আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এপেন্ডিক্স কি গ্রান্ড ডিজাইনের অংশ নাকি বিবর্তনের অবশিষ্টাংশ?



... আজ ফেসবুকে পরিচিত অনেক-কেই দেখলাম, 'এপেন্ডিক্সের রহস্য উন্মোচন' নামক একটি খবর শেয়ার দিচ্ছে... সেই খবরে লেখক, দাবী করেছেন অতি সাম্প্রতিক সময়ে এপেন্ডিক্সের কিছু কাজ পাওয়া গিয়েছে...যাইহোক, এই খবরটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে খুব স্বস্তিদায়ক...তবে ধর্মীয় দিক নিয়ে অহেতুক তর্ক না করে, শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে আমি কিছু কথা বলতে চাই। আর এটাও বলে রাখি, ধর্ম নানাকারনে নানাসময়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়, মনেক শান্ত রাখে,জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে...যারা সুযোগ পেলেই ধর্ম নিয়ে ক্যাচাল করে তারা প্রকৃত ধার্মিক নয়... প্রথমেই বলি, এপেন্ডিক্স যে কিছু কাজ করে, এটা কোন নতুন খবর না, বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই সেটা জানে... ইন্টারনেটে সার্চ দিন অথবা ফিজিওলজির কোন বই ভাল ভাবে পড়েন... অনেক পুরানো এডিশনের বইয়েই এপেন্ডিক্স এর কিছু কাজের কথা বলা আছে...যাইহোক, কিছু কাজ থাকলেও এপেন্ডিক্সকে একটি vestigial organ বলা হয়। ... প্রশ্ন হল, vestigial organ কি? মূলত সেইসব অরগান যারা বিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে তার কাজ সম্পূর্ন বা অনেকাংশে হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু তাদের চিহ্ন বা অবশিষ্টাংশ এখনো প্রাণীদেহে খুঁজে পাওয়া যায়, তাদেরকেই vestigial organ বলে। উদাহরনসরূপ বলা যায়, কেভফিশ নামে একধরনের মাছ আছে, যারা দীর্ঘকাল অন্ধকারে থাকার ফলে আস্তে আস্তে তাদের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, কিন্তু তাদের প্রাচীন দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন চোখের অবশিষ্টাংশ এখনো তাদের শরীরে রয়ে গেছে...মানুষের শরীরে লেজের হাড়ের অবস্থানও একটি উদাহরন। মানুষের পূর্বপুরুষ একসময় অনেকাংশে তৃণভোজী ছিল এবং তারা সবকিছু কাঁচাই খেত। তখন তাদের এপেন্ডিক্স ছিল আকারে ও কাজের দিক থেকে অনেক কার্যকরী। তখন তাদের এপেন্ডিক্সে বিশেষ ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার আবাস ছিল যারা সেলুলোজ হজম করতে সহায়তা করত... কিন্তু এখন আমাদের খাবারে সময়ের ব্যবধানে নানা কারনে সেলুলোজের পরিমান অনেক কমে গেছে। যেটুকু আছে তাও আমদের শরীর হজম করে ফেলতে পারে কারন আমরা খাবার এখন রান্না করে খাই...আর এইসকল কারনেই এপেন্ডিক্সের এখন তেমন আর কাজ নেই... আর তাই, এপেন্ডিক্স অপারেশন করে ফেলে দিলেও ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে একজন মানুষ একদম সুস্থ থাকতে পারে... এর চেয়েও বড় কথা , আজকাল এপেন্ডিক্স অপারেশনের হার বাড়ছে...কারন নানা কারনে এই অংগটি যতটা না উপকার করছে তার চেয়ে নানারকম ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়ার আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে, অপকারই করছে বেশি... এইসকল কারনেই এপেন্ডিক্সকে vestigial organ বলা হয়... পরিশেষে বলি, নানাধরনের তৃণভোজী প্রাণীর শরীরে এখনো এপেন্ডিক্সের মত অংগ আছে যারা আকারে বড় এবং তাদের কেটে ফেলে দিলে ওইসব প্রানীর বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না... মূলত, মানুষের এপেন্ডিক্স বির্বতনের প্রমাণসরূপ একটি বিলুপ্তপ্রায় চিহ্নমাত্র, আর কিছু নয়... বি.দ্র.... কিছু বিশ্বাস মনকে শান্তি দেয়, এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা দেয়... শুধু শুধু সেই পবিত্র বিশ্বাসগুলোকে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করার প্রয়োজন দেখি না..


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।