আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানুষ এক অপরাজিত সত্তা



View this link মানুষের চেহারাটাই হলো তার ভেতরকার দর্পণ। চেহারাতেই প্রস্ফুটিত হয়ে যায় ‘আনন্দ বেদনা দুঃখ সহানুভূতি এবং ভালোবাসা। মানুষ চেহারার ছবি গোপন করতে পারে না। তবে সব সময় নিজেকে লুকিয়ে রাখার একটা প্রয়াস মানুষের মধ্যে অহরহ দেখা যায়। মানুষ যখন ধরা পড়ে যায় তখন তার কৈফিয়ত্ দেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না অনুতাপ ছাড়া।

মানুষ ভালোবাসলেও ধরা পড়ে যায়। কারও প্রতি কোনো বিরূপ মনোভাব থাকলেও সেটা চেহারায় কুঞ্চিত হয়ে ওঠে। এর ফলে মানুষের সবচেয়ে ভয় হলো ভালোবাসাকেই। মানুষ সহজ-সরল নয়। অকপট নয়।

সর্বদাই সন্দেহপ্রবণ এবং নিজের ছাড়া আর সবকিছুতেই উদাসীন। সে যখন বিপদ দেখলে পিছিয়ে আসতে চায় তখন সত্য তাকে সামনের দিকে ঠেলে এবং সে গভীর খাদে ডুবে যেতে যেতে আত্মসমর্পণ করে এবং নিয়তি তাকে আরও একবার সুযোগ দেয়। কিন্তু সে যে বহু কষ্টে এই সুযোগ পেয়েছে এটা সে ভুলে যায়। বার বার ভুল করে বলেই তাকে মানুষ বলে সম্বোধন করা হয় এবং এতে সে দারুণ উজ্জীবিত বোধ করে। সে হাঁটা-চলায় অগ্রসর হওয়ার ভেতর দিয়েই নতুনত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে চায়।

কিন্তু পৃথিবীতে নতুন কিছু নেই। সবই পুরাতন, সবই পরীক্ষিত এবং সবকিছুই শেষ পর্যন্ত মানুষের আত্মতৃপ্তিকেই তার বিজয় বলে মনে করে। তবে ঘোষণা করে না। মানুষ প্রেম নিয়ে প্রথাবিরুদ্ধ কথাবার্তা বলার সময় সে ভুলে যায় যে, সে ভালোবাসার পুতুল এবং একই সঙ্গে অন্যের প্রতিপক্ষ। সে একবার নারীর প্রতিপক্ষ হয়।

একবার পুরুষের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চায়, কিন্তু পরিস্থিতি তাকে কোনোভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে প্ররোচনা দেয় না। ফলে সে সময়মত পতনোন্মুখ হয়েও দাঁড়িয়ে থাকে। এটা-ওটা ধরে টাল সামলাবার প্রয়াস করে চলতে থাকে। এভাবেই টিকে থাকার নাম সে রেখেছে মনুষ্যত্ব। তবে এই জগতে যতরকম লড়াই আছে এসব লড়াইয়ের মধ্যে মনুষ্যত্বের লড়াই সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী।

সে পড়ে যায় না, মরে যায় না, আবার হেরেও যায় না। এই কাজটি শুধু মানুষের জন্যই বরাদ্দ বলে তার মনে হতে থাকে। কিন্তু মানুষ ছাড়াও যারা জীবন সংগ্রামে স্বেচ্ছায় যোগদান করে তাদের সবার মাথা ছাড়িয়ে কেবল তাকেই দেখা যায়। সে বলে, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। ’ তার স্মৃতিতে আছে কেবল পতনের কাহিনী।

এসব কাহিনী সে বুনে তুলেছে ভয়ের ভাবনা দিয়ে। তবে তার একটাই রহস্য, সে যত বিপদেই হোক টাল সামলে নিতে পেরেছে এবং জগেক দেখিয়েছে সে দাঁড়িয়ে আছে। হারিয়ে যায়নি। কেউ তাকে মাড়িয়ে চলতে পারে না। ছাড়িয়েও যেতে পারে না।

এসব কিছুই সে অর্জন করেছে মনুষ্যত্বের আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে। তার পতন হয় না। কারণ সে অহঙ্কারী। তার বিনাশ ঘটে না কারণ সে প্রেমের বাজারে সওদা করতে ঢুকেছে। এভাবেই সে তার অবশ্যম্ভাবী পতনকে ঠেকিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সে মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়।

মানুষের লেবাস, মানুষের ভাষা এবং মানুষের ভালোবাসা তার বুকের ধুকপুকানিকে সচল রেখেছে। সে সব সময় বলে এই তো আমি মানুষ ছাড়া আর কিছু নই। আমি ইচ্ছা করলে অন্য কিছু হতে পারতাম। কিন্তু ভালোবাসার কাঙ্গাল বলে আমি মানুষ হয়েই সন্তুষ্ট থেকেছি। আমি আর একবার জন্মগ্রহণ করব না।

আমি মানুষের জন্মকে সার্থক করার জন্য মানুষ হয়ে একবারই আসি। আমার কোনো শেষ নেই। সীমা নেই। পতন নেই। পরাভব নেই।

আমি শুধু মনুষ্যত্ব জাগ্রত করার ব্রতধারী। মানুষ যেখানে দুর্ভাগ্যের কাছে পরাভূত হয় আমি সেখানে এসে দাঁড়াই এবং পরাজিতকে পরাক্রম প্রদর্শনীতে প্ররোচনা দিতে থাকি। মানুষের আরম্ভ আছে। কিন্তু কেউ জানে না মানুুষের শেষ আছে কি-না। এ জন্যই মানুষকে নিয়ে রহস্যের কোনো সীমা নেই।

পৃথিবীতে সজীব-সপ্রাণ এবং সাহসের মর্যাদা থাকলে মানুষ থাকবে। মানুষ হলো এক অপরাভূত দিগ্বিজয়ীর দৃষ্টান্ত। সে ইতিহাস সৃষ্টি করে কিন্তু তা লিপিবদ্ধ করার জন্য কাউকে পীড়াপীড়ি করে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.