আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলকাতা ভ্রমণ গাইড-১ (তথ্যমূলক পোস্ট)



ঢাকা টু বেনাপোল নব্বুই দশকের শেষ দিকে এসে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বেনাপোল সীমান্ত হয়ে কলকাতার সাথে বাস চলাচল শুরু হলে বাংলাদেশিদের জন্য ভারত যাতায়াতের সহজ রাস্তা খুলে যায়। ভারতের বিভিন্ন যায়গায় থাকা আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ, স্রেফ ভ্রমণ এবং ভারতীয় চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাংলাদেশীদের অতিমাত্রায় আদিখ্যেতার ফলে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে পড়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যকার ব্যস্ততম সীমান্ত পথ। গড়ে হাজার খানেক বাংলাদেশি প্রতিদিন এই সিমান্ত দিয়ে ভারতে যাচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে আমি নিজেও বেনাপোল হয়ে কলকাতা ঘুরে এসেছি। আমার দেখা এবং অভিজ্ঞতায় কলকাতা ভ্রমণের টুকিটাকি তথ্য আপনারও কাজে লাগতে পারে।

ভিসার জন্য আবেদন বর্তমানে ভিসা আবেদন প্রকৃয়া পুরোপুরি অনলাইনে চলে যাওয়ায় ফরম জমা দেওয়ার সেই চরম ভোগান্তি একদমই নেই এখন। আবেদন প্রকৃয়া খুবই সোজা, দালাল বা অন্য কারো সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে এখানে https://indianvisaonline.gov.in/visa/ ঢুকে নিদৃষ্ট ফর্ম পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। সফলভাবে সাবমিশন হলে আপনি সাবমিটেড ফর্মের একটা প্রিন্ট নিয়ে রাখুন। প্রিন্ট কপিটি আপনাকে নিজে গিয়ে ভিসা অফিসে জমা দিতে হবে।

সাবমিশনের সাথে সাথেই আপনি জমা দেওয়ার সময় এবং তারিখ ফর্মের সাথেই পেয়ে যাবেন। সাধারণত অনলাইন সাবমিশনের ৫-৮ দিনের ভেতরেই এই তারিখ হয়ে থাকে। আবেদন পত্রে কোন ভুল হওয়া চলবে না, বিশেষত যে সকল তথ্য পাসপোর্টে দেওয়া আছে সেগুলো কোনভাবেই ভূল হতে পারবে না। তথ্যে ভুল থাকলে আবেদন পত্র সঙ্গে সঙ্গে ফেরত দেওয়া হয়। আরেকটা বিষয়, কোন সীমান্ত দিয়ে পার হবেন এই কলামে যদি শুধু বাই হরিদাসপুর (বেনাপোলের ওখানে ভারতীয় সীমান্তের নাম) লিখেন, তাহলে আপনাকে এই সীমান্ত দিয়েই ঢুকতে এবং ফিরতে হবে।

কিন্তু আপনি যদি বাই হরিদাসপুর/এয়ার লিখেন, তাহলে বেনাপোল দিয়ে যাওয়া আসার সুবিধার সাথে সাথে এয়ারে যাওয়া/আসার সুবিধাও পাবেন। আর ভিসা অফিস থেকে মাঝে মধ্যে ফোন করে, তাই মোবাইল ফোন নাম্বারটা আপনার নিজের হলেই ভাল। আবেদন পত্র জমা আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপিতে উল্লেখিত দিনে আবেদনপত্র ভারতীয় ভিসা অফিসে নিজে গিয়ে জমা দিতে হবে। ভারতীয় ভিসা অফিসটা গুলশান ১ থেকে শ্যুটিং ক্লাবের দিকের রাস্তায় কেএফসি’র পেছনে। হার্ড কপি জমাদানের সময় যেটাই দেওয়া থাকুক না কেন, নিদৃষ্ট দিনে একটু সকাল সকাল চলে আসবেন।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে জমা নেওয়া শুরু হয়, আপনি সাড়ে সাতটার দিকে চলে আসুন। ভিসা অফিসে ঢোকার সময়ে আপনাকে একটা টোকেন নাম্বার দেওয়া হবে। এরপর এই নাম্বার অনুযায়ীই সব হবে। তারপর ফর্ম জমা দিয়ে জমা রশিদ নিয়ে আসুন। ভিসা হোক বা না হোক, ট্যুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে সাধারণত জমা দেওয়ার ২দিন পরই পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়।

ভিসা আবেদন ফর্ম এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার সময় ৪০০ টাকা ফি হিসাবে ভিসা সেন্টারেই জমা দিতে হয়। জমা দেওয়ার সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। ১. আবেদনপত্রের নিদৃষ্ট স্থানে ১কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি আঠা দিয়ে আটকে দিন। তার ঠিক নিচে এবং দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর দিতে হবে। ২. স্বাক্ষর পাসপোর্টে দেওয়া স্বাক্ষরের মত হতে হবে।

তবে স্বাক্ষর অতটা গুরুত্বপূূর্ণ না, একটু আধটু না মিললেও সমস্যা নেই। ৩. নাগরিকত্ব সনদ (চেয়ারম্যান বা কমিশনারের), ন্যাশনাল আইডি কার্ড, স্থানীয় ঠিকানার সমর্থনে ফোন/ওয়াসা বা বিদ্যুৎ বিল, ডলার এনডোর্সমেন্ট সার্টিফিকেট, পেশার সমর্থনে অফিস/শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। সব পেপারের অরিজিনাল কপি এবং এবং একসেট ফটোকপি দিতে হবে। শুধু ন্যাশনাল আইডির ২টি ফটোকপি হলেই চলবে। অরিজিনাল কপিগুলো আপনি ভিসার সাথে ফেরত পাবেন।

কোন ফটোকপিই এ্যাটাস্টেড লাগবে না। ৪. আপনার ফ্যামিলির অন্য যে কোন সদস্যর ফর্ম আপনি জমা দিতে এবং নিতে পারবেন, সেক্ষেত্রে শুধু আপনার পাসপোর্ট/ন্যাশনাল আইডি দেখাতে হবে। অন্য কারোটা নিতে হলে অথরাইজেশন লেটার লাগবে। ৫. ভিসা সেন্টারের ভেতরে ফটোকপি করার সুবিধা আছে। ৬. ভিসা অফিসের ভেতরে কোন ব্যাগ নিয়ে ঢোকা যায় না এবং গেটে এগুলো রাখারও কোন ব্যবস্থা নেই।

তাই সাথে ব্যাগ ট্যাগ না আনাই ভাল। ৭. পার্সপোর্ট এবং ভিসা ব্যতীত আপনার ১দিনের বাচ্চাকেও সাথে নিতে পারবেন না। ওদের জন্য আলাদা ভিসা লাগবে। ৮. ফর্মে “বিদেশে অবস্থানের ঠিকানা” নামে একটা ঘর আছে, এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। জানা শোনা একটা হোটেলের ঠিকানা বা পরিচিত যে কোন ঠিকানা দিয়ে দিন।

৯. ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য মিনিমাম ১৫০ ডলার এন্ডোর্স করাতে হয়। ভিসা অফিসে আপনার ডলার চেক করবে না, শুধু সার্টিফিকেটটাই দেখবে। তাই ডলার আপনি যেখান থেকেই সংগ্রহ করুন না কেন সার্টিফিকেটটা ব্যাংক বা সরকার অনুমোদিত মানি চেঞ্জার থেকেই সংগ্রহ করুন। অন্য কোনখান থেকে সার্টিফিকেট নিলে আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এবার ফর্ম জমা দিয়ে ফেরত নেয়ার তারিখ এবং সময়ের সিøপ নিয়ে চলে আসুন।

ভিসা অফিসে শুধু ফর্ম জমা নেয়। কোন ইন্টারভিউ হয় না, সুতরাং ভীত হওয়ার কিছু নেই। যদি আপনার আবেদনপত্রের সাথে দেওয়া তথ্যে সন্দেহজনক কিছু না থাকে তাহলে আশা করা যায় আপনি এমনিতেই ভিসা পেয়ে যাবেন। আর তা না হলে আপনাকে ইন্টারভিউএর জন্য ডাকতে পারে। তবে ভিসা অফিসের আশে পাশে ঘুরঘুর করা দালালচক্রের যোগসাজসের কারণে একসঙ্গে জমা দেওয়া অনেকগুলো আবেদনপত্রের ভেতরে দু’একটা বাদ হয়ে যেতে দেখা যায়।

যেমন, আপনি আপনার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ ভিসার আবেদন করলেন, দেখা গেল আপনি ছাড়া বাকিদের ভিসা হয়েছে। এখন আপনাকে ছাড়াতো আর আপনার পরিবারের সদস্যরা যেতে পারবেনা, এদিকে আপনি এয়ারে টিকেটও করে ফেলেছেন, ফেরত দিতে গেলে ২৮ হাজার টাকা গচ্চা। সুতরাং আপনাকে যেতেই হবে। সমস্যা নেই, এই পরিস্থিতিতে আশে পাশে দালালচক্রের কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবেনই। ৬ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে আপনার ভিসা করিয়ে দেবে সে..... এই ভিসা অফিস-দালাল-হাজার দশেক টাকা, এই চক্রের মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে বলে আমার মনে হয়।

তবে এসব না ভেবে পজেটিভ চিন্তা করাই ভাল। পাসপোর্ট ফেরত নেওয়া আবেদনপত্র জমা দেয়ার সাথে সাথেই আপনাকে পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার দিন ও সময় উল্লেখ করে একটা সিøপ দেয়া হবে। ওই দিনও একইভাবে সময়ের একটু আগে চলে আসুন। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতেই পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়। পার্সপোট হাতে পেলে নিদৃষ্ট পৃষ্ঠায় ভিসা স্টিকার মারা আছে কি না দেখে নিন।

এবার আপনি ভারত যাবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। ১ মাস বা তিন মাস, যে ক’দিনের জন্যেই ভিসা হোক না কেন, মনে রাখবেন সময়টা শুরু হবে আপনার ভারতে প্রবেশের পর থেকে। টিকেটিং ভিসা পেয়ে গেলে সোজা গিয়ে টিকেট করে ফেলুন। তিনভাবে টিকেট করা যায়। প্রথমত বিআরটিসি-শ্যামলী যৌথ উদ্যোগ অথবা ইন্ডিয়ান সৌহার্দ’র টিকেট করলে সরাসরি কলকাতা পৌঁছুতে পারবেন।

বাস থেকে কোথাও নামতেও হবে না। এমিগ্রেশনেও ঝামেলা কম হয়। তবে আমাদের এবং ওদের এই দুই তরফে বেনাপোল আর পেট্রাপোলে দুইবারে লাগেজসহ পুরো বাস চেকআপ শেষ হতে যে সময় নেয় ততক্ষণে আপনি কলকাতা পৌঁছে চান করে হালকা ঘুম দিয়ে নিতে পারবেন। দ্বিতীয়ত সোহাগ, শ্যামলী, গ্রিন লাইন এবং সৌদিয়া-এস আলমের দুই ভাগে সরাসরি টিকেট পাওয়া যায়। এরা বেনাপোলে নামিয়ে দিয়ে আপনার কপালে একটা স্টিকার লাগিয়ে দিবে।

ওপারে আপনার স্টিকার দেখে নিদৃষ্ট বাস সার্ভিস আপনাকে ডেকে নেবে। এক্ষেত্রেও এমিগ্রেশনে সামান্য চার্জের বিনিময়ে সুপারভাইজার কিছুটা সাহায্য করে থাকে, যদিও বেশিরভাগে হ্যাপা আপনাকেই সইতে হবে। তৃতীয়ত যেকোনভাবে বেনাপোল পৌঁছে এমিগ্রেশন ফেস করে ওপারে গিয়ে আবার নিজ দায়িত্বে কলকাতা যাওয়া। এক্ষেত্রে এমিগ্রেশন, ওপারে গিয়ে ট্রান্সপোর্ট খুঁজে নেওয়া, সব ঝামেলা আপনাকেই নিতে হবে। তবে খরচ অনেক কম।

কলকাতা পর্যন্ত এই তিন ধরণের যাতায়াত ব্যবস্থাতেই মোটামুটিভাবে ১০০০-২০০০ টাকা খরচ হবে। বাংলাদেশ এমিগ্রেশন যাবার সময় বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের জন্য অলমোস্ট কোন ঝামেলা নেই। এমিগ্রেশন অফিসের সাথেই সোনালী ব্যাংকের একটা কাউন্টার আছে, শুক্রবারেও খোলা থাকে। ওখানে বন্দর শুল্ক হিসেবে পাসপোর্ট প্রতি ৩০০ টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে নিন। তবে জমা রশিদের বাইরে ২০ টাকা করে দিতে হবে ফাউ।

কোন কিছু বলে লাভ নেই। এবার নিচে দেওয়া ছবির মত এমবার্কেশন কার্ডটা পূরণ করতে হবে। এখানেই প্রচুর সাহায্যকারী পাবেন লিখে দেওয়ার জন্য। পাঁচ, দশ, পনের বিশ, পঞ্চাশ বা একশ, যার কাছ থেকে যা পারে এরা এভাবে চার্জ নিয়ে থাকে। ফর্ম আপনি নিজেও লিখতে পারেন।

ঢাকাতেও বাসের টিকেট কাউন্টারেই এমবার্কেশন ফর্ম পাবেন। ফর্মে বিদেশে অবস্থানের ঠিকানা নামে একটা ঘর আছে, কোন চিন্তা না করেই জানা একটা হোটেলের ঠিকানা বা পরিচিত যে কোন ঠিকানা দিয়ে দিন। এবার পূরণ করা ফর্মটা এমিগ্রেশনের ভেতরে জমা দিতে হবে। ফর্মের নিচের অংশটুকু অফিসার ফেরত দেবে। এটা সঙ্গেই রাখুন যত্নের সাথে।

আবার বাংলাদেশে ফেরার সময়ে এটা লাগবে। অফিসার পাসপোর্ট ফেরত দিলে ডিপারচার সিল, তারিখ এবং স্বাক্ষর মিলিয়ে নিন। এবার বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পড়ুন ভারতীয় সীমান্তে। প্রথম পর্ব এ পর্যন্তই কলকাতা ভ্রমণ গাইড-২ (তথ্যমূলক পোস্ট) কলকাতা ভ্রমণ গাইড-৩

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।