আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুঃসহ যন্ত্রণার অবসানে বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দা ময়মনা খাতুন পশ্চিমবঙ্গের ভোটে প্রার্থী হয়েছেন



ছিটমহলের বাসিন্দাদের দুঃসহ জীবন-যন্ত্রণার অবসানে এই প্রথম ভারতের কোচবিহারে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দা ময়মনা খাতুন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে দিনহাটা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন। অবশ্য তিনি প্রার্থী হয়েছেন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এবং ঠিকানাও দিয়েছেন ভারতের। কিন্তু তিনি বিয়ে করেছেন বাংলাদেশি ছিঠমহলের বাসিন্দাকে এবং ১৩ বছর ধরে থাকেনও ছিটমহলেই। ছিটমহলের বাসিন্দারা দীর্ঘ ৬৪ বছরের বেশি সময় ধরে নাগরিকত্বহীন জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করছেন ভারতে অবস্থিত ৫৫টি বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশে অবস্থিত ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলে। ছিটমহলের বিনিময় নিয়ে আলোচনা হলেও ছিটমহলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনযন্ত্রণার অবসান কবে হবে, তা জানেন না ছিটমহলের কয়েক লাখ অধিবাসী।

আর তাই এবার অন্য পথ ধরেছেন তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর আনুকূল্যে বাংলাদেশি ছিটমহলের অনেক মানুষই ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র এবং আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছেন। আর এরাই এবার উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে রীতিমতো ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। দিনহাটা কেন্দ্রের অর্ন্তভুক্ত ২৯টি বাংলাদেশি ছিটমহলের প্রায় ১৪ হাজার বাসিন্দা ভুয়া ঠিকানা দিয়ে ভারতের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। একইভাবে সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ৪টি বাংলাদেশি ছিটমহলের ৬,৫০০ জন, শিতলকুচি কেন্দ্রের ৩টি বাংলাদেশি ছিটমহলের ৫,৫০০ জন এবং মেঘলিগঞ্জ কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ৪৭টি বাংলাদেশি ছিটমহলের ১১ হাজার বাংলাদেশি ভারতের ভোটার হয়ে নির্বাচনে ভোট দেবার জন্য তৈরি হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গেও সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ফায়দা লোটার লক্ষ্যে এদের ভোটার হতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের জীবনযন্ত্রণার কথা তুলে ধরতে ছিটমহলের বাসিন্দারা তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ময়মনা খাতুনকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছে। আর ময়মনা খাতুনের প্রার্থী হওয়াকে সমর্থন জানিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। এমনকি দিনহাটা কেন্দ্রের কোচ রাজবংশী জনগোষ্ঠীও ময়মনার প্রতি সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বিজেপি ও জামায়েত উলেমা হিন্দও ময়মনাকে সমর্থন দিতে তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মধ্য তিরিশের দুই সন্তানের মা ময়মনা জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও তিনি ১৩ বছর আগে বাংলাদেশি ছিটমহল পোয়াটুরকুঠির বাসিন্দা রহমান মিঞাকে বিয়ে করে সেখানেই থাকেন। কিন্তু বসবাসের পরিচয় গোপন করে ময়মনা ভারতের ভোটার হয়েছেন। ঠিক যেমনভাবে ছেলেদের লেখাপড়া করানোর জন্য বাংলাদেশি ছিটমহলে বসবাসের পরিচয় এবং স্বামীর নাগরিকত্ব গোপন করে দিনহাটার স্কুলে তাদের ভর্তি করিয়েছেন। ময়মনা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রহীন হয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণা আমি বুঝি। পোয়াটুরকুঠি বাংলাদেশি ছিটমহল হলেও চারদিক দিয়ে ভারতীয় এলাকায় ঘেরা।

ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আর তাই বেঁচে থাকার জন্য ছিটমহলের বাসিন্দাদের নানা ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে হয়। এভাবেই ভারতীয় ভোটার হয়েছেন তারা। রেশন কার্ডও সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কর্তারাও স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশি ছিটমহলের ৩০ শতাংশের বেশি মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তায় ভারতীয় ভোটার হয়েছে।

ছিটমহলের বাসিন্দারা যারা ভোটার হয়েছেন, তারা এত দিন বামপন্থীদের সমর্থন করলেও এবার চিত্রটা পাল্টে গেছে। তাই ময়মনা জানিয়েছেন, জিতলে প্রথম কাজ হবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ছিটমহল বিনিময়ের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য নয়াদিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টি করা। তবে দিনহাটা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের উদয়ন গুহ মনে করেন, ময়মনার ভোটে দাঁড়ানোর কোনো প্রভাব পড়বে না নির্বাচনের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, বাপন্থীদের যারা ভোট দেবেন তারা মনস্থির করে ফেলেছেন। অবশ্য বাম প্রার্থী যাই বলুন না কেন, ময়মনার লড়াই নাগরিকত্বহীন হিসেবে বেঁচে থাকার বিরুদ্ধে প্রতীকী লড়াই হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.