্ডের দিকে। পুরু কাঁচের কোণায় কালো অক্ষরে খুব ছোট ছোট করে লেখা আছে, “বুলেটপ্রুফ”। নেতার মুখে একটা খুব মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।

তাঁর মনে পড়ে রাজপথের ঐ লোকগুলোর কথা। এই সাড়ে তিন মিলিমিটার পুরু উইন্ডশিল্ডটা তাঁকে শুধু বুলেটই নয়, আরও কত কিছু থেকেই না আলাদা করে রেখেছে। (গল্পটি কাল্পনিক। বিনীত – মোহাম্মদ ইসহাক খান) (১৩ জুলাই, ২০১৩) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।