আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুঃসহ বন্দীত্বের কথা...

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)

ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটছে বা ঘটে গেছে। আমি খুবই টেনশনে ছিলাম বাকি সবার মতোই। কী ঘটেছিল, তার নানা টুকরো দৃশ্য আমাদের সামনে আসবে। আমি যেটুকু জেনেছি, তাই তুলে ধরছি। অনেকেই হয়তো দেখেছেন, কর্ণেল সালাম নামক একজন অফিসার বেরিয়ে এসেছেন আজকে আটকাবস্থা থেকে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে চিনি, আমার বাবার বন্ধু। তাঁর মুক্তির খবর পেতেই বাবা দেখা করতে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পরে সেইদিনের কাহিনী শুনলাম। অনেকের সাথে কর্ণেল সালামও ছিলেন দরবার হলে, সেদিন সকালে। সেখানে দরবারের এক পর্যায়ে ডাল-ভাত কর্মসূচীর টাকা ইত্যাদি নিয়ে কথা ওঠে।

তখন কিছু সিপাহী তাদের দাবি জানানোর চেষ্টা করেছিলেন। এক পর্যায়ে ডিজি শাকিল তাদের থামিয়ে দেন। কর্ণেল সালাম যেখানে বসেছিলেন, সেখান থেকে উনি তার একটু পরেই দুটো গুলির আওয়াজ পান। সেটি দরবার হলের বাইরে থেকে ভেতরের দিকে। সেই শব্দে সবার মাঝে একটা চাঞ্চল্য শুরু হয়।

একটু পরেই দেখা যায় পাঁচজন সৈনিক সশস্ত্র অবস্থায় দরবার হলে ঢুকে পড়ে। হুড়োহুড়ির এক পর্যায়ে সকল অফিসারই পেছনের জানালা ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন চারপাশ দিয়ে জনাপঞ্চাশেক সৈনিক সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকে পড়ে। পালানোর শুরুতেই কর্ণেল সালাম একদল সৈনিকের সামনে পড়ে যান, তাদের সবার হাতে অস্ত্র ছিল না, তবে লাঠিসোটা ছিল। এক সৈনিক তার বুকে লাঠির আঘাত করলে উনি বলতে থাকেন যে আমি ডাক্তার, আমি তোমাদের কোনদিন পানিশমেন্ট দেই নাই।

আমাকে মেরো না। ইত্যাদি। সেসময়ে যে কোনভাবেই হোক বার বার এভাবে বলার কারণে একজন সৈনিক তার কথা বিশ্বাস করে এবং তিনি তার বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হন। সেই সৈনিকই বলেন যে স্যার আপনি এখানে থাকলে ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে, আমার সাথে আসেন। এর পরে তিনি সেই সৈনিকের সাথে রওনা দেন।

পথে আরো বেশ কিছু দলের সামনে পড়েন এবং সৈনিকটি তাঁকে বাঁচানোর জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। এক পর্যায়ে একদল বেশ উগ্র সিপাহীদের মধ্যে একজন তাঁর মুখে বাঁট দিয়ে আঘাত করে। তিনি পড়ে যান এবং আবারও বার বার অনেক বুঝানোর পরে তারা তাঁকে ছেড়ে দেয়। সেই সৈনিকের সাথে তিনি সিপাহীদের বিল্ডিঙে আশ্রয় নেন। তবে সৈনিকটিও এই পর্যায়ে তাঁকে বাসায় আশ্রয় দিতে পারেননি।

কারণ তাহলে তার নিজের জানের আশঙ্কা দেখা দিত। কর্ণেল সালাম সেখানে সিঁড়িঘরেই বসে থাকেন। পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা তাকে পানি (সম্ভবত পরে খাবারও) দিয়েছিলেন। দুপুর থেকে পরের সময়টুকু তিনি ওখানেই ছিলেন। সিঁড়িতে আসা যাওয়ার মধ্যে অনেকবার তাঁকে সৈনিকরা ধরেছে, চার্জ করেছে এবং প্রতিবারই তিনি তাঁদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন।

এর মাঝে তিনি শরীরের উর্দিটি খুলে রেখেছিলেন। অন্ধকার ঘনিয়ে এলে সাহায্যকারী সৈনিকটি বাইরে চলে যায়। ঘন্টা দুয়েক পরে ফিরে এলে কর্নেল সালামকে না চেনার ভান করে কারণ তার সাথে আরো সিপাহীরা ছিল। অন্যান্যরা চলে গেলে সৈনিকটি তাঁকে বলে চলে যেতে নাহলে রাতে তার নিজের জীবনই বিপন্ন হতে পারে। এই সময়ে তিনি একবার দোতলা একবার তিনতলা এভাবে সিঁড়িতেই অবস্থান করেন কারণ বাইরে গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু।

আশার কথা, অন্ধকারে তাঁকে বসে থাকতে দেখে অনেকেই সিনিয়র সিপাই ভেবেছে। ওস্তাদ বসে আছেন কেন? এমন প্রশ্ন করেছে। সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পরে সকালে তিনি নিজের ইউনিটের তিনজন সৈনিকের দেখা পান। তাদের কাছেই জানতে পারেন যে সেনা অফিসারদেরকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে। তখনই জানতে পারেন যে কোয়ার্টার গার্ড-এ বাকি সেনা অফিসার-রা আটক আছেন, ওখানে চলে গেলে উনি দ্রুত মুক্তি পাবেন।

তারপরে সেই তিন সৈনিক তাঁকে ঘিরে ধরে সেখানে নিয়ে আসেন। পথে যতবারই মৃত্যুর আশঙ্কা হয়েছে, তারা চিৎকার হুঙ্কার দিয়ে সেগুলো ঠেকিয়েছেন। অবশেষে সেনা অফিসারদের ছেড়ে দেয়ার সময়ে তিনি আরো অনেকের সাথে বেরিয়ে আসেন। এখন সম্ভবত উনি সিএমএইচে আছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.