আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাঁজার নৌকা পাহাড় বাইয়া যায়


অতীত ঝাপসা বর্তমান টলটলয়মান ভবিষ্যৎ খানাখন্দ লিখবো মাতাল জীবনের ইতি কথা ......... গাঁজার নৌকা পাহাড় বাইয়া যায়........... এই রকম হাজার হাজার কথা লোকের মুখে প্রচলিত। অতি প্রাচীন এই নেশাদ্রব্যটি আমাদের কাছে অতি সুপরিচিত। Cannabis sativa নামরে এই গাছটা মাদকসেবীদের কাছে অতি প্রিয়। এর সক্রিয় উপাদান হলো টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল Δ9-tetrahydrocannabinol (THC)। ভয়ংকর এই জীবন বিনাষী নেশায় আসক্ত হই কিভাবে তা আর মনে নেই।

নবীন যৌবনে আমি কত সময় এর নেশায় আবিশষ্ট থেকেছি তার কোন ইয়ত্যা নাই । এখান যোগ বিয়োগ করার জন্য আর সময় নষ্ট করবো না। কাগজের পোটলা খুলে একবার দেখে নেওয়া আত্মতৃপ্তির চেষ্টা । এর পরে চলতো আয়োজন ধীরে ধীরে বিষপাতা গুলি ছাড়িয়ে নিয়ে দুই তিন ফোট পানির সাহায্যে চলতো হাতের তালুতে পেষণ । তামাক পাতার সহযোগে চলতো আরও একবার পেষন।

এর পর কাটনী দিয়ে কেটে কুচি কুচি করা। অন্য দিকে নারিকেল এর ছোবা দিয়ে চলতো গুইট্টা পোড়ানো অনেকটা তামাকের টিক্কা পুড়ানো। কুচি করে কাটা মিহি মিশ্রন ভরা হতো কলকি উপরের অংশে তারপর তাতে দেওয়া হতো গুইট্টা বা আগুন। একটা লাল শালু কাপড়ে পেচিয়ে দেওয়া হইতো ব্রহ্মটান। হাক.................মউলা।

ধোঁয়া ফুসফুসে প্রবেশ করা মাত্র দেহের আগ্রাসী প্রক্রিয়ায় শোষন করে নিত এই ধোয়ার সক্রিয় উপাদান আর তামাকের নিকোটিন। দীর্ঘ দুই তিনটি টানের ফলে ধীরে ধীরে রক্তে মধ্যে প্রবেশ করতো এই টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল যার প্রভাবে স্নায়ু হতো উত্তেজিত আর তামাকে নিকোটিনের সম্মিলিত প্রভাবে রক্ত পেতো তার প্রয়োজনের তুলনায় কম অক্সিজেন এবং এই সম্মিলিত প্রভাব আমাকে নিয়ে যেতো এক কামহীন ভাবুক জগতে। আমার চারপাশ জুরে তখন হাজার তারা ঝিলিমিলি, মন প্রফুল্ল, চিত্ত হতো উৎদ্বেলিত। মোট কথা চার পাশে বিরাজ করতো এক বসন্ত আবহ। দিন যায়..... সব সময় এই টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল এর প্রভাব বলয়ে থাকার ফলে আমার স্নায়ু গুলি এক নিদৃষ্ট মাত্রা এই উপাদানে অভ্যস্ত হয়ে উঠে।

বুঝতে পারি তখন আমি এর মাঝে পতিত হচ্ছি। ভাবি এ আর এমন কি। এর স্বপক্ষে যুক্তি দাড় করাতে থাকি । আত্মতৃপ্তি পাই, খুজে পাই এর মধ্যেই আছে ক্রিয়েটিভিটি। আকন্ঠ নিমজ্জিত হই এর মাঝে।

যখন এই নিদৃষ্ট মাত্রার কম হয় তখন শরীর করে বিদ্রোহ। ফলাফল তীব্র মাথা ব্যাথা। সামান্য পেরাসিটামল তাতেই শান্তি। আবার ফিরে যাই সমতা আনয়নের জন্য। আমি এর নাম দেই সমতা চক্র।

এই সমতা চক্র আমার প্রত্যহিক জীবনের অংশীদার হয়ে উঠে। মোহবিষ্ট এই জগতের আনাচে কানাচে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াই নিজের মনে। বহুদিন এই সমতাচক্র আবদ্ধজীবন কাটানো ফলে আমি আস্তে আস্তে এক হেলুশিনেশন এর জগতে প্রবিষ্ট হই। বাস্তবতা, চারপাশ, সামাজিক বন্ধন, দ্বায়িত্বোবোধ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। দীর্ঘদিনের অর্জিত আমার সংস্কৃতি, আমার কৃষ্টি, আমার অহংবোধ পরাজিত হতে থাকে প্রতিক্ষনে ।

একটি নিদৃষ্ট ভাবনা ও এক নিদৃষ্ট সমতা চক্রে আবদ্ধ হয় জীবন। আমি ছিটকে পড়ি স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তি হতে। আমার মাঝে পরিলক্ষিত হতে থাকে অস্বাভাবিকতা। আমি এখন আমার নিদৃষ্ট সমতা চক্রের বাইরে আর কিছুই চিন্তা করতে পাড়ি না। আমার চিন্তার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

আমি আমার নিজের ভাবনায় ডুবে থাকি সবসময় । সমাজ হতে বিছিন্ন হয়ে পড়ি । একদিন ভোরে আমারা সমস্ত মানবিক, সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। লোকজন আবিস্কার করে এককালে পরিচিত একজন আর স্বাভাবিক নেই। বহুমাত্রিক চিকিৎসা শেষে, পুরানো সময়ের অভ্যাস, জীবন যাত্রা, পরিবর্তন আনয়ন করাই চেষ্টাই নিয়োজিত আছি এখনও।

তাই অনুরোধ এই ভয়ংকর আবেশ থেকে নিজেকে মু্ক্ত রাখূন।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.