আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাপক নীলু-২



নীলু, আমাদের পাড়ায় ‘শক্তি সংঘ’ বলে একটা ক্লাব আছে। যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আমাদের পাড়ার আমার মতো পিচ্চি কাচ্চাদের খেলাধুলোর সরঞ্জাম বলতে ছিলো ক্লাবের বড় দলের ব্যবহার অনুপযোগী ফুটবল, ক্রিকেটবল, ব্যাট ইত্যাদি। তখনকার ছোট্ট মনের সবথেকে বড় চাওয়া ছিলো এক্কেবারে নতুন একটা ফুটবল বা এ জাতীয় কিছু। মনে হতো নতুন একটা ফুটবলের জন্য যেকোন কিছুই করতে পারি। কোন এক সন্ধ্যায় হঠাৎ আমার পিসী বেশ বড় সড় একটা ফুটবল এনে দিলে খুশির চোটে উঠোনই হয়ে উঠেছিলো বিরাট ফুটবল মাঠ।

আহারে, কী প্রবল ছিলো সেই খুশিগুলো! এরপর আরেকটু বড় হ’লে ক্রিকেট ব্যাটের আবদারে অস্থির করে তুলেছিলাম সারাবাড়ি। অবশেষে সেজোকাকুর নিজের হাতে বানানো ব্যাট নিয়ে মাঠে গিয়ে মাতব্বরি দিয়ে কী যে সুখ পেয়েছিলাম! এভাবে যতো বড় হয়েছি পর্যায়ক্রমিক ছোট ছোট প্রাপ্তিসুখে সিক্ত হয়েছি। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় নতুন সাইকেল পেয়ে একটানা পাঁচঘন্টা সাইকেল চালনা, কিংবা মোবাইল সেটের মালিক হ’য়ে আন্দাজে অচেনা অজানা নাম্বারে অন্যায় কল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো- কী যে অদ্ভুত সব আনন্দ! আবার প্রথম যেদিন কম্পিউটারে বাংলা লিখতে পেরেছিলাম সেদিনও নিজেকে রাজা মনে হয়েছিলো! তোকে ব’লে বোঝাতে পারবো না। আচ্ছা, যাদের শ শ কিংবা হাজার হাজার কোটি টাকা তারা কি এসব আনন্দ পায়? যাদের ক্ষুধা মেটানোর জন্য শেয়ার বাজারে কারসাজি করে ‘অঞ্জন দত্তের কাঞ্চনজঙ্ঘা গানের মতো একটু ভালো করে বাঁচা আর একটু বেশি রোজগার’র লোভের ফাঁদে পড়া লাখ লাখ ছাপোষা মানুষের স্বপ্নকে চিবিয়ে খেতে হয় তাদের প্রাপ্তির আনন্দগুলো কতো বড় হয় তা কি জানিস? তুই কি বলতে পারিস হাজার কোটি টাকা মানে কতো টাকা? আমার কাছে তো বলতে গেলে কখনো হাজার টাকাই থাকেনা! বেশ কয়েকদিন ধরে ল্যাপটপের খুব সাধ আমার- বাড়িতেও মাঝে মাঝে গুতোগুতি করছি। হয়তো পেয়েও যাবো কোন একদিন! আর না পেলেও সমস্যা নেই; কারণ আমি জানি, যতদিন আমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাওয়াগুলো থাকবে, কিংবা অন্যভাবে বললে আমার চাওয়াগুলো ক্ষুদ্র থাকবে ততোদিন আমি মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার সুখটুকু পাবো।

আমি দানব হতে চাইনা রে! জীবনে পেতে চাই বহুকিছুই, কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে, পরিপার্শ্বের মানুষগুলোর স্বপ্নগুলোকে পায়ের তলায় পিষে ফেলে, ক্রমাগত চতুর্পাশের জগতের সবাইকে রেসে হারিয়ে জিতে গিয়ে শেষমেষ একা একা ল্যাপ অব অনার চাইনা। আমি মানুষ থাকতে চাই- তোদের ভালোবেসে তোদেরও দু’চার ছটাক পেতে চাই। যাই হোক, এখন তো কৃষ্ণচূড়ার মৌসুম। কৃষ্ণচূড়ারা তো আর নষ্ট পৃথিবীর পঁচা মানুষগুলোর উপর রাগ করে থাকতে পারেনা, তাই প্রকৃতির নিয়মেই তারা আসে। তুই এ সুযোগ ছাড়িস্ না- দেখবি এ শহরেও কোথাও কোথাও ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়ার জঙ্গল।

যখন পথে চলবি তখন চোখ ভরে, মন ভরে নিয়ে নিস্। গায়ে বৃষ্টির ছাঁট, আর চোখে কৃষ্ণচূড়ার আলো...আমি নিশ্চিত, অস্থির বিচ্ছিরি এই সময়ও তোর ভালো লাগবে কিছুটা! ভালোবাসা। ইতি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.