আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কি কাজীর কাজও করতে হবে?



কেউ রাগ করবেন না যেন। মূলত: এখানে খবরে প্রকাশিত মূল ঘটনাকে রসরচনায় রুপান্তরের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে মাত্র। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি খবরে চোখ আটকে গেল। এখানে জনৈক মজনু তার কাংখিত লাইলির সাথে এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে বিয়ে দেয়া না হলে আত্মহত্যা করার মত ভয়ঙ্কর এক হুমকি দিয়েছেন। সাথে সাথে তিনি একথাও স্মরন করিয়ে দেন যে, এজন্য দায়ী থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে উনার এই কাজের অগ্রগতি ইতোপূর্বে রাবি প্রশাসনকে উনি জানিয়েছিলেন কিনা তা অবশ্য ওখানে উল্লেখ করা হয় নি। যাই হোক, ঘোষণার আলোকে এর একটা rehearsal তিনি অবশ্য করেই ফেলেছেন। উনার লাইলিকে দেয়া শর্ত মোতাবেক নিজ হাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার কসরত তিনি করেছেন। নাচ্চার সহপাঠিরা! একটু শান্তিতে চলে যেতেও দিল না। রাবির রবীন্দ্র ভবনের ছাদে অনবদ্য এই শো অনুষ্ঠিত হয়।

গত ১৩ মার্চ। প্রেমের ব্যার্থতা ঘোচানোর কসরত হিসেবেই রাবির তথ্য ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আশিকুর রহমান। এমবিএ'র সুরভী বড়ই বেচায়। একেবারে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণই দিয়ে দিল। মজনু অবশ্য অনেকটা অনঢ়।

সইতে না পেরে যখন একেবারে দুনিয়া ছাড়ার প্রস্তুতি শেষ করেছে তখন হতচ্ছাড়া সহপাঠীদের নগ্ন হস্তক্ষেপে মজনুর সে যাবার পথ রুদ্ধ হলো। এতে লাইলী সুরভীর অনুভুতি কি তা জানি না। কিন্ত মজনু আশিক একদন desperate. তার এক্কেবারে সাফ সুতর ঘোষণা - 'ইবেল্লগে আঁর সাদি না দিলে আঁই আত্মহত্যা গইজ্জুম। আর ইল্লে দায়ী থন ফরিবো রাবি প্রশাসন সলের। ' দাবী বটে! দাবীর জোরালো যুক্তি তুলে ধরতেও ভুল করেন নি বেচারা মজনু।

বন্ধু বান্ধবে নয়; সরাসরি মিডিয়া কর্মীদের কাছে দ্ব্যার্থহীন ভাষায় ঘোষণা দেন - 'সুরভীর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। আমি তাকে এমবিএতে ভর্তি করানোর জন্য সব রকম চেষ্টা করেছি। ' আহা বেচারা! এরপরো যে কাজ একটু বাকি রয়ে গেছে। একটা গিট্টু দিয়ে রাখলে তো আর ....। সে যাই হোক, এতো তকলিফ যার জন্য করলো, সে কিনা ইল্লে গরের।

ইবে গম ন গরের। তবে আর যাই হোক, সেদিন রমনা পার্কে জনৈক লাইলী-মজনুর .... আলোচনার কোন এক বিন্দুতে 'তার ছিড়ে' প্রকাশ্য দিবালোকে আরো কতোক যুগলের চোখের সামনে 'চুল ধরে টানা আর গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানোর চেষ্টার মত কোন কিছু যে এই আশিক মজনু করেন নি এজন্য লাইলি সুরভীর পক্ষ থেকে তাকে মোবারকবাদ জানাতে চাই। তবে বিপত্তি সেখানেও নয়; অন্যখানে। নির্ভীক আশিক প্রশাসন সহ সাংবাদিকদের পর্যন্ত তার পেয়ারের সার্বিক ধারা বর্ণনা করতে পারলেও ভীতু লাইলি তা পারলো না। যার ফলশ্রুতি এই যুগলের চলার পাথের মাঝের নদী হয়ে দেখা দিল।

অনেকটা - এই কূলে আমি, আর ওই কূলে তুমি, মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়.... এর মত। seasonal পিরীতি ক্যাম্পাসের প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লো। বাবা-মা হয়তো মেয়ের এ যাত্রাপথের কথা জেনেই নিজেদের নারাজির বহিপ্রকাশ হিসবে পারিবারিক ভাবে মেয়ের সাদীর সমূহ ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেন। আর লাইলীও এ যাত্রায় মোটামুটি হয়তো হাফ ছেড়ে বাঁচে। নিজের বিয়ের খবর নিয়ে ধরনা দেয় মজনুর দরবারে।

জানান দেয়, অতি সত্বর তার বিয়ের পিঁড়িতে বসার সুসংবাদের। সাথে সাথে এটাও এ'লান করে - incase if otherwise সে আত্মহত্যা করবে। কিন্তু মজনু কি আর ওর মত অতো সহজে হাল ছেড়ে দেয়ার কেউ? তারও সাফ ঘোষনা - পিয়ারের এই মধুর সম্পর্ক সে কিছুতেই ছিন্ন করতে পারবে না। তবে একটা শর্তে সে লাইলী সুরভীকে সম্পর্ক ছিন্ন করার আশ্বাস দেয় - তা হলো 'আমাকে ছেড়ে যেতে হলে ‌থাপ্পড় দিতে হবে এবং তোমার সামনে আমার মৃত্যু দেখতে হবে। ' অনেকটা পুতুল খেলা গোছের এই প্রস্তবনা লাইলীর মতপুত হলো।

শর্ত মোতাবেক এবার execution এর পালা। মঙ্গল বার। দুপুর সাড়ে বারোটা। স্থান রাবি'র রবীন্দ্র হলের ছাদ। কোন পরিচালক ও ক্যামেরা ম্যান ছাড়াই শুরু হলো 'শুটিং'।

মজনুর শেষ ইচ্ছা মোতাবিক উনাকে উনার কাঙ্খিত 'থাপ্পড়' উপহার দেন লাইলী। বাকী অংশ অবশ্য উনার পালন করার পালা। অগত্যা উনিও দরের বাজারে দামী কেরোসিন তার চেয়েও দামী শরীরে ঢেলে দেন শর্তের বাকী অংশ পূরণের তীব্র আকাংখা বুকে নিয়ে। কিন্ত না, সহপাঠিরা তা আর হতে দিল না। শর্ত পূরণ করার আগেই তারা পাকড়াও করলো মজনুকে।

তারা আগে থেকেই ওঁত পেতে ছিল কিনা, নাকি লাইলীই তাদেরকে চৈতের এই ভর দূপুরে নীরব এই ছাদে সমবেত হতে সহায়তা করেছিল তা জানার চেষ্টা করিনি। ওরা ছুটে এসে তাদের উভয়কে রাবি প্রোক্টর অফিসে নিয়ে যায়। অনাকাঙ্খিত এই পরিস্থিতিতে মজনু আশিক অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সাংবাদিকদেরকে তার পিছনের রঙিন দিন গুলোর বর্ণনা দিয়ে লাইলী ছাড়া বাঁচবেন না মর্মে আবারো ঘোষণ দেন। কিন্তু বেচারী লাইলী - একেতো প্রোক্টর অফিস, তার উপর সাংবাদিক কারো কাছেই এমন ঘোষণা দিতে পারলেন না। তিনি পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে বলেলেন - 'তার সঙ্গে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।

' ঘটনার ব্যপারে রাবি প্রোক্টর চৌধুরী মো. জাকারিয়া মজনু আশিককে তার গ্রামের বাড়ি অংপুরে পাঠানোর কথা জানান। তবে লাইলীকে কোথায় পাঠিয়েছেন জানি না। যাকে যেখানেই পাঠানো হোক, তিনি ব্যাপারটি নিয়ে উভয়ের (লাইলী ও মজনুর) অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন যা জানার বাকী থেকে যায়, তা হলো - তিনি কি তাহলে তাদের বাকী কাজটি সমাধা করার ব্যাবস্থা করবেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.