আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞান এবং কারিগরী ক্ষেত্রে মধ্যযুগীয় মুসলিম অবদান।

প্রবাসী মধ্যযুগে ইউরোপ যখন জ্ঞান বিজ্ঞানে ছিল পশ্চাদপদ, তখন মুসলিম সাম্রাজ্য বিশেষ করে স্পেন ছিল জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতির শিখরে। স্থাপত্য, অঙ্কশ্বাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান, দর্শন প্রভৃতি ক্ষেত্রে তারা ছিল অগ্রবর্তী। বিজ্ঞান চর্চাতে তারা তখন ছিল নেতৃত্বে। নিজস্ব আবিস্কারের পাশাপাশি, গ্রীক, ফার্সী, ভারতীয় এবং চৈনিক বিজ্ঞানের এক অভুতপুর্ব সমন্নয় ঘটেছিল ঐ সম্যের মুসলিম বিশ্বে। বিভিন্ন জ্ঞানবিজ্ঞানের পরিমার্জন, বিশ্লেষন, পরিবর্ধন মুসলিম স্পেন হয়ে তা এক সময় পাশ্চাত্যে পৌছে।

গ্রীক জ্ঞান বিজ্ঞান যেমন, এরিস্টটলের দর্শন, টলেমীর জ্যামিতি, হিপ্পোক্র্যাটিসের চিকিৎসাবিজ্ঞান ইত্যাদি ইউরোপে হারাতে বসেছিল। রোম সম্রাট কনস্ট্যান্টাইন খৃস্টান ধর্মকে রাস্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে চালু করেন। অতঃপর গ্রীক জ্ঞান বিজ্ঞানকে পৌত্তলিক বিবেচনায় ধ্বংশ করার প্রয়াস পান। তৎকালীন বিশ্বে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে অবস্থিত বৃহত্তম গ্রন্থাগার আগুনে পুড়ে যায়, আলেকজান্দ্রিয়ার যাদুঘর খৃষ্টান দাঙ্গাকারীরা ধ্বংশ করে দেয়। প্লেটোর বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গ্রীক মনিষীদের অনেকে স্থান খুজে পান পারস্যের “যুন্ডিশাপুর” বিশ্ববিদ্যালয়ে। পারস্য এবং মিশর মুসলিম অধিকারে আসার পর গ্রীক জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হন মুসলিম মনিষীরা। হিপ্পোক্রাটিস, গ্যালেন প্রভৃতি গ্রীক মনিষীদের জ্ঞানকে পুনরুজ্জিবিত করেন মুসলিম পন্ডিতেরা। জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার এই মুসলিম সময়কালকে ঐতিহাসিকেরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। ৯ম এবং ১০ শতাব্দীতে, বাগদাদের আব্বাসীয় সময়কাল এবং দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীর স্পেন।

মুসলিম পন্ডিতগন গ্রীক জ্ঞান বিজ্ঞানকে আরবীতে অনুবাদ করেন এবং তা বহুলাংশে পরিবর্ধন ঘটান। এরিস্টটলের দর্শনশাস্ত্র আরবীতে অনুদিত হয় এবং তা বাগদাদে উৎকর্ষ লাভ করে। মধ্যযুগীয় দর্শনশাস্ত্রে ইবনে সিনা, ইবনে রুশদ ছিলেন কিংবদন্তী। পুর্বসুরী আল ফারাবী এরিস্টটলের পদার্থবিদ্যার উপর বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা করেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিম অবদানঃ- অংকশাস্ত্রঃ-মধ্যযুগে ইউরোপে ব্যবহৃত হত রোমান সংখ্যা, যেমন পাচঁকে লেখা হত V এবং দশকে লেখা হত X.এই সংখ্যা গুলো যোগ বিয়োগ এবং লেখার জন্য ছিল অনুপযোগী।

আজ ইঙ্গরেজীতে ব্যবহৃত সংখ্যা মালা হল আরবী থেকে নেওয়া। আরবী সংখ্যা পদ্ধতি যা আমরা ব্যবহার করছি তা ভারত থেকে পারস্য হয়ে আরবীতে আসে। আব্বাসীয় খলিফাদের সময় একজন ভারতীয় পন্ডিত ভারতীয় সংখ্যা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আসেন বাগদাদে। ভারতীয় সংখ্যার অসুবিধা ছিল তা লেখা হত উলটোভাবে, যেমন বত্রিশকে লেখা হত ২৩, মুসলিম বাগদাদ থেকে তা স্পেন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ এবং সর্বোত্র। আরবী সংখ্যা ব্যবসা বানিজ্য, পাটিগনিত এলজেব্রা সবখানেই ব্যাপক ভাবে ব্যবহার শুরু হয় এবং আজ আমরা ইংরাজীতে যে সংখ্যা ব্যবহার করছি তা আরবী সংখ্যা।

মোহাম্মদ বিন মুসা আল খাওয়ারিজমি কে আধুনিক এলজেব্রার স্থপতি বিবেচনা করা হয়ে থাকে তার লেখা “আল কিতাব আল মুক্তাসার ফি হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবিলা” বই থেকে এলজেব্রা কথা টার উতপত্তি। দশমিক পদ্ধতি এবং ত্রিকোনমিতিতেও তার অবদান রয়েছে। ৭৮০ খৃঃ পারস্য দেশে জন্ম নেওয়া এই পন্ডিত মনিষীর ভুগোল, পাটিগনিত, জ্যোতির্বিদ্যাতেও অনেক অবদান আছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানঃ-দুটোকারনে মুসল্মানদের মধ্যে জ্যোতির্বিদ্যা প্রসার লাভ করে। ১)চান্দ্রমাস যার ভিত্তিতে রমজানের হিসেব করা হয়, ২)কেবলার দিক নির্নয়।

মধ্যযুগীয় মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন নগরী যেমন বাগদাদ, কর্ডোবা,সমরখন্দ,মাগরাহা, হামাদান প্রভৃতি স্থানে গড়ে ওঠে মানমন্দির। উল্যেখযোগ্য আবসিকার হল “এস্ট্রোল্যাব” যন্ত্র। দুরবীন আবিস্কারের আগ পর্যন্ত উচ্চতা মাপতে, সময় নির্ধারন, সুর্যদয়, সুর্যাস্ত, আকাশে গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান নির্নয় সমুদ্র যাত্রাতে দিক নির্দেশনা ইত্যাদি কাজে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হত। এমন ই এক এস্ট্রোল্যাব স্পেন থেকে পোল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয় যা পোলিশ জ্যোতির্বিদ, কোপার্নিকাস ব্যবহার করেন। ওমর খৈয়াম তার রুবাইয়াত কাব্যের জন্যে বিখ্যাত হলেও তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী।

তার উদ্ভাবিত “জালালী” ক্যালেন্ডার উল্যেখযোগ্য অবদান যা ৩৩৩০ বছরে মাত্র এক দিন ভুল গননা করে। রসায়ন এবং চিকিৎসা শাস্ত্রঃ-খৃস্টীয় ৯০০ থেকে ১২০০ শতাব্দী পর্যন্ত রসায়ন শাস্ত্র এবং চিকিতসা শাস্ত্রে মুসলিম মনিষীরা উল্যেখযোগ্য অবদান রাখেন। আধুনিক রসায়নের আগেভাগে প্রচলিত আল কেমীতে উল্যেখযোগ্য অবদান রাখেন মুসলিম বিজ্ঞানীরা। খোরাসানে জন্ম নেওয়া জাবির ইবন হাইয়ান ছিলেন খলিফা হারুন-আল রশিদের সময়কার একজন বিজ্ঞানী, রসায়নে তার মৌলিক উদ্ভাবন রয়েছে। এ ছাড়াও জাফর আল সাদিক,আবু বাকার আল রাজী, ধু আল নুন, এবং আরো অনেকে ছিলেন রসায়ন শাস্ত্রের পথিকৃত।

আবু আলি আল-হুসাইন ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সিনাঃ- আবু সিনা হিসেবেই বেশী পরিচিত। বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক আবু সিনা ৯৮০ খৃঃ বোখারাতে জন্ম নেন। তার লেখা “আল কানুন ফি আল-তিব”(চিকিৎসা নিয়মাবলী) ৬০০ বছরের ও অধিককাল ব্যাপী ইউরোপে ব্যাবহৃত হত। নতুন উদ্ভাবিত ঔষধের কার্যকারিতা পরীক্ষা পদ্ধতির প্রবক্তা আবু সিনা। চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়াও দর্শন, অংকশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা,রসায়ন শ্বাস্ত্রে ও তার অবদান ছিল।

২০০ টির ও বেশী গ্রন্থের প্রনেতা আবু সিনা। উপসংহারঃ- মধ্যযুগীয় জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলিম মনিষীদের যে প্রভূত অবদান ছিল তা অনস্বীকার্য্য। বিজ্ঞান তাতে সম্বৃদ্ধ হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.