আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাঁস-মুরগি-গরু, এমনকি কুকুর-বিড়াল-খরগোশও ছিল বাড়িটিতে।

বোরহান উদ্দিন আহমেদ (মাসুম)
চারপাশে ১২ থেকে ১৮ ফুট উঁচু প্রাচীর। তার মাথায় কাঁটাতারের বেড়া। এর মধ্যেই তিনতলা বাড়িটি। বাইরে থেকে মনে হতে পারে ভেতরে কী না কী আছে। কিন্তু ভেতরের পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

হাঁস-মুরগি-গরু, এমনকি কুকুর-বিড়াল-খরগোশও আছে বাড়িটিতে। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরই সবজিখেত। এমনই সাদামাটা গেরস্থ পরিবেশে পাঁচটি বছর কাটিয়েছেন আল-কায়েদাপ্রধান ওসামা বিন লাদেন। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের হাতে আটক বিন লাদেন পরিবারের সদস্যদের বর্ণনা, মার্কিন সরকারের প্রকাশ করা ও পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার ধারণ করা ভিডিওচিত্র এবং প্রতিবেশীদের বর্ণনায় এখন উঠে আসছে বিন লাদেনের গোপন-জীবনের নানা চিত্র। বিন লাদেনের ছেলে ওমর বিন লাদেন ২০০৯ সালে এক ই-মেইলবার্তায় বলেছিলেন, ‘আমার বাবা মাসের পর মাস নিজেকে গৃহবন্দী করে রাখতে চাইবেন না।

কেননা তিনি প্রকৃতি খুব ভালোবাসেন। তার পরও আমার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় বেঁচে থাকার জন্য তাঁর কী দরকার—আমি বলব, খাবার ও পানি। তখন তিনি অন্তর্জগতে ডুব দেবেন। ’ মার্কিন ও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো তিনতলা বাড়ির মধ্যে মাত্র দুটি কক্ষেই সীমাবদ্ধ ছিল লাদেনের জীবন। তবে বাইরে থেকে ঘেরা একটি বারান্দায় তিনি মাঝেমধ্যে হাঁটাহাঁটি করতেন।

বেশির ভাগ সময় কাটত টেলিভিশন দেখে। কম্পিউটার নিয়েও সময় কাটাতেন অনেক। তবে বাড়িতে কোনো টেলিফোন বা ইন্টারনেটের সংযোগ ছিল না। ২ মে অভিযান শেষ করে মার্কিন কমান্ডোরা বাড়িটি ছেড়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা তাঁর মুঠোফোনে অ্যাবোটাবাদে বিন লাদেনের আশ্রয়স্থলের খুঁটিনাটি বিষয় ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। ভিডিওচিত্রে অত্যন্ত সাদামাটা গৃহস্থালির আবহ দেখা গেছে।

রান্নাঘরে একটা পাত্রে পড়ে আছে কয়েক ডজন মুরগির ডিম। বাসনকোসনে কয়েক পদের খাবার। কাঠের কাপবোর্ডের ডালা খোলা, ভেতরে কিছু নেই। ঘরের মেঝেতে বিছানো সস্তা ফোমের জাজিম। বিভিন্ন কক্ষে কয়েকটি পুরোনো টেলিভিশন সেট।

ঘরের অন্যান্য আসবাবও জৌলুশহীন। মোহাম্মাদ কাসিম নামের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ওই বাড়িতে দুটো গরু, কয়েকটা কুকুর ও শতাধিক হাঁস-মুরগি ছিল। আমরা বাসা থেকে হাঁস-মুরগির ডাক শুনতে পেতাম। ’ পাশের একটি বাড়ির ১৪ বছর বয়সী কিশোর জারার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, কিছুদিন আগে খুব কম সময়ের জন্য সে ওই বাড়িতে গিয়েছিল। বাড়িতে দুই নারীকে দেখেছিল।

তাঁরা আরবি ও উর্দুতে কথা বলছিলেন। ওই দুই নারী তাঁকে আদর করে দুটো খরগোশ উপহার দিয়েছিলেন। প্রতিবেশীরা বলেছেন, ওই বাড়িতে বাইরের কাউকে আসা-যাওয়া করতে দেখা যেত না। শুধু শামরেজ মোহাম্মাদ নামের এক ব্যক্তি বাড়ির গবাদিপশুর দেখাশোনা ও সবজিখেতের যত্ন নেওয়ার কাজ করতে সেখানে যেতেন। শামরেজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর গত শুক্রবার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেশীরা আরও জানান, ওই বাড়িতে বাস করা আরশাদ খান ও তারিক খান কখনোই বাড়িতে কাউকে দাওয়াত করতেন না। এমনকি তাঁরা নিজেরাও কারও বাড়ি যেতেন না। তবে মসজিদে যেতেন, নামাজ পড়তেন। প্রতিবেশীদের কেউ মারা গেলে জানাজায় অংশ নিতেন। বাড়ির নারীরা বাইরে বের হতে হলে কেবল স্বামীদের সঙ্গে গাড়িতে করেই বের হতেন।

এ সময় তাঁরা বোরকা পরিহিত থাকতেন। আশপাশের শিশুরা মাঠে খেলা করলেও ওই বাড়ির ছেলেমেয়েরা কখনো মাঠে খেলতে যেত না। প্রতিবেশী এক শিশু জানায়, একদিন বাইরে খেলা করতে করতে তাদের বলটি ওই বাড়ির ভেতর চলে যায়। কিন্তু তাদের বল ফেরত না দিয়ে বাড়ির লোকজন তাদের ৫০ রুপি দিয়ে নতুন বল কিনে নিতে বলে। ২০০৪ সালে ওই বাড়িতে ওঠেন আরশাদ খান ও তারিক খান।

তাঁরা প্রতিবেশীদের জানান, তাঁদের বাড়ি দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায়। জাতিতে পশতুন। প্রতিবেশীরা জানান, বাড়ি তৈরির সময় শ্রমিকদের দ্বিগুণ মজুরি দিয়েছিলেন ওই দুই ভাই। তাঁরা কী করেন জানতে চাইলে কখনো বলতেন দুবাইয়ে তাঁদের হোটেল আছে। আবার কখনো বলতেন তাঁদের মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসা আছে।

আরশাদ ও তারিক দুই ভাই-ই নিহত হয়েছেন মার্কিন কমান্ডোদের অভিযানে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরশাদের প্রকৃত নাম আবু আহমেদ আল-কুয়েতি। তিনিই ছিলেন বিন লাদেনের বিশ্বস্ত বার্তাবাহক। তাঁর বাবার সঙ্গে বিন লাদেনের সম্পর্ক ছিল কয়েক দশক ধরে। আরশাদ-তারিকের এক বোনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে লাদেনের ছেলে খালিদের।

বিন লাদেনের তিন স্ত্রী থাকতেন ওই বাড়িতে। তাঁদের সবার সঙ্গে লাদেনের সম্পর্ক কী রকম ছিল জানা যায়নি। তবে ওই রাতের অভিযানের সময় কনিষ্ঠ স্ত্রী আমাল আহমেদ আবদুলফাত্তাহ ছিলেন বিন লাদেনের সঙ্গে। মার্কিন কমান্ডোরা তাঁর কক্ষে ঢুকে পড়ার পর আমাল এগিয়ে এসেছিলেন স্বামীকে রক্ষার জন্য। তখন কমান্ডোরা তাঁর পায়ে গুলি করেন।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, ওই বাড়িতে মোট নয়জন শিশু ছিল। তবে তাদের মধ্যে কয়জন লাদেন ও তাঁর ছেলের বাচ্চা আর কয়জন আরশাদ-তারিক ভাইদের জানা যায়নি। অ্যাবোটাবাদের বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর মার্কিন প্রশাসনের প্রকাশ করা একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, বিন লাদেন একটি পুরোনো কম্বল গায়ে দিয়ে বসে টেলিভিশনে তাঁর নিজের ছবি দেখছেন। যেন একজন বয়স্ক অভিনেতা আবার আলোচনায় ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, অন্য ভিডিওচিত্রগুলোতে বিন লাদেনকে ক্যামেরার সামনে প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।

ভিডিও ধারণের জন্য তিনি অনেক উৎসাহিত ছিলেন, এ জন্য সাদা গোঁফ-দাড়ি কালি করে ফেলেছেন। এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমস ও দ্য ইনডিপেনডেন্ট। এখান থেকে-
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।