আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুড়ো বাবা-মা কে অবজ্ঞা করছেন? রেখে আসছেন বুদ্ধাশ্রমে? আচ্ছা আপনারা কি কখন বুড়ো হবেননা, বাবা-মা হবেননা?

A Hero will Rise Up Just In Time

এই গল্পটা হয়ত আমরা অনেকেই অনেকবার শুনেছি। তবুও আমার অনুরোধ, আরো একবার আপনারা এই গল্পটা পড়েন। ছোট একটা সংসার। বাবা, মা, ছোট ছেলে এবং ছেলেটার দাদা। দাদার অনেক বয়স হয়ে গেছে।

কোন কাজ করার শক্তি নেই। সারাদিন এক বিছানায় পড়ে থাকে। একদিন ছেলেটার বাবা একটা ঝুড়ির উপর বুড়োকে বসায়ে, ছেলের হাত ধরে জঙ্গলের উদ্যেশ্যে রওনা দিল। যাচেছ, যাচ্ছে। বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর ছেলেটা হঠাৎ তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, "বাবা, তুমি দাদুকে ঝুড়িতে করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?" "তোমার দাদুকে আমরা এখন জঙ্গলের ভেতর রেখে আসবো", বাবার উত্তর।

"কেন?", ছেলেটা অবাক হয়। "কারন তোমার দাদুতো বুড়ো হয়ে গেছে, কোন কাজ করতে পারেনা। আমাদের কোন উপকারেও লাগেনা। শুধু খায় আর ঘুমায়। কি লাভ তাকে বাসায় রেখে? তাই তাকে আমরা জঙ্গলে রেখে আসতে যাচ্ছি।

" "ওহ!", কিছুক্ষন কি যেন ভাবে ছোট ছেলেটা, তারপর বলল, "ঠিক আছে বাবা, কিন্তু দাদুকে রেখে আসার সময় আমরা কিন্তু অবশ্যই ঝুড়িটা নিয়ে আসবো। " "কেন", একটু অবাক হয় বাবা। "কারন, যখন আমি বড় হব, তুমি তো তখন বুড়ো হয়ে যাবে, দাদুর মত। তখন তুমি কোন কাজই করতে পারবানা। শুধু খাবা আর ঘুমাবা।

তখন তো তোমাকে বাসায় রেখে আমার কোন লাভই হবে না। শুধু শুধু তখন টাকা খরচ করে নতুন ঝুড়ি কিনতে যাব কেন? এই ঝুড়িতে করেই না হয় তোমাকে জঙ্গলে রেখে যাব?" ছেলের কথায় চমকে উঠলো বাবা। হঠাৎ করেই নিজের ভূল বুঝতে পারলো। বুঝতে পারলো সে যখন ছোট ছিল, যখন কোন কিছু করারই ক্ষমতা ছিলনা, তখন তার বাবা মা-ই তাকে যত্ন করে বড় করেছে। আজ তার বাবা বুড়ো হয়ে যেন শিশু হয়ে গেছে।

ছোটবেলায় যেমন তার বাবা তাকে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছিল, এখন তেমনি তার দায়িত্ব হলো তার বাবাকে আগলে রাখা। এই সময়ে তার বাবার প্রতি তার সেবা, হয়ত কিছুটা হলেও তার বাবার প্রতি ঋন শোধ করা হবে। এইবার আসি মূল কথায়। কেন এই গল্পটা বললাম। প্রায়ই টিভিতে বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্টরী দেখায়।

প্রত্যেকটা বৃদ্ধ, বৃদ্ধার চোখে দেখি পানি টলমল করছে। অনেকেই সাক্ষাৎকার দেয়, শোনায় তাদের দু:খের কাহিনী। তাদের প্রতি তাদের ছেলে বউয়ের অত্যাচারের কথা। যে ছেলেকে মানুষ করতে তারা তাদের জীবনের বেশীরভাগ সময় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে, সেই ছেলে তার পরিবার নিয়ে আজ মহাসুখে আছে, আর বাবা মা-কে পাঠিয়ে দিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে, জীবনের শেষ কটা দিন ধুকে ধুকে মরার জন্য। সেই সব ছেলে বউয়ের প্রতি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, আজ থেকে ৩০ বছর পরে হয়ত অন্য কোন অনুষ্ঠানে, অন্য কোন বিদ্ধাশ্রম নিয়ে করা ডকুমেন্টরীতে হয়তো আপনাদেরও দেখা যেতে পারে।

কেমন লাগবে আপনাদের, কোন এক বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য হিসেবে, ঐ অনুষ্ঠানে বসে, পুরোনো দিনের কথা স্মরণ করে কেঁদে বুক ভাসাতে? কেমন লাগবে যখন মনে পড়বে, যে ছেলে মানুষ করার জন্য জীবনে অমানুষিক কষ্ট করেছেন, সেই ছেলে মেয়ে আনন্দে দিন কাটাচ্ছে আর আপনাকে ফেলে গেছে বৃদ্ধাশ্রমে, ধুকে ধুকে মরার জন্য? এখনও সময় আছে। যারা তাদের বাবা-মাকে এখনও অবজ্ঞা করছেন, যারা তাদের বাবা-মাকে ফেলে রেখেছেন বৃদ্ধাশ্রমে ধুকে ধুকে মরার জন্য, তারা এখনও তাদের ভুল শুধরে নিতে পারেন। এখনও পেতে পারেন বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া দোয়া। বাবা-মার সেবা করুন, তাদের প্রতি আন্তরিকতা দেখান। মনে রাখবেন বাবা-মা বুড়ো হলে, তারা আর বাবা-মা থাকে না।

তারা আপনার সন্তানে পরিনত হয়। আপনিই তখন তাদের বাবা-মা। তাদের দেখাশুনা করার দায়িত্বতো আপনার হাতেই অর্পিত। বাবা-মার সেবা করুন... যদি তা করেন, মনে রাখবেন জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভালো কাজটি আপনি করেছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।