আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ১০ লাখ টাকা নেন বিচারপতি খায়রুল হক

আমি ভীড়ে মিশে থাকা তোমাদেরই একজন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিমকোর্ট শাখায় বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এ টাকা জমা হয়। তখন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার দিনেই তিনি আবার ৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২১ জুন শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রায় দেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।

রায়ে বলা হয়—জিয়া নয়, শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। এই রায়ের কয়েক দিন পর একজন তরুণ সংসদ সদস্য ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী চেকটি বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের কাছে তার দফতরে পৌঁছে দেন বলে জানা গেছে। চেকটি পাওয়ার পর তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার জন্য দিলে সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেকের মাধ্যমে টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা দিলে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিচারপতি এবিএম খায়রুল চেক নেয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেননি, আবার অস্বীকারও করেননি। কৌশলে জবাব দিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসকেই জিজ্ঞাসা করুন।

আমাকে অ্যাম্বারাস করছেন কেন। ’ গতকাল প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পরিচালক (ত্রাণ) মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অ্যাসাইনমেন্ট অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ’ অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার মনোজ কান্তি বড়ালের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, আমাদের এখানে একটা রিপোর্ট এসেছে ২০০৯ সালে আপনার কাছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার টাকার একটি চেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এসেছিল।

জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রীর ওখানেই জিজ্ঞাসা করেন, আমাকে কেন খামোখা অ্যাম্বারাস করছেন। ’ তখন বলা হয়েছিল, অভিযোগ তো মিথ্যাও হতে পারে স্যার, আপনার কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে নিতে চাচ্ছি। জবাবে আবারও তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ওনাদের ওখানেই জিজ্ঞাসা করেন, ডোন্ট অ্যাম্বারাস মি। ’ আমরা তো ওনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো স্যার, আপনার এখানে যেহেতু নাম এসেছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাচ্ছিলাম। জবাবে তখনও তিনি বলেন, ‘ওনাদের ওখানেই বরং জিজ্ঞাসা করেন, আমি রিটায়ার করে গেছি, প্লিজ ফর গড সেভ, লিভ মি এলোন।

। ’ ঠিক আছে স্যার, এরকম কোনো টাকা ২০০৯ সালের জুলাই মাসে আপনি নিয়েছিলেন কিনা। তখন জবাব না দিয়ে শুধু, ‘আমি ছাড়ি ভাই’ বলে টেলিফোন রেখে দেন। অনুসন্ধানে সোনালী ব্যাংক সুপ্রিমকোর্ট শাখায় বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের হিসাবে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই অ্যাকাউন্ট পে চেকের ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা ট্রান্সপারের মাধ্যমে জমা হয়েছে। সেদিনই আবার নগদ উত্তোলন করা হয়েছে ৯ লাখ টাকা।

এর পরের দিন অর্থাত্ ২৮ জুলাই নগদ ২০ হাজার টাকা নগদ উঠানো হয়েছে। এবং একই দিন অপর একটি অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা তার হিসাব থেকে বিয়োগ হয়েছে। গতকাল আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহফিল থেকে আদৌ কোনো টাকা নিয়েছেন কিনা বা নিয়ে থাকলেও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সচিব, বিচারক ও বিচারপতি অসুস্থতার কারণে এবং ব্যক্তিগত সমস্যায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অনুদান নেয়ার রেওয়াজ রয়েছে।

’ বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক হাইকোর্ট বিভাগে ও আপিল বিভাগে থাকাকালীন অনেক রায় দিয়ে আলোচিত হয়েছেন। পুরনো ঢাকার ওয়াইজঘাটে মুন সিনেমা হলের মালিকানার দাবি নিয়ে দায়ের করা একটি মামলাকে কেন্দ্র করে তিনি পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংশোধিত সংবিধানকে তিনি অবৈধ ঘোষণা করেন। আবার পঞ্চম সংশোধনীর নিজের পছন্দমত কিছু ধারাকে বৈধতাও দেন। এছাড়াও তিনি হাইকোর্ট বিভাগে থাকাকালীন শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রায় দিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন।

অনেক রাজনৈতিক বিষয়কে আদালতের ঘাড়ে টেনে নেয়া হয়। আপিল বিভাগেও তিনি অনেক রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে দায়ের করা লিভ টু আপিল না শুনেই তিনি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন। প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তিনিই সর্বপ্রথম সুপ্রিমকোর্টে প্রধান বিচারপতির দফতরে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি স্থাপন করেন। এর আগে সুপ্রিমকোর্টে প্রধান বিচারপতির দফতরে কখনও কোনো রাজনৈতিক নেতার ছবি টাঙানো হয়নি।

সর্বশেষ বিদায়ের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তার রায়ের পর দেশে আবার রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.