আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীতলক্ষ্যায় দখল চলছেই

‘তুমি যাকে মৃত্যু বল, তুমি যাকে বল শেষ, সমূল পতন

হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন অবাধে দখল হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে থাকা চার নদী; বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যায় ও বালু। এর মধ্যে শীতলক্ষ্যায় নদীতে চলছে দখলের মহোৎসব। ঢাকার চারপাশের অন্য তিনটি নদীর মত এই নদীটিও দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভূমিদস্যুরা। নদীর দুই পাড়ে কেউ বালু ফেলে, কেউ পাকা ভবন নির্মাণ করে, কেউবা বাঁশের আড়ৎ করে আবার কেউবা গাইড ওয়াল নির্মাণ করে নদী দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। এতে করে শীতলক্ষ্যায় নদী যেমন দখল হয়ে যাচ্ছে, তেমনি নদী দূষণ হচ্ছে।

নদী দখল প্রতিরোধের সকল প্রচেষ্টাই ব্যার্থ হওয়ায় শীতল্যা নদীর উপর নির্মিত কাঁচপুর এবং সুলতানা কামাল সেতু দু’টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালে ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতল্যা ও বালু নদীর তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জস্য ছয়মাসের সময় বেঁধে দেয় হাই কোর্ট। কিন্তু এই আদেশের কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি শীতলক্ষ্যায়। হাই কোর্টের দেয়া সেই নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১১ সালের ৩১ মে’র মধ্যে এই চারটি নদীর তীরে হাঁটার পথ নির্মাণ করতে হবে। একইসঙ্গে ৩০ মে’র মধ্যে নদী সীমানা নির্ধারণী পাকা খুঁটি নির্মাণ করতে হবে।

নির্দেশানায় আরো বলা হয়, যমুনা নদী থেকে এই চার নদীতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য আগামী পাঁচ বছর কর্ণপাড়া, পুংলি ও টঙ্গি খালগুলো নিয়মিত খনন করতে হবে। এই কাজের দায়িত্ব ভূমি, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, নৌ-পরিবহন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের সচিব, ঢাকা-গাজীপুর-নারায়নগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, চার নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। রিট আবেদনকারীর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন মনজিল মোরশেদ। কিন্তু শীতলক্ষ্যায় নদী সরেজমিনে গিয়ে অনেকটা উল্টো চিত্র দেখা যায়, নদীর সীমানার মধ্যে অপ্রয়োজনীয়ভাবে জমে রয়েছে বালু, মাটি, ভাঙা ইট, বাঁশ ও সুরকি।

এখনো নদীর উভয় পাড়ে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিত্যদিন গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা। নদীর মূল স্রোতধারা বালু ফেলে আটকে দেয়া হচ্ছে। কাঁচপুর ব্রিজের নিচের পিলারের চতুর্দিকে বালুর স্তুপ করে রাখা হয়েছে। একের পর এক নদী দখল চললেও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা অজানা কারণে নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই শীতলক্ষ্যায় নদীর খাস জায়গা দখল শুরু হয়। এলাকার মতাশীন ও প্রভাবশালী হিসাবে খ্যাতি আছে মূলত তাদেরই বড় একটি অংশ নদীটি দখল করে বসে আছে। এ জন্য এ নদীটি দখল মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন স্থানিয়রা। দখলের উদ্দেশ্যে মাটি ফেলা অব্যহত রেখেছে ভূমিদস্যুরা। এই এলাকায় সুশীল সমাজের অনেকেই শীতল্যা নদীর উভয় পাশ দখল করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।

ওইসব দখল করা জমি থেকে লাখ লাখ টাকার মাটি ও বালু বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিদিন। ব্যবসায়ীদের লোকজন নদী দখল করে খাস জায়গা নিজ নামে রেকর্ড করে গড়ে তুলেছেন বিশাল গুদাম, বসতবাড়ী ও ময়দার মিল এবং বিভিন্ন কারখানা। এসব প্রভাবশালী ব্যক্তি যারাই নদী দখল করেছেন তার প্রায় সবাই নদীর খাসজমি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে নিজ নামে রেকর্ড করেছেন বলে জানা গেছে। প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি শীতলক্ষ্যায় দূষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ অধিদফতর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। স্থানীয়রা নদীটির সংস্কার করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা ও নদীকে বাঁচিয়ে রাখার দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে।

স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব দখল চললেও প্রশাসনিক এ্যাকশন চোখে পড়ছে না। সরকারের তৎপরতার মুখে নদী দখল প্রক্রিয়া সাময়িক বাধাগ্রস্ত হলেও বর্তমানে তা আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। এদিকে, কিছুদিন পূর্বে পুলিশ নদীর উভয় তীরে টহল জোরদার ও নদী পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে আসা লোকদের বাঁধা দিলেও এখন আর নদীর উভয় তীরের খোঁজ-খবর রাখছে না কেউ। ফলে একদিকে যেমন প্রতিদিন নদী পাড়ে টনকে টন ময়লা-আবর্জনার স্তুপ পড়ছে। দূষিত হয়ে পড়েছে নদীর পানি।

শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন নদীর পানিতে মিশছে ৬০ হাজার কিউবিক মিটার বিষাক্ত বর্জ্য। এর প্রভাবে এই নদীর পানিতে অলুমিনিয়াম, ক্যাডমিয়াম, লেড, মার্কারি ও ক্রোমিয়ামের পরিমান অনেক বেশি। এর পানি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা গড়ে প্রতি লিটারে ১-২ মিলিগ্রাম। ফলে পানিবাহিত রোগের জীকানু ছড়িয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী এলাকায়। আশে-পাশের এলাকায় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে।

এলাকাবাসী অবৈধ দখল ও নদী দূষণের কবল থেকে শীতলক্ষ্যাকে রক্ষা ও নদীর দক্ষিন পাড় অবৈধ স্থাপনামুক্ত করতে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের হস্তক্ষপে কামনা করেছেন।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।