আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রঃপ্রশ্ন কি তবে জাতীয় মর্যাদার?

যুদ্ধে আছি!! একটা বিশেষ প্রয়োজনে বাংলা নিউজের একটা স্পেসিফিক সেকশনে ঘুরাঘুরি করছিলাম । তখনই নিউজটা চোখে পরলো । নভেম্বর ২ , ২০১১ তে আসা ছোট একটা নিউজ । রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের মান বাড়াবে: ইয়াফেস ওসমান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পর বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে। ’ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে বলেও মনে করছেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করার জন্য। আমরা আশা করছি ২০১৩ সালের প্রথম দিকে এর কাজ শুরু করা হবে। কাজ শুরুর দিন থেকে ৫ বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাবে এই কেন্দ্রটি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে মোট দুটি ইউনিট থাকবে। এর একেকটি ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপাদন করবে বলে জানান ইয়াফেস।

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের মান বাড়াবে: ইয়াফেস ওসমান নিঃসন্দেহে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থাকা যে কোন দেশের জন্য সম্মানের বিষয় । প্রযুক্তি গত দিক দিয়ে দেশের অগ্রগতি বিচারের একটা মাপকাঠি হিসেবেও একে কোন কোন ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় । জেনে রাখা ভালো যে এই মুহুর্তে ৩০টি দেশে নিউক্লিয়ার প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে । তবে এই ৩০ টি দেশের মাঝে মাত্র ৩টি দেশ (ফ্রান্স,বেলজিয়াম এবং স্লোভাকিয়া) বিদ্যুতের প্রাথমিক উৎস হিসেবে নিউক্লিয়ার প্লান্টগুলো কে ব্যবহার করছে । এই মুহুর্তে ১৫টি দেশে ৬৮ টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মানাধীন অবস্থায় আছে ।

মিঃ উইকি পিডিয়া আমাদের জানাচ্ছেন জুন ২০১১ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া , অস্ট্রিয়া , গ্রীস , ইতালি , লাটভিয়া ,পর্তুগাল , নরওয়ে , নিউজিল্যান্ড ও মালটা নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিরোধীতা করে আসছে । বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা পূরণ করার জন্য নিঃসন্দেহে নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট একটা লোভনীয় সমাধান । কিন্তু বাংলাদেশে প্রস্তাবিত নিউক্লিয়ার প্লান্টের উপযোগিতা বিচার করার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৯৬২ সালে । রূপপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রথম প্রস্তাব টি করা হয় ১৯৬২ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ৫০ বছর আগে । মূলতো প্রস্তাব টি ছিলো একটা পলিটিক্যাল আইওয়াশ ।

ওই সময় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ফলাফল হিসেবে পরিবেশের উপর কি প্রভাব পরতে পারে তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি এমন কি এই প্রজেক্টের ইকোনোমিক্যাল ফিজিবিলিটি নিয়েও আলোচনা করা হয় নি । মুলতো নানা বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকা বাংগালীদের শান্ত করতেই এটা একটা ছেলে ভুলানো প্রজেক্ট ছিলো । তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনা ছিলো সেখানে ১০ মেগাওয়াটের একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার । তো সেই একই স্থানে বর্তমান সরকার একটি নয় দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০ মেগা ওয়াট!অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থেই এটা পুর্ববর্তী প্রজেক্টের ২০০ গুণ! সমস্যা সেটা না ।

সমস্যাটা হচ্ছে ১৯৭০ সালে প্রস্তাবিত জায়গা টি থেকে ৪০ কিমি উজানে আমাদের "বন্ধু" রাষ্ট্র ভারত ফারাক্কা বাধ নামে একটা বাধ নির্মাণ করেছে । এই বাধের মাধ্যমে প্রায় ৭৫% পানি তারা টেনে নিয়ে যাচ্ছে । ফলাফল সরূপ পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা দের প্রাত্যহিক প্রয়োজনের পানিই সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পরেছে সেখানে নিউক্লিয়ার প্লান্ট স্থাপন করে তার ব্যবস্থাপনায় বিপুল পরিমাণ পানি সরবরাহ করার চিন্তাটা কি একটু প্রশ্নবিদ্ধ না? এবার আসুন খরচের ব্যপারে চোখ বুলাই । পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র টি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান ফেডারেশনের দ্য স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কপোরেশন ( রোসাটম) রোসাটম এ যাবত ২৯ টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিজাইন করেছে। তো বুঝাই যাচ্ছে এক্ষেত্রে তারা যথেষ্ট এক্সপেরিয়েন্সের অধিকারী।

তো বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে রোসাটম মাত্র ২০০০ মিলিয়ন ডলার খরচে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করে দিচ্ছে । রোসাটম এই বিষয়ে কোন মন্তব্য না করলেও জানা গেছে রাশিয়া ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে দিতে রাজি আছে যা মূলতো এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই , স্থানীয় লোকবলকে প্রশিক্ষিত করা সহ অন্যন্য কাজের জন্য ব্যয় হবে । তাহলে বাকি থাকলো ১৫০০ মিলিয়ন ডলার । ১৫০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব কতটুকু বাস্তব সম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে কারণ এই একই ধরণের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চীনে তূলনা মূলক ভাবে সস্তা শ্রম এবং স্থানীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরী করতে খরচ হয়েছে ৪৫০০ মিলিয়ন ডলার!!!!!! এবার আসুন ঋণ পরিশোধ এর বিষয়ে । সুদের হার বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই বলা হয় নি কিন্তু সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য যে ধারণা পাওয়া গেছে তা অনুযায়ী সুদের হার হচ্ছে LIBOR (London Inter-Bank Offered Rate) 1 per cent (লিবর হচ্ছে একটা বিশেষ ইন্টারেষ্ট রেট যে রেট অনুযায়ী লন্ডনের কোন ব্যংক অন্য একটা ব্যংক থেকে ফান্ড ধার হিসেবে নিতে পারে ।

এটা দৈনিক ভিত্তিতে ব্রিটিষ ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন কতৃক নির্ধারণ করা হয় । ) চুক্তি সম্পাদনের সময় এই রেট ছিলো ১%(যা বৈশ্বিক মন্দার কারণে গত ৩০০ বছরের মাঝে সর্বনিম্ন) অর্থাৎ এই মুহুর্তে যদি আমি ঋণ শোধ করতে যাই তা হলে ২% সুদ দিতে হবে । হিসাব করলে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রথম বছরের শুধু মাত্র সুদই আসে ৭০ কোটি টাকা । খুশি হবার কিছু নেই এটা শুধু প্রথম বছরের হিসাব । আর আসল তো আছেই ।

ধরা যাক প্রজেক্টের মেয়াদ ছয় বছর সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কে বছরে ২৮০ কোটি টাকা সুদ টানতে হবে। এখন যদি লিবর রেট বেড়ে যায়?ধরুন লিবর রেট বেড়ে ৩% হলো?সে ক্ষেত্রে বাৎসরিক সুদের পরিমাণ হবে ৫৬০ কোটি টাকা ! লক্ষ্য করুন এটা খালি সার্ভিস ইন্টারেস্টের হিসাব । যদি আপনি ক্যাপিটাল আর ইন্টারেস্ট মিলিয়ে হিসাব করেন তবে "গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার"কে বছরে ১৪০০ কোটি টাকা করে পরবর্তী ৩০ বছর ঋণ শোধ করতে হবে । এবং এই ঋণ শোধ করতে আপনি বাধ্য!অর্থাৎ আপনার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নষ্ট হয়ে গেলে বা কোন কারণে বন্ধ থাকলেও আপনাকে এই ঋণ শোধ করতে হবে । এই ঋণের হিসাব শুধু মাত্র বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত ২০০০ মিলিয়ন ডলারের জন্য ।

যদি সত্যিকার অর্থেই ৪৫০০ মিলিয়ন ডলার লাগে? ভাবতেও ভয় লাগছে!! বিদ্যা অর্জনের জন্য ব্যবহৃত শিক্ষক ১ শিক্ষক ২ লেখক কে ফেসবুকে গালাগালি করতে চাইলেঃফেসবুক লিঙ্ক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।