আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিচিং ফাঁক!

কিছু বুললে তো বুলবে বুলছি....

চলে যাচ্ছি ১০ বছর পেছনে। এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন। বগুড়া ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের পরীক্ষার্থীদের সিট পড়েছে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুলে। যথাসময়ে উপস্থিত হলাম কেন্দ্রের সামনে। খানিকক্ষণ পর ভেতরে যেতে বলা হল আমাদের।

দুরুদুরু বুকে, গুটিগুটি পায়ে উঠে গেলাম দোতলায়। ২-৩ রুম পরেই আমাদের সিট যেখানে পড়েছে সেই রুম পেয়ে গেলাম। খুঁজে দেখি সিট একদম দেয়াল ঘেঁষে। ৮জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল ওই ব্যাচে (২০০১) মানবিক বিভাগের। তো যাহোক, আমরা যার যার রোল অনুযায়ী বসে পড়লাম।

এই ৮জনের মধ্যে ছেলে-মেয়ের সংখ্যা ছিল সমানুপাতিক। ওয়ার্নিং বেল তখনো পড়েনি। তাই 'জরুরী ত্যাগে'র পরীক্ষাপূর্ব পর্ব সম্পাদনের নিমিত্তে নিম্নতলায় অবস্থিত 'সম্প্রদান কারক' কক্ষপানে ধাবিত হলাম। গেলাম দলবেঁধে। কিন্তু কাউন্টারের অভাবে সবাই বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হল।

এরমধ্যে ওয়ার্নিং বেল পড়ে গেছে। ‘সম্প্রদান’ করতঃ প্যান্টের জিপার উত্তোলন করতে গেলে সেটা এত ‘সাঁই’ করে উঠে এল যে একেবারে সীমানা পেরিয়ে গেল। আর গেল তো গেল, যাবার সময় “পোস্ট অফিস”টাও ‘চিচিং ফাঁক’ করে দিয়ে গেল! এখন উপায়??? একটা সংক্ষিপ্ত ধ্যানে সমাধান পেয়ে গেলাম। শার্টের ইন খুলে টেনেটুনে সোজা করে পোস্ট অফিসের দরজার পর্দা করে দিলাম। তারপর সামলে-সুমলে ভোঁ দৌড়! ক্লাসে তখন সম্ভবতঃ খাতা দেয়া হচ্ছে।

বেঞ্চে বসে পর্দার ক্ষেত্রফল আরেকবার অ্যাডজাস্ট করে নিলাম। সে কাজটাও যথেষ্ট সূক্ষ্মভাবে করতে হল কারণ আমার ডান পাশেই উপবিষ্ট আমাদের অর্ধাঙ্গিনী জাতির একজন সম্মানিত সদস্য। যাই হউক, আর কোন আপদ-বিপদ ছাড়াই পরীক্ষা শুরু করে দিলাম। দিচ্ছি...দিচ্ছি...দিচ্ছি...... হুট করে পরিদর্শক পাশে এসে আমার খাতা চাইলেন। সই করবেন।

এগিয়ে দিলাম। পরীক্ষার হলের বড় বড় জানালার ফাঁক দিয়ে দুষ্টু হাওয়ার দল এসে কখন যে পোস্ট অফিসের পর্দার ক্ষেত্রফল পাল্টে দিয়েছে, বুত্তেই পারিনি! পারলাম তখন, যখন পরিদর্শক স্যার ছোট্ট ইশারা করে লাজুক কন্ঠে বললেন, “অ্যাই, তোমার ইয়ে ঠিক কর...!” স্যারের দিকে তাকিয়েছি, দেখি তিনি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম হাসছেন। আমিও একটা সূক্ষ্মতর হাসি দিয়ে এক লাইনে কাহিনীর সারাংশ শোনালাম। শুনে তাঁর হাসিটা বোধহয় কিঞ্চিৎ স্থূল হল! সেই হাসি মুখে নিয়েই তাঁকে আমার পেছনের বেঞ্চে যেতে দেখলাম। সেই স্যার পরে আরো দু’দিন আমাদের রুমে এসেছিলেন ডিউটি করতে।

আমরা তাঁর চেনা মুখ হয়ে গিয়েছিলাম। টুকটাক এদিক-সেদিক শোনাশুনি করতাম স্যারের চোখের সামনেই; কখনো বা সদয় অনুমতিক্রমে! অবজেক্টিভ প্রশ্নের গোল্লা ভরার সময় সুবিধাটা বেশি নেয়ার চেষ্টা করেছি এবং তাতে আমরা চরমভাবে সফল। এখনো যখন ফ্ল্যাশব্যাকে স্কুল-জীবনে ফিরে যাই, তখন স্মৃতির সুতা টানতে টানতে ওই পরীক্ষার হলে চলে আসি এবং স্যারের মুখটা যেন স্পষ্ট দেখতে পাই। পরীক্ষার ওই কয়েকটা দিনেই আমরা তাঁর (সু)নজরে পড়েছিলাম আর তিনি হয়েছিলেন আমাদের প্রিয়মুখ। পরে একদিন তাঁর নামও জেনেছিলাম।

চরম ঐতিহাসিক নাম- মজনু! [পূর্বে লিখিতঃ ব্লগের ঝুড়ি] তে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।