আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাবনার রূপপুরে ১,০০০ মেগাওয়টের দুটি পারমাণবিক প্রকল্প আর কিছু প্রশ্ন ???

অবুঝের মত কিছু শব্দ আসে, কালবৈশাখী ঝড়ের মত হৃদয়ে ঢেউ তোলে, তারপর অদৃশ্য হয়ে যায়......আর আমি তাদের খুঁজতে থাকি, হৃদয়ের পরম মমতায়.....! খুঁজে পাইনা জন্য বেঁচে থাকা, পেলে হয়ত মরে যেতাম....!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২ অক্টোবর বুধবার পাবনার রূপপুরে ১,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দুইটি চুল্লিসম্পন্ন পারমাণবিক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে বলেছেন, 'এই প্রকল্প জাতির স্বপ্নপূরণ করবে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা চিন্তাভাবনা, প্রকল্প ও পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতে চালু হওয়া এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশে নতুন যুগের সুচনা করবে। আজ নিঃসন্দেহে জনগণের জন্য একটি আনন্দের দিন। ’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ প্রসঙ্গে যে প্রশ্নগুলো রাখা যেতে পারে তা হচ্ছে: (১) সারা বিশ্বের, বিশেষত জাপান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোর জনগণ পারমাণবিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন কেন? তারা কি কোনো কিছু না জেনে-শুনেই, কেবল হুজুগে মেতে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিরোধিতা করছেন? (২) জাপানের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পারমাণবিক উৎস থেকে পূরণ হয়। তাদের দেশে মাথাপিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরিমাণ আমাদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

এই যখন অবস্থা তখন জাপান তার ৫০টি পারমাণবিক চুল্লির প্রত্যেকটি বন্ধ করে দিল কেন? (৩) রূপপুরের পারমাণবিক প্রকল্পে কুল্যান্ট হিসেবে কী ব্যবহৃত হবে? পদ্মার পানি? সেই পানি কি পর্যাপ্ত অথবা তার কাছাকাছি পরিমাণও আছে? ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের কথাও শোনা যাচ্ছে। হোক পদ্মার পানি কিংবা ভূ-গর্ভের, contamination রোধ করা যাবে কীভাবে? এই পানি পরিশুদ্ধকরণের প্রযুক্তিটা কী? এয়ার কুলিং সিস্টেমের কথাও শোনা যাচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন কুলিং টাওয়ার স্থাপন। কিন্তু তার জন্য যে অতিরিক্ত ব্যয় হবে তার হিসাব কি প্রকল্পের সামগ্রিক বিবেচনায় আনা হয়েছে? (৪) বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নানা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। একবার বলা হচ্ছে এই পারমাণবিক বর্জ্য পাহাড়ে ডাম্প করা হবে।

আবার শোনা যাচ্ছে রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। পারমাণবিক বর্জ্য পরিশোধনের প্রযুক্তি রাশিয়ার নেই। এই বর্জ্য কোনো নিরীহ বিষয়ও নয়। বর্জ্য থেকে যে তেজস্ক্রিয়তার সৃষ্টি হয় তার প্রতিক্রিয়া মানবদেহ থেকে শুরু করে প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। আসলে এই বর্জ্যের কী হবে।

(৫) যেই ভিভিইআর-১০০০ প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর বাংলাদেশে নিয়ে আসা হচ্ছে সেটা ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে বাতিল বলে ঘোষিত হয়েছে অনেক আগেই। এটা অত্যন্ত পুরোনো এবং অনিরাপদ প্রযুক্তির একটি রিঅ্যাক্টর। ভারতের তামিলনাড়ুর কুদাঙ্কুলামে এই রিঅ্যাক্টরই রাশিয়া ব্যবহার করেছিল। সেখানে চারটি রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল-এ ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এটা নিয়ে হৈচৈও হচ্ছে এখন।

ভারতে বিজ্ঞানী এবং পরিদর্শকদের একটি দল এই ত্রুটি শনাক্ত করেছেন। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে নাকি এমন ত্রুটি শনাক্তকরণের মতো কোনো বিশেষজ্ঞও নেই। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে এই একই ত্রুটিপূর্ণ, বাতিল ও অনিরাপদ প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর ব্যবহার করে কতোটা ত্রুটিমুক্ত, আধুনিক এবং নিরাপদ পারমাণবিক প্রকল্প তৈরি হওয়া সম্ভব? (৬) গত ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমায় ভূমিকম্প এবং সুনামির আঘাতের ফলে শীতলীকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে এবং ব্যাকআপ সিস্টেম কাজ না করায় এই পারমাণবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। ভিভিইআর-১০০০ রিঅ্যাক্টরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানে শীতলীকরণের মাত্রার সামান্য হেরফেরেই বিপর্যয় ঘটতে পারে। জাপানের মতো দেশ বিপর্যয় রোধ করতে পারে নি।

আর যে দেশে ভূমিকম্প না হতেই বিল্ডিং ধসে পড়ে, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে মানুষ মারা যায় সেই দেশ সম্ভাব্য বিপর্যয় সামাল দেবে কীভাবে? (৭) রূপপুরকে ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এই প্রকল্পে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের সাথে জড়িত কোম্পানি রাশিয়ার জেএসসি অ্যাটম অ্যানার্গোপ্রোকট। তারা বলছে, রূপপুরের ভূতাত্ত্বিক গঠন বেশ জটিল। তাহলে সরকারের নিরাপত্তার আশ্বাসবাণীর কী হবে? কিন্তু শুধু রূপপুর তো নয়, সারা বাংলাদেশই বর্তমানে ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশের বিশেষজ্ঞগণ সম্ভাব্য ভূমিকম্পে শহরাঞ্চলের সাধারণ অট্টালিকা বিধ্বস্ত হয়ে কী পরিমাণ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে সেটা নিয়ে চিন্তিত। এই পর্যায়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ওপর ভূমিকম্পের প্রভাব কী হবে এবং তার ফলে মানুষ-প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর তার আঘাত কী পরিমাণ আসবে সেটা নিয়ে দায়িত্বশীল মহল কোনো চিন্তাভাবনা করেছে কি? (৮) ১৫,০০০ কোটি টাকায় একেকটি ১,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ??? বিশ্বের কোথাও কি তা আছে? খরচ সর্বনিম্ন ধরলেও বর্তমান সময়ে ২৫,০০০ কোটি টাকার নিচে একটা প্ল্যান্ট বসানোর কথা ভাবা কি সম্ভব? তাহলে ১৫,০০০ কোটি টাকায় যে চুল্লি স্থাপনের কথা বলা হচ্ছে তা আবার আধুনিক, নিরাপদ, রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্নও হবে? এ কি আলাদিনের চেরাগ? অন্যদিকে রাশিয়া বলছে প্রকল্প শুরু হলে সামগ্রিক ব্যয় কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।

তাহলে? (৯) রাশিয়ার কাছ থেকে ৪,০০০ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে প্রকল্প নির্মাণের পূর্বে সমীক্ষা চালানো এবং অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই কাজে ১০০-১৫০, সর্বোচ্চ ধরলেও ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। সেখানে এর জন্য ৪,০০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হলো কেন? কীসের যেন গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। (১০) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে স্থাপিত তথ্যকেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে গত ১ অক্টোবর। কিন্তু এখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে কিছু সাধারণ ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকলেও রূপপুর নিয়ে কোনো তথ্য থাকছে না।

সরকার কি জনগণকে প্রকল্প সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানাতে চায় না? মোট কথা, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আগে ওপরের ১০টি প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর জনগণ যখন পারমাণবিক বিপদ থেকে নিস্তার লাভের জন্য "No Nukes" লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন তখন কীসের আশায় বাংলাদেশে এই বিপদকে যেচে নিয়ে আসা হচ্ছে সে বিষয়ে জনগণকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.