আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুঃসহ কৈশোর (১৮+)

.... প্রয়োজন নেই পৌরাণিক ঈশ্বর

সময়টা আমার জন্যে অসহনীয় ছিল, আমি যত দূর জানি সবার জন্যই কম বেশি তাই। নিজের শরীরের পরিবর্তনগুলো নিজেকে বিব্রত করে তুলত। প্রশ্নগুলো কাউকে করতে পারতাম না, করলেও সবাই কেন যেন সুকৌশলে এড়িয়ে যেত। সারাক্ষণ কেমন যেন একটা অস্থিরতা বোধ করতাম। কৌতুহল ছিল দুর্নিবার, কিন্তু বাংলাদেশের আর দশটা চরম রক্ষণশীল পরিবারের মত আমার ক্ষেত্রেও কৌতুহল নিবৃত্তির কোন ব্যবস্থা ছিল না।

তাই মাঝে মাঝে যেতাম সাইবার ক্যাফেতে, সঙ্গে থাকত এক বন্ধু - আমরা দুজনে মিলে সেই সময়কার নামকরা যত পর্ন সাইট আছে তা ভিজিট করে বেড়াতাম। তখন অনলাইনে ভিডিও দেখার ব্যবস্থা ছিল না, নেটের স্পীডও ছিল খুবই খারাপ। তাই শুধু স্টিল পিকচার দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হত, পুরো প্রক্রিয়াটা নিয়ে আমার যে কৌতুহল তা নিবৃত্তিতে সেগুলো যথেষ্ট ছিল না। ক্লাসের ছেলেরা মেয়েদের নিয়ে নানা ধরনের রসালো আলোচনায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, শুধু আমরা জনা কয়েক আঁতেল ঐসব আলোচনা থেকে দূরে থাকতাম। প্রথম সারিতে বসে আমি যখন বোর্ডের লেখা তুলছি লক্ষ্মী ছেলের মত, তখন শেষের সারির ছেলেরা বসে মজা করে চটি পড়ছে।

কিন্তু বাইরে যাই দেখাই না কেন, লক্ষ্মী ছেলে আমি কখনোই ছিলাম না। তাই সুযোগ পেলেই নানা ছল করে মায়ের কাছ থেকে ১৫ টাকা নিয়ে চলে যেতাম সাইবার ক্যাফেতে, তখন ঘণ্টা ছিল ৩০ টাকা - বাকি ১৫ টাকা দিত আমার সেই বন্ধু। নেটে পর্ন দেখা ছাড়াও আমি মাঝে মাঝে সার্চ করে দেখতাম নানা ধরনের কন্টেন্ট, গুগল তখন আমার কাছে একেবারেই নতুন, সার্চ করার মত শব্দভান্ডারও নেই আমার। তবুও তার মাঝেই চালিয়ে যেতাম জ্ঞান অন্বেসনের চেষ্টা। খোঁজাখুঁজি একেবারে বৃথা যায় নি, খুজতে খুজতে পেয়ে গিয়েছিলাম কোন একটি ফোরামের ঠিকানা, সেখানে আমার মত বিপন্ন দিশাহারা কিশোরদের জন্যে নানা গাইডলাইন ছিল।

ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোয়েশ্চেন এ আমার যত প্রশ্ন ছিল তার অধিকাংশেরই জবাব পেয়েছিলাম। এখন সেই ফোরামের ঠিকানা মনে নেই, তবে সেদিন আমি ফোরামটির প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করেছিলাম। অযাচিতভাবে ব্যাপারটা ঘটেছে বেশ কয়েকবার, কিন্তু তখন আমার জ্ঞান ছিল সীমিত। নতুন জ্ঞান আহরণের পর বিষয়টি আমি হাতে কলমে দেখার সিদ্ধান্ত নেই। বাথরুমে সুদীর্ঘ সময় কাটাবার পরে যখন প্রথমবারের মত সফল হই তখনকার অনুভূতি ছিল অপ্রকাশ্য।

বন্ধুমহলে আদিরসাত্মক নানা আলোচনা চললেও হস্তমৈথুনের ব্যাপারে সবাই ছিল নীরব। বিষয়টাকে কেন যেন সবাই খুব খারাপ কোন একটা ব্যাপার হিসেবে দেখত, জিজ্ঞেস করলে তারা সব সময়ই অস্বীকার করত। তাদের দেখাদেখি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমিও অস্বীকার করে এসেছি, কিন্তু বিষয়টিকে মনে মনে কখনোই খারাপ হিসেবে নেই নি। তখনকার এই বিষয়গুলোকে আজ নিতান্তই শিশুসুলভ মনে হয়, কারণ ব্যাপারটা আসলেই তাই। কিন্তু কৈশোরের সেই সারল্য আমি এখনকার কিশোরদের মাঝে দেখি না, তারা এখন অনেক বেশি অগ্রসর।

যে সময়ে আমি শরীরের নিম্নার্ধ নিয়ে মোটেও ওয়াকিবহাল ছিলাম না আজ সেই সময়েই তারা আমার চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে আছে। ব্যাপারটাকে আমি খারাপভাবে নেই না, সবাই যে আমার মত হবে আমি তা আশাও করি না। কিন্তু আজ যখন গার্ডিয়ানের একটা রিপোর্ট নজরে পড়ল তখন আতঙ্কিত না হয়ে পারলাম না। Click This Link খবরে বলা হয়েছে পশ্চিম লন্ডনে গত অক্টোবরে ১০ বছর বয়সী দুই কিশোর ৮ বছর বয়সী একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে। বৃটিশ ট্যাবলয়েডগুলি মাঝে মাঝে হাবিজাবি ছাপায় এ কথা জানি, কিন্তু এটাও জানি এই খবরটা ঐ সব হাবিজাবির কাতারে পড়ে না।

আমি জানি না ঐ দুই কিশোরের সদ্যসমাপ্ত শৈশব সম্পর্কে, কিন্তু খুব সহজেই আন্দাজ করতে পারি কতটা সেক্সুয়াল কন্টেন্টে এবং ভায়োলেন্সে পরিপূর্ণ ছিল তা। আমার বাবা মা এসব বিষয়ে রক্ষণশীল ছিলেন কিন্তু আমাকে নৈতিক শিক্ষাটা ঠিকই দিয়েছিলেন, তাই আমি লুকিয়ে পর্ন দেখলেও চরিত্রের চূড়ান্ত স্খলন ঘটে নি। ঐ কিশোরের বাবা মা সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও কোন লাভ হয় নি, সেটা ঐ নৈতিক শিক্ষার অভাবে। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা সাধারণত ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু শহর গ্রাম মফস্বলে যে এগুলো ঘটছে না তা কিন্তু নয়। সুতরাং সব কিছুর ওপরে স্থান দেয়া উচিত শিশুর নৈতিক শিক্ষাকে আর এই নৈতিক শিক্ষাই তার পরবর্তী জীবনের যৌন আচরণ ঠিক করবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.