আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসইসি চেয়ারম্যান বললেন তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাতমূলক ও নিষ্ঠুর।তদন্তে তারও নাম এসেছে কিনা!



পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পক্ষপাতমূলক, অবিবেচনাপ্রসূত ও নিষ্ঠুর বলে মত দিয়েছেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান মনে করেন, প্রতিবেদনটি সাধারণ ধারণার ওপর ভিত্তি করে রচিত এবং এটি যথেষ্ট তথ্যভিত্তিক নয়। এমনকি প্রতিবেদন অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও খুব সহজ হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব পর্যালোচনায় এসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এই মতামত চেয়ারম্যান নিজ স্বাক্ষরে দিয়েছেন, কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়নি। এ পর্যালোচনা সম্পর্কে জিয়াউল হক খোন্দকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত গতকাল রোববার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, মতামতের জন্য মূল তদন্ত প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ ব্যাংক ও এসইসির কাছে পাঠানো হয়েছিল। এসইসির মতামত এসেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত এলেই তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের এক বৈঠকে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রায় একই ধরনের মতামত এসেছে।

বৈঠকে ডিএসইর একাধিক পরিচালক তদন্ত প্রতিবেদনকে নিম্নমানের দলিল হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, সরকারের মানহানির জন্য এ প্রতিবেদনটিই যথেষ্ট। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে ডিএসইর ব্যাপারে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীণভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জটির নির্বাচিত ও মনোনীত পরিচালকদের নিয়ে গঠিত এ কমিটি ডিএসইর মাধ্যমে তথ্য পাচারসহ ডিএসইর কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তা খতিয়ে দেখবে। ডিএসইর পরিচালক আহমদ রশীদ লালী কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানা গেছে, বৈঠকে পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটিকে ডিএসইর যেসব কর্মকর্তা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে।

তবে অল্প কয়েকজন পরিচালকের বাধার কারণে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এসইসির চেয়ারম্যানের পর্যালোচনা: তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে জিয়াউল হক খোন্দকার বলেছেন, তদন্ত কমিটি তাঁদের প্রতিবেদনে ব্যাপকভাবে পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক উত্থান-পতনের জন্য এসইসিকে দায়ী করেছেন। কিন্তু যেসব বিষয়ে এসইসিকে জড়ানো হয়েছে তা সম্পর্কে কখনোই সংস্থাটির কোনো ব্যাখ্যা নেওয়া হয়নি। ব্যাখ্যা নিলে তদন্ত প্রতিবেদনটি তথ্যভিত্তিক হতো। পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে ‘ক্যাপিটাল ইস্যু’ বিভাগ সবচেয়ে বেশি সমালোচিত করা হয়েছে।

কিন্তু তদন্ত কমিটির সুপারিশে একজন নির্বাহী পরিচালক এবং চেয়ারম্যানের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট সদস্যের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সদস্যের অনুমোদন ছাড়া কোনো কিছুই কমিশনের বিবেচনায় নেওয়া বা অনুমোদন করার কোনো অবকাশ নেই। এসইসির প্রধান আরও বলেছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এবারের পুঁজিবাজারের ধস সম্পর্কে ’৯৬-এর ধসের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে, এবারের ধস ’৯৬-এর ধসের মতো নয়। বর্তমান ধসের মূল কারণ প্রাথমিক বাজার। কিন্তু তত্ত্বগতভাবে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল।

প্রকৃতপক্ষে সেকেন্ডারি বাজারের মূল্যস্ফীতির (যা চাহিদা-সরবরাহের অসামঞ্জস্যতা থেকে সৃষ্ট) কারণে প্রাথমিক বাজারে বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অথচ তদন্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, প্রাক-আইপিও মূল্য কেলেঙ্কারি রোধ করতে এসইসি ব্যর্থ না হলে সম্ভবত এবারের বাজার ধস হতো না। এটি সঠিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং প্রাথমিক বাজারের তারল্য যদি সেকেন্ডারি বাজারে ধাবিত হতো তাহলে সেকেন্ডারি বাজারে মূল্যস্ফীতি আরও ব্যাপক হতো। পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, মুদ্রানীতি তথা মুদ্রা সরবরাহ শেয়ারবাজারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে বাজারে তারল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে ব্যাংকের ভূমিকা এবং নভেম্বর ২০১০-এ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এর ফলে পুঁজিবাজারের প্রভাব সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।

একটি দৈনিকে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেছেন, এসইসির ওপর থেকে যেন দৃষ্টি অন্যদিকে প্রবাহিত না হয় সে জন্য তিনি সচেতনভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। বিষয়টি সত্য হলে তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। প্রতিবেদনে এসইসিতে কর্মরত কেবল একজনের বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্তসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। অথচ প্রতিবেদনে সমগ্র প্রতিষ্ঠানকে ঢালাওভাবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হলো। গণমাধ্যমে কোনো প্রমাণ ছাড়া দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তির ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবলের ওপর কী ধরনের প্রভাব বিস্তার করবে তা বিবেচনা করার বিষয়টি খুবই নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে পড়ে।

তা ছাড়া প্রতিবেদনে এসইসিকে মূল্য নির্ধারণ, সম্পদ মূল্যায়ন ইত্যাদি যেভাবে পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে তার নজির কোনো পুঁজিবাজারে নেই। সামান্য কিছু নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাদ দিলে পৃথিবীর প্রায় বেশির ভাগ দেশে এসব বিষয়ের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষে কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের ঢালাও সুপারিশ এসইসির ভবিষ্যতের কাজের ধারাকে শ্লথ করে দেবে। পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, এসইসি তার বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকেই সব কাজ করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের কোথাও এসইসি তার কোনো আইন লঙ্ঘন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার একটি নজিরও দেখাতে পারেনি।

কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইনের কাঠামোর বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া প্রতিবেদনে কোনো প্রমাণ ছাড়া সিন্ডিকেশনের সঙ্গে এসইসির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার চেষ্টা সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছুই নয়। আবার প্রমাণ ছাড়াই এসইসির প্রত্যক্ষ সহায়তায় কারসাজি ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সম্ভবত এসইসির শীর্ষ নির্বাহীদের সংশ্লিষ্টতায় এ কাণ্ডগুলো ঘটেছে। ‘সম্ভবত’ শব্দ ব্যবহার করায় বোঝাই যাচ্ছে তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে নিশ্চিত নয়।

নিশ্চিত না হয়ে এ ধরনের ঢালাও অভিযোগ তদন্ত কমিটির উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এসইসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) অনুমোদন নিয়ে কোম্পানি রাইট শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব এসইসির কাছে পেশ করার পর সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত কোম্পানি এ সংক্রান্ত সংবাদ অনলাইনে দিতে পারবে না বা অন্য কোনোভাবে প্রচার করতে পারবে না বলে কমিটি সুপারিশ করেছে। পুঁজিবাজারের সাধারণ কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার ফলে কমিটি এ ধরনের সুপারিশ দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রাইট শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে যেদিন অনুমোদিত হবে, সেদিন তথ্য প্রকাশ না করলে ব্যাপকভাবে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের (সুবিধাভোগী লেনদেন) সুযোগ সৃষ্টি হবে। এসইসি ২০১০ সালে ৮১টি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তদন্ত প্রতিবেদনের এ তথ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ সংখ্যাই প্রমাণ করে এসইসি তার সামর্থ্য অনুযায়ী সেকেন্ডারি বাজারকে একটি পর্যায়ে রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকও যদি একইভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ শুরু থেকেই আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করত, তাহলে সম্ভবত এ বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হতো। এ ছাড়া প্লেসমেন্ট শেয়ার ও অমনিবাস হিসাব সম্পর্কেও তদন্ত কমিটির ধারণা পরিষ্কার নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ডিপজিটরি আইন এবং বিধি অনুযায়ী অমনিবাস হিসাব সম্পূর্ণভাবে বৈধ একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা। ডিএসইর বৈঠক: বৈঠকে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের অনেকে বলেছেন, প্রতিবেদন থেকে বাজারে ধসের কারণ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। বিনিয়োগকারীরা জানতে চান, কেন বাজারে ধস নেমেছিল।

কমিটি তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বৈঠকে এক পরিচালক বলেন, কোনো ধরনের শুনানি ছাড়াই শতাধিক ব্যক্তির নাম দেওয়া সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক। আবার প্লেসমেন্ট নিয়ে পরিচালকেরা বলেন, এটি বৈধ বিষয়। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া প্লেসমেন্ট নেওয়ার অভিযোগে নাম প্রকাশ করা অনুচিত। Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.