আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজের ছায়ার মতো একা আমি

এইটা আমার পারসোনাল ব্লগ, কারো ভাল না লাগেল দুঃখিত
শুক্রবার, অফিস যাওয়াটা অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন, কেননা শুক্রবার অফিস বন্ধ, অফিস না যাওয়ার জন্য কাউকে কৈফিয়ত দেয়া লাগবে না। এমন সুখ সুখ ব্যপার নিয়ে শেষ রাতটা নির্ঘুম বিলাসিতায় কাটিয়েছি। শেষ কবে এমনটা হয়েছিল, ছাত্রাবস্থায়, প্রেমিকার চলে যাওয়ায়, প্রেমে পড়ায়, বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, বোনের বিয়ের হলুদে, আর যাই হোক অনেকদিন এমন নির্ঘুম থাকার বিলাসিতা করতে পারিনি। এমন ভাবতে ভাবতে রাতের অনেকটাই কাটে, মাঝরাতের পরও দু একটা বন্ধুকে অনলাইনে পাওয়া যায়, তারাও বুঝি আমার মতোই বিলাসী, রাত বাড়ে আর তারা আকাশ থেকে খসে যাওয়া নক্ষত্রের মতো বিলীন হয়ে যায়। আমি লাইনের পর লাইন লিখে যাই, কেউ কেউ এক দুটা শব্দে উত্তর দেয় কেউ খামখেয়ালি করে, কোনো উত্তর আসে না, আমি বিরক্ত হই, অভিমানো বুঝি করি, তাই তাদের আর কিছুই লিখি না।

ভাবি শেষবার কবে এমন নির্ঘুম বিলাসিতার সুযোগ এসেছিল, না অনেকদিন আসেনি, না মনে করতে পারছিনা। আনন্দে মনটা ভাসে। তাই কোনো বন্ধু না থাকার, কোনো উত্তর না আসার দুঃখ থাকে না। বাহ্ খানিকটা অস্থিরতা টের পাই বুকের ইকটু নিচে, বলা ভালো খানিকটা নিচে, কাহিনী কি, মাঝ রাতে আবার শরীর খারাপ করছে নাতো ? এতো রাতে ডাক্তার কই পাবো, আরে ডাক্তার, আগে তো তার কাছে পৌঁছাতে হবে, বাসায় তো কেউ নাই, যে হেল্প করবে। নানা কোনো ভাবেই শরীর খারাপ হতে দেওয়া যাবে না।

অস্থিরতা বাড়ে, নিজেকে নিজে বুঝাই, অস্থিরতার কারণ আর উৎসটা খোঁজার চেষ্টা করি, বিজ্ঞ ডাক্তারের মতো। মনে হয় পাকস্থলির কাছাকাছি, উৎসটা। ইন্টারনেটের মেঘে হারিয়ে যেতে চেষ্টা করি, যাতে ভুলে থাকা যায় অস্থিরতাটা। নিজেকে দোষ দেয়ার চেষ্টা করি, মধ্যবিত্তদের এমন বিলাসি হতে নাই, সবার জন্য সব না। তখন নিজেকে শ্রেণীবাদী মনে হয়।

হঠাৎ ক্লান্ত মনে হয়, কিছু খাওয়া দরকার। না অস্থিরতাটা আসলে পাকস্থলির কাছাকাছি না, পাকস্থলিতেই, খিদা লাগছে। বিছানা আর ল্যাপটপ ছেড়ে পাশের রুমে যাই, হালকা আলোয় অন্ধকারটা আরো গাঢ় মনে হয়, তাতেই চোখ পড়ে, পিকাসোর "ওল্ড গিটারিস্ট" তৈল চিত্রটার উপর, ভদ্রলোক নিজের মতো একটা গিটার বাজিয়ে যাচ্ছেন। ভালই বাজাছেন বোধ করি, এতো বয়স্ক একজন মানুষ, অনেকদিন ধরে বাজান মনে হয়, আমার বাসায় পেন্টিংটা এসে দেয়ালে জায়গা করে নিয়েছে তাও প্রায় এক বছর হবে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা টোস্ট বিস্কুট বের করে কামরাতে থাকি, সাথে পানি পান, বাহ্ জোশ জোশ মাঝ রাতে খাবারের সাথে গিটার বাজানো শোনা আর সকালে অফিসে না ছোটার তাড়া।

চা হলে ভালো হতো, কিন্তু আমি চা বানাতে পারি না, আর ডাক্তারের কাছে গেলে তার বাসায় চায়ের আবদার করতে পারতাম, এখন কোনো উপায় নাই, তাই ভুলে যাওয়া ভাল। "ওল্ড গিটারিস্ট" কে বলবো নাকি এক কাপ চায়ের কথা, উনি হয়তো পারতে পারেন। না থাক, নিজেকে সংবরন করি। আর ভোর রাত চারটায় চা খেয়েছি শুনলে আম্মা রাগ করবেন। না রাগ নাও করতে পারেন, শেষবার তো আম্মা নিজে আমাকে রাত বারোটায় চা বানিয়ে দিয়েছিলেন, সে এক বিশাল অর্জন, আগে তো, সন্ধ্যার পর চা খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।

না আম্মা মনে হয় রাগ করবেন না। আর জানলেতো রাগ করবেন। ফোনে যখন মাঝে মাঝে তিন চার মিনিট কথা হয় তখনতো শুধু খুব জরুরি কথা গুলো হয়। আমি হিসাব করে দেখেছি প্রতিদিন যদি এবটা মানুষের সাথে দেখা হয় এবং শুধু কুশল বিনিময় হয় তাতে যে সময় লাগে, সাতদিনে মোট যে সময় লাগে তার চেয়ে কম সময় সপ্তাহে আম্মার সাথে কথা হয়। আমি প্রতিদিন আমার দ্বি-মাত্রিক অংশটার সাথে কুশল বিনিময় করি, বিশেষ করে যে দিন অফিসের কলিগ ছাড়া আর কারো সাথে দেখা হয় না।

এইটা অবশ্য প্রায় প্রতিদিনই হয়। মূল লিংক রোডটা থেকে ডানে মোড় নিলে আমার বাসা, মোড়ের কোনাটায় একটা ল্যাম্প পোস্ট আছে, এইটার অনেক ক্ষমতা, পোস্টাকে পিঠ দেখিয়ে দাঁড়ালে মজাটা শুরু হয়, রাস্তার উপরে আমার দ্বি-মাত্রিক অংশটা তৈরী করে দিতে পারে এই পোস্টা, ল্যাম্প পোস্টা তাই আমার অনকে ভাল লাগে, আসলে তার যাদুকরী ক্ষমতাতে আমি মুগ্ধ। তারপর আমার দ্বি-মাত্রিক অংশটার সাথে কুশল বিনিময় করি, প্রয়োজন মতো সামনে পিছনে করে অংশটাকে বড় ছোট করি, আঁকাবাঁকা করি। সৃষ্টির আনন্দে শিহরিত হই।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.