আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসুস্থ্য আমি এবং রাত

tarequeahmed

আজ তিনদিন যাবত অসুস্থ্য । সব কিছুকে ভীষণ ভারী মনে হচ্ছে । মানুষকে, মানুষের অস্তিত্বকে । হাঁটা চলা সব কিছু যেন অযৌক্তিক । শুতে গেলে মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ।

আবার হাঁটতে গেলে শরীর ভারী মনে হয় । যদিও একবারও হোচট খেয়ে পড়ে যাইনি, আল্লাহর অশেষ কৃপা! তার পরও মন বলে পড়ে যাব । অসুখটা হল গলা ব্যাথা, সাথে হালকা জ্বর । জ্বরটা অবশ্য সব সময় না মাঝে মাঝে এসে হানা দেয় । এতে আমার কোন সমস্যা হচ্ছে বরং ভালোই লাগছে ।

কারণ, গরমের দিন হালকা শীত শীত ভাব । কম্বলের উত্তাপ ভালোই । কিন্তু গলা ব্যাথা নিয়ে পড়ছি মহা ফ্যাসাদে । কিছু খেতে পারিনা আবার লালা গিলতে খুব কষ্ট হয় । মাছের কাঁটা বিঁধলে যেমন হয়।

ডাক্তারের কাছে গেলাম প্রথম দিন দিল নাপা এক্সট্রা, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদির ওষুধ । আরো কি একটা ওষুধ নাম মনে নেই । দুই দিন খাওয়ার পরও সেই আগের মত। সারার কোন লক্ষণ নেই । আবার গেলাম বলল এন্টিবায়োটিক দেয়া যাবেনা আরো দুই একদিন দেখতে হবে ।

আমি বললাম ঠিক আছে আপনি যা দেন। তবে এমন ওষুধ দেন যাতে আমার অসুখটা সারে। সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে গলা ব্যথাটা । দিল ডাইক্লোফেনাক ১০০ এম জি , আবার সেই নাপা ,গ্যাসের ওষুধ তো আছেই। একদিন খেলাম ।

কিছুই হয় নাই আবার গেলাম এবার গিয়ে আমি নিজ থেকেই বললাম ডাক্তার সাহেব: এন্টিবায়োটিক ছাড়া বোধহয় উপায় নাই । রাতে খাবারের পর যথারীতি ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর চিন্তা করলাম । জ্বরটা এবার মাথাচাড়া দিয়ে আসছে । কম্পিউটারের সামনে বসার ক্ষমতা নাই । অথচ ঘুমানোর পূর্বের রুটিন হল একবার পত্রিকা পড়া ।

মশারী টানিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, ঘুম এসে গেল । মনে আনন্দ । আমি ভাবছিলাম ঘুম আসবেনা । ঘুমের মধ্যে নানা স্বপ্ন দেখছি । একটা কথা বলতে ভুলে গেছি এবার ঢাকা থেকে আসার সময় ফেলুদা সমগ্রের ১ম খন্ড, আর সৈয়দ শামসুল হক এর সন্ধ্যাকাল নিয়ে এসেছি ।

সন্ধ্যাকাল অবশ্য আসার পরের সন্ধ্যায়ই খতম করে ফেলছিলাম । কিন্তু ফেলুদা তো আর সন্ধ্যাকালের মত না । ইয়া বড় ৬৯৪ পৃষ্টার বই । অসুস্থ্য হওয়ার দুই দিন আগ থেকে শুরু করছিলাম এখন ৫৫০ পৃষ্টায় আছি । এ বইগুলো কিনার সময়কার একটা মজার অভিজ্ঞতা আছে ।

এবারই আমার এক ক্লোজ বন্ধুর সাথে গেলাম ২১শে বই মেলায় । আসার সময় দেখলাম আমার বন্ধুটির হাতে অনেকগুলো বই । কিন্তু আমি একটা বইও কিনিনি । আমি বই কিনিনি দেখে বন্ধুর মন খারাপ। তাই তাকে খুশি করতে গিয়ে বললাম যে বই কিনব ।

এবং এমন বই কিনব যে গুলো কোন দিন পুরান হবে না । অর্থাৎ যখনই পড়ব মনে হবে নতুন বই পড়ছি । কিনা শুরু করলাম । কিনতে কিনতে শেষে দেখি উনার থেকে আমার বেশী না হলেও কম না । প্রায় কাছাকাছি ।

বই কিনতে কিনতে খেয়ালই করিনি যে আমাদের ম্যানি ব্যাগের স্বাস্থ্যের অনেক আগেই ভাটা পড়ছে এমন কি আসার ভাড়াটা পর্যন্ত নাই । যাক ঘুমের ভিতরে স্বপনের কথা বলছিলাম । স্বপ্নে দেখি আমি ফেলুদা ,না না ফেলুদা না । ফেলুদার মত গোয়েন্দা হয়ে গেছি এবং একটা কেইস এর তদন্ত করছি । কিন্তু ফেলুদার মত হয়না লালমোহন গাঙ্গুলী উরফে জটায়ুর মত (জটায়ু হলেন ফেলুদা বইয়ের একটা চরিত্র যিনি অদ্ভুত সব রহস্য-উপন্যাস লেখেন ) খালি গুলমাল লেগে যায় ।

এভাবে কতক্ষণ দেখার পর দেখলাম যে না আমি ফেলুদা না আসলে আমি সত্যজিৎ রায় । অর্থাৎ ফেলুদার লেখক এর মত । আমার মনে হচ্ছে আমি গোয়েন্দা উপন্যাস লিখে যাচ্ছি । কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের মত এতো সুন্দরভাবে হচ্ছেনা । বার বার চেষ্টা করার পরও ।

খালি প্যাচ লেগে যায় আগের কথা পরে আসে পরের কথা আগে চলে যায় । বিশাল এক ফ্যাসাদের মাঝে ছিলাম । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল মনে করলাম যাক বাঁচা গেল । কী প্যাঁচের মাঝেই না পড়ছিলাম । ভেন্টিলেটরের দিকে লক্ষ্য করলাম যে হালকা আলো আসছে মনে মনে খুশি হলাম সকাল হয়ে গেছে ভেবে ।

বালিশের কাছে মোবাইল ছিল হাতড়িয়ে বের করে দেখি ১.১২ বাজে । দেখে তো আমার মাথা খারাপ । এতো স্বপ্ন দেখলাম । এতো পাণ্ডুলিপি লেখলাম । আর সময় গেল মাত্র ১ ঘন্টা ।

আসলে ঐ আলোটা ছিল চাঁদের। আগেই বলা দরকার ছিল আমি শুতে এসেছিলাম ১২.০০ টায় । বিছানা ছেড়ে কম্পিউটার ওন করলাম। তার পর ফেইস বুকের নোট প্যাডে গিয়ে লেখা শুরু করলাম । আমার এ লেখা হচ্ছে টাইম পাস করার একটা অজুহাত ।

আর সত্যিই আমার টাইমটা অনেক সুন্দর ভাবে কেটেছ । কারণ এখন রাত ৩.৫৬ । লেখাটি ১০/০৫/১১ ইং রোজ মঙ্গল বার রাত ১.৩০ মিনিটের ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.