আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টাকা হলেই স্কুলে ভর্তি মেধার বালাই নেই!



অভিযোগ আছে, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে লাগে ৬০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সে অঙ্ক ১৫ থেকে ২০ হাজার। হারম্যান মেইনর স্কুল অ্যান্ড কলেজে টাকা নয়, প্রভাবশালী ব্যক্তির ফোনে ভর্তি করানো যায়। অবৈধ উপায়ে ভর্তিবাণিজ্যের এ চিত্র গত জানুয়ারির। প্রতি বছর টাকার অঙ্ক বাড়ছে।

সেসঙ্গে বাড়ছে ভর্তিবাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্ব। মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার নিয়ে স্থানীয় দুই সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার এবং ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। স্কুলগুলোয় টাকা আর ফোনের জোরে ভর্তি হওয়া কম মেধার শিক্ষার্থীদের কারণে এক সময়ে ভালো ফল করা প্রতিষ্ঠানগুলো চলে গেছে মধ্যম মানে। মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি হয়। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্থানীয় সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারের আশীর্বাদপুষ্ট বর্তমান স্কুল পরিচালনা কমিটি ভর্তিবাণিজ্যে এবং অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নতুন শ্রেণীতে ভর্তিতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

তারা জানান, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ মেধা, ৩০ শতাংশ ডোনেশন এবং বাকি ৩০ শতাংশ অবৈধ ডোনেশন ও লবিংয়ে ভর্তি হয়। এ বাণিজ্যে স্কুলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকও জড়িত। গত বছর বার্ষিক পরীক্ষায় যারা অনুত্তীর্ণ হয়েছিল এই মধ্য এপ্রিলেও টাকার বিনিময়ে তাদের নতুন শ্রেণীতে ভর্তি করা হচ্ছে। এমনকি শেওড়াপাড়া শাখায় এখনও শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, মিরপুর অঞ্চলে সরকার স্বীকৃত স্কুলের সংখ্যা ৬৭টি, কলেজ ১৫টি, মাদ্রাসা ৭টি এবং স্কুল ও কলেজ ৯টি।

এর মধ্যে একটি সরকারি স্কুল ও একটি কলেজ আছে। সব প্রতিষ্ঠানে মোট কতজন শিক্ষার্থী আছে সে তথ্য নেই জেলা শিক্ষা অফিসে। তবে তা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন ও প্রি-ক্যাডেট স্কুল ও মাদ্রাসার সংখ্যা জানেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার, জেলা শিক্ষা অফিসার বা সিটি করপোরেশন। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইস্কান্দার আলী হাওলাদার বলেন, এ অঞ্চলে প্রায় দুইশ' কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে।

প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ছয়টি। ভর্তিবাণিজ্য : বড় বড় স্কুলগুলোর শাখা খোলা এবং শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সাংসদ, ওয়ার্ড কমিশনার, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক প্রতিনিধি_ এই চতুর্মুখী চক্রের কবলে মিরপুরের শিক্ষাব্যবস্থা। ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দেওয়া তথ্যমতে এ মুহূর্তে স্কুলটির মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ হাজার ২২৬ জন।

চারটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে। একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, তার সন্তান মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। গতবার পরীক্ষা দিয়েছিল কিন্তু পাস করতে পারেনি। তাই এবার পরীক্ষার আগে শিক্ষকদের নির্দেশিত স্কুল সংলগ্ন একটি কোচিংয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং যেসব প্রশ্ন পড়ানো হয়েছিল তার মধ্য থেকে মাত্র তিনটি প্রশ্ন মেলেনি। বাকি সব মিলেছে।

অন্য অভিভাবকরা জানান, প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় ডোনেশন, শিক্ষকদের নিজস্ব কোচিং সেন্টারে প্রস্তুতি নেওয়া, ভর্তির পর শিক্ষকদের কাছে ব্যাচে পড়তে হয়। বাকি স্কুলগুলোর বেহাল দশা : মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, ন্যাশনাল বাংলা হাইস্কুলে প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ভিন্ন চিত্র পাশের জান্নাত একাডেমী হাইস্কুল, আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, প্রগতি হাইস্কুল, বশিরউদ্দিন আহমেদ হাইস্কুলসহ বেশকিছু স্কুলে আসনের তুলনায় শিক্ষার্থী কমে গেছে। এ কারণে শিক্ষকরা প্রতি মাসে সময়মতো এবং পুরো বেতন পান না। ওইসব স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, প্রতি স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হলে সমস্যার সমাধান হবে।

স্কুলগুলোর পরীক্ষা বাণিজ্য : মিরপুরের স্কুলগুলোর আরেকটি বাণিজ্য প্রি-ক্যাডেট এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার সুযোগ করে দেওয়া। প্রতিবছর প্রায় একশ প্রি-ক্যাডেট ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থী নবম শ্রেণীতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়। কিন্তু বাস্তবে তারা প্রি-ক্যাডেট এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলেই ক্লাস করে। শুধু দশম শ্রেণীতে নির্বাচনী এবং এসএসসি পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেয়। এ সুবিধা করে দেওয়ার বিনিময়ে স্কুলগুলোর পরিচালনা কমিটি ও প্রভাবশালী শিক্ষকরা প্রতি বছর হাতিয়ে নেয় কয়েক লাখ টাকা।

প্রাইভেট পড়ানো : ক্লাসে মন নেই শিক্ষকদের। কিছু সময় কাটিয়ে ব্যাচ ভিত্তিতে পড়ানোর উদ্দেশ্যে বাসায় ছোটেন। সকালে স্কুল শুরুর আগে এক ঘণ্টার একটি ব্যাচ, তারপর স্কুল এবং স্কুল শেষে সারাদিন ব্যাচ পড়ানো। এভাবেই চলছে মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, ন্যাশনাল বাংলা স্কুল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ স্কুল, এমডিসি মডেল স্কুলসহ বেশ কিছু বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। অতীতে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা বোর্ডে ভালো ফল করলেও এখন সে সাফল্য ভাঙিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বালিকা শাখার এক শিক্ষক জানান, স্কুলে শিক্ষকদের সংখ্যা প্রায় দেড়শ'। অধিকাংশই প্রাইভেট এবং ব্যাচে পড়িয়ে মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করেন। শুধু ব্যাচে পড়ানোর উদ্দেশ্যে কেউ কেউ দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি জানান, শিক্ষক সমিতি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, কল্যাণ তহবিলসহ কয়েকটি খাতে তারা মাসে ত্রিশ থেকে চলি্লশ হাজার টাকা জমা করেন। তিনি আরও জানান, একেকটি ক্লাসে ৭০ থেকে ৮০ শিক্ষার্থী থাকে।

৪০ মিনিটে সবাইকে বোঝানো সম্ভব নয়। তাই অনেকেই ব্যাচে পড়ে। পাঠ্যবই নির্ধারণ বাণিজ্য : বোর্ড নির্ধারিত আবশ্যিক পুস্তকের পাশাপাশি স্কুলগুলোও কিছু সহপাঠ্য বই নির্ধারণ করে। স্কুলের শিক্ষকরা এসব বই নির্ধারণ করলেও এখন সেখানে থাবা বসিয়েছে অভিভাবক প্রতিনিধিরা। মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, প্রগতি হাইস্কুল, এমআই হাইস্কুল, আব্বাসউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি স্কুলে কোন বই সহপাঠ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হবে তা স্কুল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নির্ধারণ করছেন।

অভিযোগ আছে, বই নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রকাশকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হয়। সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার হস্তক্ষেপে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একই এলাকায় মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। স্কুলের শিক্ষক এবং অভিভাবকরা নির্বাচন চাইলেও স্থানীয় সাংসদের কারণে সেখানে নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। আবু তালেব উচ্চ বিদ্যালয়, আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়সহ সাংসদের নির্বাচনী এলাকার স্কুলগুলোর শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বোর্ডের বইয়ের পাশাপাশি কী বই পড়ানো হবে তা তিনি জোর করে নির্ধারণ করে দেন।

এ জন্য প্রকাশকদের কাছ থেকে গত বছর লাখ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। মিরপুর অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার অনিয়ম সম্পর্কে ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আবদুস সামাদ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এখনও পাইনি। তবে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত করেছে। কিন্তু স্কুলটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এখনও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, স্কুলের পরিবেশ, শিক্ষকদের আন্তরিকতা থাকলে একটি প্রতিষ্ঠানে ভালো শিক্ষার্থী পাওয়া সম্ভব।

স্থানীয় দুই সাংসদ যা বললেন স্থানীয় সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, 'এলাকার উন্নয়ন বিশেষ করে শিক্ষা বিস্তারে চেষ্টা চালাচ্ছি। এক বছরের মধ্যে এলাকায় নিজস্ব জায়গায় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে পেরেছি, যা কোনো মন্ত্রীও করতে পারেননি। ' মনিপুর স্কুলের শাখাগুলোতে উচ্চ হারে ডোনেশন (উন্নয়ন ফি) নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ অর্থ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা নেওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে এ উদ্যোগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিবাণিজ্য হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।

সাংসদ ইলিয়াসউদ্দিন মোল্লা বলেন, কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। স্কুল পরিচালনা কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কারও কাজে হস্তক্ষেপ করা হয় না। বরং কামাল আহমেদ মজুমদার উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। সরকারি জায়গায় নিজের নামে স্কুল করেছেন।

সাংসদ ইলিয়াস মোল্লার নির্বাচনী এলাকায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারের নামে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইলিয়াস মোল্লা সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম পাল্টানোর জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। মিরপুর ৭ নম্বর ও রূপনগর এলাকায় সরকারি জমির ওপর কামাল আহমেদ মজুমদারের নামে স্কুল ও কলেজ তৈরি করা হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বাড়তি বই আনার অভিযোগ রয়েছে। কামাল মজুমদার বলেন, 'আমার নিজের টাকায় বঙ্গবন্ধু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।

বিএনপি আমলে ওই কলেজের গভর্নিং কমিটির সভাপতি ছিলেন ইলিয়াস মোল্লার ভাই তখনকার সরকার দলীয় নেতা এখলাস মোল্লা। এরপরও তখন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমার ছবি সেখানে ছিল। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এখন আমরা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ওই ছবি নামিয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে ইলিয়াসের ছবি টানানো হচ্ছে। এছাড়া কালশী স্কুলের গেট আমার নামে ছিল।

ওই গেট ভেঙে ইলিয়াস মোল্লা নিজের নামে করছেন। কামাল মজুমদারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইলিয়াস মোল্লা। তিনি বলেন, কালশী স্কুলের গেট ভাঙার সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। বঙ্গবন্ধু কলেজ নিয়ে তার অভিযোগও সঠিক নয় বলে দাবি করেন ইলিয়াস মোল্লা। Visit online shopping cosmetics there are many products you can buy here any time for this product. Bath & Shower, Fragrances, Gift Sets, Hair, makeup, clothing rights, skin care. http://astore.amazon.com/beauty0c1b-20


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.