আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়াইম্যাক্স (WiMAX) কী ও কিভাবে কাজ করে

কিছুদিন আগে "ওয়াইফাই"র উপর একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। আজ ওয়াইম্যাক্স নিয়ে সংক্ষেপে ও সহজভাবে আলোচনা করব। লেখার মূল উদ্দেশ্য ওয়াইম্যাক্স সম্পর্কে একটা বেসিক ধারণা দেয়া। তাই জটিল টেকনিক্যাল শব্দ বা প্রসেস যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যাব। ওয়াইম্যাক্স কী প্রথমে দেখা যাক ইন্টারনেট কানেকশনের বর্তমান বিকল্পগুলোর সীমাবদ্ধতা বা নেতিবাচক দিকগুলো।

Dial-up access-এ সাধারণত স্পীড স্লো হয়, সবসময় আনলাইনে থাকা যায় না। পিক আওয়ারে লাইন পাওয়া যায় না। টেলিফোন নেটওর্য়াক থেকে এই লাইন দেয়া হয়। মডেম বা DSL-র মাধ্যমে Broadband access সার্ভিস দেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে উচ্চ গতির Broadband access পেতে খরচ বেশী।

যে সব জায়গায় টেলিফোনের ল্যান্ড লাইন নেই সেখানে এধরনের সংযোগ সম্ভব নয়। এছাড়া মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক অর্থাৎ GSM প্রযুক্তি মূলতঃ তৈরি হয়েছিল টেলিফোনের জন্য, পরে কিছু টেকনিক্যাল অপশন যোগ করা হয়েছে যাতে ইন্টারনেট সার্ভিসও দেয়া যায়। ইন্টারনেটের ব্যবহার যে হারে বাড়ছে ভবিষ্যতে এই কমপাটিবল অপশন দিয়ে আর কাজ চলবে না। ব্যান্ডওয়াইথের সীমাবদ্ধতা ছাড়াও অন্যান্য টেকনিক্যাল কারণে GSM প্রযুক্তিতেও উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও মিডিয়াম স্পীডের সংযোগ দেওয়া যায়, কিন্তু খরচ পড়ে বেশী।

ওয়াইফাই (Wi-Fi) access হচ্ছে একটি সীমিত এলাকার (৩০ - ১৫০ মিটার) মধ্যে ওয়ারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সার্ভিস যেখানে ওয়াইফাই রয় টারের মাধ্যমে সীমিত কিছু গ্রাহককে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়। উপরোল্লিখিত সীমাবদ্ধতা ও সমস্যাগুলো দূর করে শহর, গ্রাম, বিচ্ছিন্ন জনপদ, দুর্গম এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজে ও কম খরচে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে 'সবখানে ও সব সময়' সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করার উদ্দ্যেশ্যে সৃষ্ট উচ্চ গতির ওয়ারলেস নেটওর্য়াকই হচ্ছে ওয়াইম্যাক্স (WiMAX), যার পুরো নাম "Worldwide Interoperability for Microwave Access. তারবিহীন নেটওর্য়াক ওয়াইম্যাক্স তথ্য প্রযুক্তির লোকের কাছে IEEE 802.16 নামেও পরিচিত। ওয়াইম্যাক্সের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ টাওয়ার ও রিসিভার। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাওয়ারের কভারেজ হবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (ব্যাসার্ধ)। এই টাওয়ারগুলো তারের মাধ্যমে সরাসরি হাই ব্যান্ডওয়াইথ ইন্টারনেট ব্যাকবোনের সাথে সংযুক্ত থাকে (উপরের চিত্রে A ও B টাওয়ার দ্রষ্টব্য)।

আবার দু'টি টাওয়ারের মধ্যে তারবিহীন (মাইক্রোওয়ভ লিঙ্ক) সংযোগও থাকতে পারে (উপরের চিত্রে B ও C টাওয়ার দ্রষ্টব্য)। এইভাবে একাধিক টাওয়ার দিয়ে তার ছাড়াই শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত কভারেজ করা যায়। ওয়াইম্যাক্স তারবিহীন সংযোগ সার্ভিস আবার দু'ধরনের হতে পারে। Non-line-of-sight: এই সার্ভিসে ব্যবহার করা হবে lower frequency range (2 GHz to 22 Ghz)। Lower-wavelength transmissions সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অলিগলি ঘুরে ওয়াইম্যাক্স রিসিভারে (এন্টিনা) পৌঁছে যাবে।

উপরের ছবিতে টাওয়ার C থেকে পাশের বিল্ডিংয়ে ও টাওয়ার A থেকে রেসিডেন্টসিয়াল এলাকা ও ল্যাপটপে Non-line-of-sight পদ্ধতিতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। Line-of-sight: এই সার্ভিসে ব্যবহার করা হবে higher frequency range (66 Ghz)। Higher-wavelength transmissions কোন ত্রুটি ছাড়া একসাথে বেশী ডাটা প্রেরণ করতে সম্ভব এবং ব্যান্ডওয়াইথও বেশি হয়। এধরনের সার্ভিসে টাওয়ার ও এন্টিনার মাঝখানে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারবে না। অর্থাৎ কোন উঁচু ভবনের ছাদ থেকে যদি ওয়াইম্যাক্স টাওয়ার সরাসরি দেখা যায় তবেই ছাদে এন্টিনা লাগিয়ে এই উচ্চ গতির সার্ভিস নেয়া যাবে।

টাওয়ার B থেকে পাশের সুউচ্চ ভবনে line-of-sight পদ্ধতিতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। যদিও ওয়াইম্যাক্স ও ওয়াইফাই একই পর্যায়ের প্রযুক্তি । দুটোতে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। ওয়াইফাইয়ের কভারেজ ৩০ থেকে ১০০ মিটার। ওয়াইম্যাক্সের কভারেজ প্রায় ৫০ কিলোমিটার।

ওয়াইম্যাক্স ওয়াইফাইয়ের চেয়ে অনেক বেশি ইউজার একসাথে ব্যবহার করতে পারবে। ওয়াইম্যাক্সের গতিও ওয়াইফাইয়ের চেয়ে অনেক বেশি। ওয়াইম্যাক্স ইউজার ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করতে প্রয়োজন হবে বিশেষ বক্স (রিসিভার+এন্টিনা) ও ল্যাপটপের জন্য বিশেষ PCMCIA কার্ড। এগুলোর বিকল্প হিসাবে WiMAX USB Wireless MODEM ব্যবহার করা যেতে পারে তবে তা বাজারে এখনো আসে নি। ওয়াইম্যাক্স তুলনামুলকভাবে নতুন প্রযুক্তি।

সার্ভিসের অপশনগুলো বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন রকম। বাংলাদেশের ব্যাপারে ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস শুরু না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। বর্ণনার সুবিধার্থে আমি এখানে ভারতের রিলায়েন্স কোম্পানির মডেলটি তুলে ধরলাম (উপরের চিত্রটি দ্রষ্টব্য)। যদি কোনো বাসাবাড়িতে একটি কমপিউটার থাকে তবে এন্টিনা থেকে মডেম, মডেম থেকে কমপিউটার সংযোগ। যদি একাধিক কমপিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ নিতে হয় তবে একটি রয়টারের প্রয়োজন হবে।

রয়টার থেকে তারবিহীন সংযোগ নিতে হলে একটি ওয়ারলেস রউটার ও প্রতিটি কমপিউটারের জন্য একটি করে এডাপটার প্রয়োজন হবে। তথ্য প্রযুক্তি (IT) বিজ্ঞানের একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল শাখা। ওয়াইম্যাক্স এই শাখার একটি নতুন সংযোজন। ওয়াইম্যাক্স নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসে নাই। শুরুটা একটু এলোমেলো হলেও আশা করি এক সময় একটা স্টান্ডার্ড পর্যায়ে চলে আসবে।

ভারতের বাঙ্গালোরে কিছু উৎসাহী তরুন ওয়াইম্যাক্স এন্টিনার পজিশন পরিবর্তন করে দেখছে ইন্টারনেটের স্পীড বাড়ানো যায় কিনা! বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স গত বছর সেপ্টেম্বরে বিটিআরসি উন্মুক্ত নিলামে চারটি অপারেটরকে ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নিলামে বাংলা লায়ন সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা নিলাম ডাক দেয়। অন্য অপারেটরদেরও এই দামে লাইসেন্স নিতে হয়। বাংলা লায়নের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালের জুনে ওয়াইম্যাক্স চালুর কথা বললেও জটিলতার কারণে তা হচ্ছে না। ৩১শে মে বাংলা লায়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, জুনে শুরু করার কথা থাকলেও এখনই গ্রাহকদের সেবা দেয়ার পর্যায়ে তাঁরা আসতে পারে নি।

বাংলালায়ন এর নূন্যতম ব্যান্ডউইথ ১২৮ কিলোবিট/সেকেন্ড হবে। প্রাথমিক অবস্থায় হোম ইউজারদের জন্য মাসে ৬শ' টাকা, কর্পোরেট ইউজারদের জন্য সাড়ে ৫শ' টাকা, দৈনিক ভিত্তিতে ৪৫ টাকায় সারাদিনের সেবা দেয়া এবং শুধুমাত্র রাতে ব্যবহারের জন্য মাসে ৩শ' টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা লায়ন। (ইত্তেফাক, মে ৩১, ২০০৯) ২১ জুলাই, ২০০৯ মঙ্গলবার থেকে Augure Wireless Broadband Bangladesh Ltd. নামক ওয়ারলেস ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করেছে। রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে অজের ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ইন্টারনেট সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশ এইদিনে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ইন্টারনেট সেবার জগতে প্রবেশ করলো।

এর আগে গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর এক নিলামের মাধ্যমে বিটিআরসি চারটি কোম্পানিকে ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স দিলেও অজের-ই প্রথম অপারেটর হিসেবে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে গেল। নিলামে প্রথম স্থানে থাকা বাংলালায়ন খুব তাড়াতাড়ি পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করবে বলে জানা গেছে। তবে বাকি দুটি অপারেটর এখনো তাদের লাইসেন্স ফি’র ২১৫ কোটি টাকাই পরিশোধ করেনি। (ইত্তেফাক, জুলাই ২৩, ২০০৯) যারা ওয়াইম্যক্স আরো জানতে চান তাদের জন্য কিছু লিঙ্ক দেয়া হল: http://quantumwimax.com/ http://www.wimax.com ---------------------------------------------------- তথ্যসুত্র : ইন্টারনেট, HowStuffWorks, দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.