আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশের গণ মাধ্যম কে লেখা গেদু চাচার খোলা চিঠি।

গেদু চাচার খোলা চিঠি।

বাবা রা, আমি অন্য সবাই কে বলি আশা করি ভাল আছ...শুধু আপনাদের বলিনা...কারণ আপনারা খারাপ থাকবেন এইটা যেদিন আমি শুনব সেদিন বুঝব আমরা অনেক ভাল আছি। যে দেশে অগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া টিভি চ্যানেল এক মাসের মাথায় আবার দাঁড়ায় যায় সে দেশে আপনারা খারাপ থাকতে পারেননা...এখন চলছে আপনাদের যুগ...কোথায় নেই আপনারা?...সবজায়গায়...শুধু যেখানে যেভাবে থাকার দরকার সেভাবে না। যাইহোক মুর্খ মানুষ এই গেদু মিয়া আজকে আপনাদের নিয়ে কিছু লেখতে ইচ্ছা প্রকাশ করছে। বাবা রা, আমাদের দেশের একটা টিভি চ্যানেল একুশে ইটিভি...সেদিন কোন এক কারনে এক ঝলক দেখার সুযোগ পাইছিলাম...তাড়াতাড়ি চ্যানেল বদল করে দিলাম।

কেন জিজ্ঞাসা করতে পারেন...কারণ হঠাৎ আমাদের প্রতিবেশি দেশের ক্যাটরিনা কাইফ এর একটা বিজ্ঞাপন;ভিট নামক ঐ পন্যের বিজ্ঞাপনের একটা দৃশ্যে তিনি যেভাবে দৃশ্যেয়িত হয়েছেন...তা দেখে আমাদের ছেলে মেয়েরা কি শিখছে ভাবার বিষয়। আর আজকাল তো গায়ে মাখা সাবান এর বিজ্ঞাপন মানেই একটু সাহসী কিছু...আর এই সাহসী ভুমিকা যে আমাদের উঠতি বয়সি ছেলে মেয়ের জন্যে কতটা ভয়ঙ্গকর আমরা তা ভাবছিনা। যাইহোক এক রকম বিরক্ত হয়ে আরেক টা চ্যানেলে দিলাম…এনটিভি দিলাম নাকি এমটিভি দিলাম তা উপ্সথাপিকার পোষাক আর ভুল ইংরেজির বর্ষনে বুঝা গেল না...অনেক কষ্ট করে বুঝলাম এটা আমাদের দেশেরই চ্যানেল। অবাক হলাম যে উপস্থাপিকা তার এই অতি আটো পোষাকেও সন্তুষ্ট না...তাই নানান ভঙ্গিতে একবার ডানে আর একবার বামে ঘুরে তার অসন্তুষ্টি প্রকাশের চেষ্টা করছেন...আমি আর দেখার সাহস করলাম না। এই টা জানি কোন চ্যানেলে দিলাম...বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে লোগো করা... ও আচ্ছা বৈশাখি টিভি।

কি দেখাচ্ছে বুঝতে চেষ্টা করলাম...একটু পর শেয়াল বর্ণের চুলের অধিকারিনী মেয়ে এসে তুমুল উচ্ছাসে জানাল এসে গেছেন কিং খান...যেন কিং খান আমার দেশের কেউ। এর পর উপস্থাপক দেবাশিষ এসে লজ্জার সাগরে আরও খানিক টা ডুবায় দিয়ে আঁতলামি শুরু করে দিলেন এই বলে, ‘আই স...দে স...দ্যা হোল গ্রীন রুম স...হি কেম(আমি মুর্খ মানুষ...ইংরেজি গ্রামার কম বুঝি...ভুল থাকলে আপনারা একটু দেখবেন)...শুধু তাই নয় উনি তার এই মহারত্ন কে কিভাবে প্রকাশ করবেন বুঝতে না পেরে তাকে পৃথিবীর অষ্টম ধর্মের সাথে তুলনা করে প্রথম আলোতে একটা বিবৃতিও দিয়ে দিলেন। আর প্রথম আলো?...আসব তাদের নিয়ে একটু পরেই। এর পর মনের দুঃখে আরেক টা চ্যানেলে দিলাম...এখানে এটা কি হচ্ছে বুঝা মুশকিল...প্রায় চার মণ প্রসাধন নিয়ে একজন নারী কাঁদার চেষ্টা করছেন তার অপর পাশে যিনি আছেন প্রসাধনে তাকে আরও হাস্যকর লাগছে। এই নারী একটা কথা বললেন... ‘তুমি’...বলেই চুপ সাড়ে সাত মিনিট...ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে যুদ্ধের দামামা...আবার বললেন ‘এমন’ এবং যথারীতি পাঁচ মিনিট যুদ্ধের দামামার শব্দ সহকারে চুপ...আমার আর ধৈর্য নাই আমি চ্যানেল পাল্টায় দিলাম।

এবার পাশে বসা আমার শহরের নাতনী আমাকে বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘এই ডেইলি সোপ টাই আমি দেখি...পাল্টাইলা কেন? ও আচ্ছা আবার সোপ...আমি তাড়াতাড়ি ওর হাতে রিমোট দিয়ে চলে আসি। আসার আগে ভাবলাম হায়রে ষ্টার টিভি...হায়রে তা দেখে আমাদের দেশের নকল ঘার ঘার কি। ঘরে ফিরে প্রথম আলো নিয়ে বসি...সারা দেশে এই পত্রিকাটাই মনে হ্য় সবাই বেশি পড়ে। আজকাল এটার মান আমাকে বেশ হতাশ করে। বেশ কিছুদিন আগে সকালে ফেসবুকে বসে আছি...আমার ফেসবুক ভাতিজা অনিক খান আমাকে এই পত্রিকার একটা লিঙ্ক দিয়ে বলল কাকা পড়ে দেখেন...আমি খালেদ খান এর রিপোর্ট টা পড়ে হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পারলাম না।

কম্পিউটার প্রতিদিন নামক সেই শাখায় খালেদ জানায়ছেন একটা হাস্যকর বার্তা... ‘আপনার কম্পিউটার এর রান অপশনে যেয়ে ট্রি লিখে এন্টার দিলে যা বের হবে তা আপনি ডিলিট দিয়ে দিলে অবাঞ্চিত সব জমে থাকা ফাইল মুছে দেবে’...আসলে যা ভুয়া একটা কথা। এই খালেদ দেখবেন এই পত্রিকায় ছবি তোলার কাজটা করে থাকেন। জানিনা হয়ত সেদিন টাকার প্রয়োজনই বলেন বা পত্রিকার পাতা ভর্তির পায়তারাই বলেন দেশের মানুষ কে ছাগল বানানোর জন্যে এমন একটা সংবাদ দিতে দ্বিধা করেন্নি। এবার লিমন প্রসঙ্গ। কিশর লিমন কে নির্মম ভাবে অত্যাচার করেছে দেশের এলিট ফোর্স র্যাব...যা খুবই অমানবিক।

কিন্তু আমার কথা হল কেন শুধু এই বাহিনিকে সাথে আর ও সব বাহিনির শুধু নিন্দা প্রকাশ করা? র্যাব ক্রস ফায়ারে মানুষ মারছে...খেপেছেন মতিউর রহমান আর সাথে দেশের তথাকথিত মানবধিকার সংস্থাগুলা। আসেন জনাব মতিউর রহমান, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চেয়াম্যান জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং যারা যারা আইন বিরোধী এইসব ক্রসফায়ার নিয়ে কথা বলছেন...বলছেন র্যাব শুধু আইন বিরধী এইসব কর্মকান্ডেই নিয়োজিত আছে তারা সবাই মিলে নিচের কিছু কাজ করি... ১। আপনাদের কথামত তারা সব ধরনের আইন বিরোধী কাজ বন্ধ করে দেবে...তবে আপনারা যারা ঢাকার বিভিন্ন নিরাপদ জায়গায় বসে মানবতার বুলি আওড়াচ্ছেন তাদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান দেশের সন্ত্রাস প্রবন এলাকা কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গা,মেহেরপুর,হালসা,আলমডাঙ্গা,লক্ষীপুর,হরিসংকরপুর...বা রাজশাহীর পুঠিয়া,বাগমারা বা ময়মনহসিংহ এর ভালুকার প্রত্যন্ত এলাকা বা পার্বত্য চট্রগ্রামের দুর্গম এলাকায় নিয়ে যেতে হবে। পারবেন?...পারবেন্না...কারণ এসি গাড়িতে চরে বা এসি রুমে বসে এই সব কিতাবি কথা বলা সহজ কিন্তু যেইসব নিরিহ জনগণ ওখানে আছে তারা জানে জিবনের নিরাপত্তা কাকে বলে। ২।

বে আইনি হত্যাকান্ডের আমিও বিরোধী...কিন্তু এদের আইনের আওতায় আনলেই যেইসব দুর্নীতিবাজ আইন ব্যাবসায়ী এদের ছাড়ানর সব ব্যাবস্থা করেন তাদের বিরুদ্ধে কেন আপনারা কথা বলেন্না? দেশের এইসব এলিট ফোর্সরা যদি তাদের কাজের জন্যে আপনাদের দোষের স্বীকার হয় তবে এইসব আইন ব্যাবসায়ীরা কেন নয়? ৩। র্যাব বা পুলিশের অনেক কর্মকর্তারাও তো বিভিন্ন সময় মারা গেছেন সন্ত্রাসীদের হাতে তাদের পাশে কেন আপনারা নেই? সন্ত্রাসী মরলে যদি মানবতা বিরোধী কাজ হয় তবে র্যাব বা পুলিশ মারা গেলে কেন নয়? ওরা মানুষ না? নাকি ওরা আপনাদের ভাষায় শুধুই পুলিশ বা র্যাব? অদ্ভুত আপনাদের কথাবার্তা!!!! ৪। র্যাব বা পুলিশের নিন্দা করা বা দোষ ধরাই কি আপনাদের ভাষায় মানবতা? তারা যে বাংলাদেশে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে এত প্রসংশনীয় নিরাপত্তা দিয়ে দেশের ভাব মুর্তি বহির্বিশ্বে উজ্জল করল কই আপনারা তো তাদের এই কাজের জন্যে ধন্যাবাদ দিয়ে কোন ফিচার দিলেন্না? প্রশংসা না করতে পারলে নিন্দা কেন করেন? নাকি এটার পেছনে অন্য কোন ভুমিকা আছে? ৫। র্যাব বা পুলিশের অনেক দোষ...তারা ক্রসফায়ারে মানুষ মারছে...একে ওকে বিনা কারনে অত্যাচার করছে...আপনারা কি ওদের এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্যে কোন ভুমিকা রেখেছেন?তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন,বেতন কাঠামো পরিবর্তন...বা প্রশিক্ষণ কালে তারা যেন র্যাব বা পুলিশ না হয়ে একজন মানুষ হয়েই থাকে তা নিয়ে কোন কাজ করেছেন?কোন সাহায্য যা বদলে দেবে ওদের মানসিকতা?...তাহলে কেন বারবার ওদের অন্ধকার দিক গুলাকেই সাধারণ মানুষের সামনে বেশি বেশি করে এনে ওদের প্রতি আমাদের ধারনা বিরুপ করে দিচ্ছেন? যাইহোক অনেক হল...তা বাবাজি জনাব মতিউর রহমান...আপনার স্বনামধন্য পত্রিকা প্রথম আলোর আজকাল মতি ভ্রম হইছে...আপনারা আজকাল যা প্রকাশ করেন তা আমাকে একই সাথে অবাক এবং হতাশ করে দেয়। ভারত বিশ্বকাপ জিতলে বিবস্ত্র হবেন একজন ভারতীয় নারী...এইটা আপনাদের সংবাদের বিষয়।

উনি বিবস্ত্র হলে উনাদের কিছুইনা...কিন্তু আপনাদের কি ভাবা দরকার ছিলনা যে এইটা আমাদের তরুন সমাজের জন্যে কতটা গঠন মুলক? বাবাজি জনাব মতিউর রহমান, আর কত মিথ্যা বাংলাদেশের মানুষ কে বুঝাবেন?ফেসবুকে বাংলা নাকি গ্রামীণফোন এনে দিয়েছে? আমরা তো সেই কবে থেকেই ফেসবুকে বাংলা ব্যাবহার করি...আর এর জন্যে কিছু তরুন কাজ অনেকটাই আগায় আনছে...তা গ্রামীণফোন কিভাবে আনল? আর আপনারাই বা এইটা কিভাবে প্রচার করলেন?এখনও আপনারা আপনাদের অনলাইন এডিশনে প্রথম পাতায় হাস্যকর আর নির্লজ্যের মত গ্রামীণফোনের সেই বিজ্ঞাপন টা ঝুলায় রাখছেন...টাকায় কিনা হয় বুঝানোর জন্যে। আসলেই টাকা দিলে দিন কে রাত করে দেয়া যায় তাই না? দেশের মিডিয়া গুলা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের পেছনে যেন জোঁকের মত লেগে আছে...তারা কিছুতেই সাকিব কে ছাড়বে না। আমরা কবে হারলাম তবুও আজ সেই হারের বাণী থেকে ওদের রক্ষা নেই। মনে পরে গেল বিশ্বকাপ চলাকালে ভারতীয় মিডিয়া জুড়ে অষ্ট্রেলিয়া আর পাকিস্থানের বিপক্ষে প্রচারনা দিয়ে ওদের মানসিকতা দুর্বল করে দেবার কৌশল...যেটা অষ্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের জন্যে একটা ঐতিহ্য। আর আমরা দেশের অধিনায়ক কে অন্য দেশের অধিনায়কের সামনে অপমান করি...বরই আজবিক আমাদের দেশের মিডিয়া...এরা আসলে পা চাটা কুকুর ছাড়া আর কিছুই না।

সাকিব বা তামিম তাদের ২৪-২৫ বছর বয়সে আমাদের জন্যে যা এনে দিয়েছে...তার এক ফোটা এনে দিলে আমি গেদু মিয়া আপনাদের পায়খানা পরিস্কার করে দেব যত দিন বাঁচি...ধিক্কার জানাই আপনাদের এই নোংরা মানসিকতাকে। আপনাদের কপাল ভাল আমাদের দলে হয়ত যুবরাজ সিং নেই...থাকলে পা এর জুতা খুলে আপনাদের দিকে ছুড়ে মারত। যাই হোক...মন মেজাজ খারাপ করে আবার রাত করে টিভি রুমে আসি...কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছি না কেন আমার সদ্য কৈশর পার হওয়া নাতি আমাকে বলছিল কেন ঘুমাচ্ছি না। আমি টিভি চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে দেখি কোন এক চ্যানেলে আমার প্রিয় সুবীর নন্দী স্যার লাইভ গান গাচ্ছেন...যাক এরা তাহলে এই ভাল কাজটা অন্তত করছে। গান শেষ হয়ে গেল...আবার আমার চ্যানেল পাল্টানো শুরু...কোন এক চ্যানেলে এসে তাড়াতাড়ি নাউজুবিল্লাহ্ বলে টিভি বন্ধ করে দেই...বুঝতে বাকি থাকে না আমার নাতির নির্ঘুমের কারণ।

ফেসবুকে আবার বসি...আমার হোম পেজে কোন এক অখ্যাত অন লাইন বার্তার ওয়েবসাইট জানাচ্ছে... ‘মাদারীপুরে চিৎকার দিয়ে উঠল তরুণী গৃহবধুর লাশ'...একটা হাসি দিয়ে মনে পরে গেল আমাদের গেদু চাচার খোলা চিঠি পরিবারের নাসরিন রুমির একটা উক্তি... ‘আমরা ডগিটাল হয়ে গেছি...’ আপনাদের গেদু মিয়া। ১০-০৪-২০১১ইং। দেশের গণ মাধ্যম কে লেখা গেদু চাচার খোলা চিঠি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.