আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টরন্টো শহরের দিনলিপি।



অনেক অনেক দিন আগে শেষ এখানে লিখছিলাম। বেশিদিন আগে না, বছরখানিক হবে, কিন্তু এখনকার টেকনোলজীর যুগে তাই অনেক দূরের কোন একসময় বলে মনে হয়। আসলে সময় আগের মতই আছে, আমরা শুধু বদলে গেছি। যাহোক, সময়ের এ রঙ্গমঞ্চে আমার অবস্হান এখন কানাডার টরন্টো শহরে, বাঙালিদের আখড়া ড্যানফোর্থ ভিক্টোরিয়া এলাকায়। এখানে কোন কোন সময়ে রাস্তাঘাটে বঙ্গপুঙবদের সরব উপস্থিতি দেখে না বুঝবার উপায় নাই যে আপনি বাঙালি এলাকায় চলে এসেছেন।

অফিস, দোকান-পাট, ব্যাংকে বাঙ্গালরা ভালই কাজ চালাচ্চে, দেখে ভাল লাগে এখানকার বাঙালি মেয়েরা খুব স্বচ্ছন্দে কর্মপরিবিশে মানিয়ে নিয়েছে , দেশে থাকলে হয়ত এরা কোন কাজ করত না, দরকার হত না বলে। বিদেশে টিকে থাকবার জন্যে ,সময় কাটাতে বা নিজেকে নতুন করে খুজে পেতে এরা কাজে মন দেয়। পাশ্চাত্যের 'উইম্যান ফ্রেন্ডলি' রাস্তাঘাট এবং কর্মপরিবেশই এটা সম্ভবপর করেছে, আমরা তো এখনও ইভটিজিংয়ের উর্ধে উঠতে পারলাম না, ভাবা যায় না, বাংলাদেশে ইভটিজিংয়ের জন্য এখনও শিক্ষককে প্রাণ দিয়ে বীরত্ব দেখাতে হয়। বিদেশে বাঙালিদের সুনামই বেশি, স্বভাবগতভাবেই ইংরেজ অনুকরণপ্রিয় বাঙালিরা সাহেবদের সাথে কোন ভেজালে যায় না। তারা আড্ডাবাজি করে সময় নষ্ট করে না, আড্ডা না দিয়ে ঐ সময়টা কাজ করলে 'আওয়ার' পাওয়া যাবে।

আমি কিন্তু শুধু নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদের কথা বলছি, এরাই এ সমাজের 'লোয়ার ক্লাস'। এ বিদেশেও মানুষ শ্রেণীবিভক্ত, বড়লোকেরা থাকেন অন্যপাড়ায়, সে পাড়ার হদিস আমার জানা নেই। কতরকমের শ্রেণী যে আছে, সেই শ্রেণীভিত্তিক সহজাত অহংকারও বাঙালিসংঘাতে সমানে দেখা এবং শোনা যায়। যেমন, টরন্টোর যে কোন বাংলাদেশীকে বাংলাদেশে তাঁর বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে অবলীলায় সবাই বলে ঢাকায় বা ঢাকায় সেটল্ড। কথা হয়ত সত্য, এখানে গরীব হলেও বাংলাদেশে এরাই মধ্যবিত্ত বা ধনী, অথবা বিদেশে থাকার সুবাধে ঢাকায় একটা বাড়ি বা নিদেনপক্ষে ফ্লাট বা প্লটের মালিক।

আসল কথা হল, এরা সবাই নিজের অরিজিন লুকাতে চায়, আইডেন্টিটি নিয়ে কমপ্লেক্স আছে। আমার মতে দুইটা শ্রেণী খুব বেশি প্রকট, শিক্ষিত আর অশিক্ষিত। এখনকার যুগে যত দুনিয়ায় যত ঝুট-ঝামেলা লেগে আছে, তার জন্য মানুষের মধ্যে যারা শিক্ষিত তারাই দায়ী, কিন্তু শিক্ষিতরা তার জন্য দায়িত্ব নিবে না, উল্টে যারা অশিক্ষিত তাদের যেভাবে পারবে শোষণ করবে। বাঙালিরা এমনিতে নিজেদের আলাদা করে রাখে, বেশিরভাগই কাউকে পাত্তা দিতে চায় না, আমার মতে এটা খারাপ কোন গুণ না, এত পাত্তা দেয়ার কি আছে ,তবে বিনয়ের অভাব সব সময়ই দৃষ্টিকটু। এরমধ্যে যারা অল্পবিস্তর টাকা কামায় বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি তাদের গুমোরই আলাদা, এরা সংখ্যায় খুব ছোট, 'আইসোলেটেড সাবার্বিয়ান মিডল ক্লাস'।

এরা না পারে মেজরিটি বাঙালীদের সাথে মিশতে, ঈমাণের ভয়ে এরা শাদাদের ককটেল পার্টিতে যায় না, কালোরা তাদের কাছে কাউল্লা, পাকিরা শরাবী । ভালটা কে ? আজকে এখানেই থামি, পরে আরেকদিন লিখব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।