আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝড়ের রাতে এক দিন

আগুনে পুড়েই ইস্পাত বিশুদ্ধ হয়

২৯। ০৩। ২০১১ হাতে থাকা ডিজিটাল ঘড়ি টিপে দেখলাম ৮.৫৫(pm) বাজে। পর দিন কম্পিউটার ল্যাব এ স্যার কে ফাইনাল প্রজেক্ট জমা দিতে হবে। কিন্তু রাতে দেখি সেই সফটওয়ার টাই নাই, যেটা তে কাজ টা করা হবে।

হে !! হে !! কি ছাত্তর ই না আছিলাম। যাই হোক, মনে পড়ল কাছেই এক বান্ধবি থাকে। ও ই এক মাত্র ভরসা। মেঘ তখন বেশ জোরে শোরেই চিৎকার দিয়ে বলেছিল,"১৪৪ ধারা কইলাম জারি করছি। " কিন্তু কোন উপায় নাই, আমাকে যেতেই হবে।

ভেবে দেখলাম যদি রিক্সা বা সাইকেল এ যাই তাহলে আজ বাইরেই রাত কাটাতে হবে। তাই আর কিছু না ভেবে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাতে বাসায় ফিরতে হবে ভেবে বাইক বেশ জোরেই চালাচ্ছিলাম। আর বয়স অল্প, তাই রক্ত ও গরম। রাস্তা র লোকজন ও সেটা বুজতে পারছিল সেদিন।

পথে মাঝে মাঝেই ব্রেক করা লাগছিলো কিছু রিক্সাওয়ালাদের জন্য। তাই ব্রেক এর স্পীড আর মনে মনে গালির স্পীড সেম ছিল। ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তাই ট্রাফিক পুলিশ এড়াতে চিপা চাপা দিয়ে কোন মতে বান্ধবির বাড়ি পৌছাইলাম। কিন্তু ওর বাড়ি গিয়ে সেই সফট টা পাইলাম না।

মেজাজ টা থারমোমিটার বাস্ট করার মত খারাপ হয়ে গেল। ওর বাসা থেকে বের হব, এমন সময় ওর বাবা এসে বললেন, "আঙ্কেল, বৃষ্টি টা থামার পর গেলে ভালো হতো। " আমি বললাম বৃষ্টি আসার আগেই বাসায় চলে যাব। বাসা থেকে বের হয়ে বাইক এ কিক মারতেই ঠান্ডা বাতাসের গন্ধ পেলাম। বুঝতে পারলাম কপালে আজ দুর্ভোগ আছে।

বাসার গলি টা পার হতেই দমকা হাওয়া। বাতাসের বেগ দেখে বুঝলাম আর যা ই হোক মেইন রোড এ ট্রাফিক সার্জেন্ট থাকছে না। তাই আর চিপা চিপা না সোজা মেইন রোডেই দিলাম টান। ভাঙ্গাচুরা রাস্তায় চালানর জন্য এনালগ স্পীডও মিটার টা নষ্ট হয়ে গেছিল। তবে গিয়ার নাম্বার আর বাইকের গর্জনে বুঝতে পারছিলাম স্পীড ৭৫+ কিমি/ঘন্টা।

রাস্তায় দমকা হাওয়া আমাকে বাম দিক থেকে ডান দিকে সজোরে ঠেলে নেবার চেস্টা করলো। কিন্তু বাইকের স্পীড আর ওজন তা হতে না দেয়াতে বাম পাশে একটা বল অনুভব করলাম। ততক্ষনে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এভাবে দুই মিনিট মত লাগল একটা মোড়ে আসতে। মোড়ে আসার একটু আগে বাতাস আর বৃষ্টির অভাবনীয় খেলায় মনে হলো দুটো হেডলাইটের আলো একবার কাছে আসছে আবার একটা আর একটা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

প্রথমে ভাবলাম দুইটা বাইক আসছে, মাঝখান দিয়ে ই যাই। পরে ভাবলাম থাক পাশ দিয়ে এ যাই। বাম পাশের লাইট টা কে কয়েক সেন্টিমিটার দূরত্ব হতে ক্রস করতেই দেখি এই টা বাইক না, বিশাল এক ট্রাক। ভয় পাবার ও সময় পাই নি। মোড়ে এসে দেখলাম ঠিক ই সার্জেন্ট নাই।

বাইক টা বাসার দিকের রাস্তায় ঘোরালাম। ওই রাস্তায় কিছুক্ষন চালানর পর দেখলাম পুরা মুখে ধুলার একটা পুরু আস্তরন পড়েছে। কি জন্য তা ভাবতে না ভাবতেই অঝর ধারায় বৃষ্টি নামল। মনে হলো এ বৃষ্টির ফোটা না পাথর পড়ছে আকাশ থেকে। চোখ খুলতেই পারছিলাম না।

কোনমতে চোখ বন্ধ করে কলোনিতে ঢুকলাম। ঢোকার সাথে সাথেই লোডশেডিং। কিছু ই দেখতে পাচ্ছিলাম না। একে তো অন্ধকার তার উপর বাইকের হেডলাইটের আলো বৃষ্টির ফোটার সাথে মিশে সাদা ওয়ালপেপার তৈরী করল। বাইক থেকে এক হাত দূরে কি আছে তাও বোঝা জাচ্ছিলো না।

রাস্তা মুখস্ত ছিল। সেভাবেই আন্দাজে এগোচ্ছিলাম। কিছুক্ষন পর দেখি ইট পাটকেল পরছে। বুঝলাম না এত রাতে ইট কে ছোরে ?!! পরে দেখলাম ইট না শিলাবৃষ্টি শুরু হইছে। এর প্রকোপে হাতের আঙ্গুল আর মাথায় বেশ ব্যাথা অনুভুত হলো।

তাও বাইকের স্পীড বাড়িয়ে পুরা ভেজা অবস্থায় বাসায় আসলাম। এসে দেখি আমার ডিজিটাল ঘড়ির অচেতন অবস্থা। কিছুক্ষন পর বৃষ্টি থামলে বান্ধবী ফোন দিল। সেলফোন টা কানে দিতেই মনে হলো সাগরের তলদেশের কথা শুনছি। বুঝতে আর বাকি থাকল না, যে মোবাইল টাও এখন শয্যাশায়ী হতে যাচ্ছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।