আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাইক

হাজারটা স্বপ্ন একটি বাস্তবতাকে বদলাতে পারে না

ঘটনার শুরু যখন আরমান DUS এর সামনে হাটছিল, পকেটে তার দুই হাত ভাজ করে ডুকানো আর চেহারায় উদাস উদাস ভাব। ঠিক তখনি মাথার উপর ঊষ্ণ তরলের একটা ক্ষুদ্র ধারা টুপ করে পরলো। শার্টের হাতায় তাকিয়ে দেখে ওখানেও কিছু ছিটিয়ে পরেছে। মনে মনে গালি দিল “শালা কাউয়া”! উপরে তাকিয়ে দেখে কোনো গাছের ডাল বা ওইরকম কিছুই নেই। কাঁকটা কি উড়তে উড়তেই “অকাজ”টা করে ফেলল নাকি? আজকাল বোধহয় এরাও ডিজিটাল হচ্ছে! একটু আগে সাম্যকে ফোন দিয়েছিল।

সাম্য ফোন ধরেই বলল, “দোস্ত, এখানে আছি, চলে আয়”। কিন্তু এখনেটা ঠিক কোনখানে তা না বলেই কেঁটে দিল। আরমান তখন পরল মহাফাপরে, ওর ফোনে আর ব্যালান্স নেই। কি আর করার, আরমান গেল তখন কাঁকের বর্জ পরিষ্কার করতে। আর তখনই আকিব এসে সামনে দাড়াল।

“পুরা তো ভরাইয়া ফেলছিস্!” আকিবকে দেখে আরমান পিলে চমকে উঠল। এ আবার আসলো কোথা থেকে!! আর ওইদিকে আকিব, “কই থাকিস রে তুই? ২ বছর ধরে তো পুরা নিখোজ!!” আরমানের তখন একটা দায়শারা হাসি দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। মনে মনে ভাবল আজ কপালে দুর্গতি আছে। আকিব জিজ্ঞেস করে, “তা চল তাইলে আমার সাথে। ধানমন্ডি যাই।

” আরমান পাশ কাটাতে চাইল, “দোস্ত আমার তো আজকে একটু কাজ আছে রে। ” “তোর আবার কাজ! কি কাজ? আড্ডা মারবি? আমার সাথে আয়, গ্রিল খাবি। ” আকিব জানাল কি এক লীগ ক্রিকেটে জেতা উপলক্ষে সুনীল খাওয়াচ্ছে। সুনীল ওদের এক বন্ধু। আরমান বলে, “কিন্তু ওইটা তো তোকে খাওয়াচ্ছে।

” আকিব আশস্ত করল, “আমি দেখতাছি ব্যাপারটা। তুই এখন চল। ” তারপরও কিছুক্ষণ টানাটানি করার পর রাজি হয় ও । তারপর একটা রিক্সায় করে ওরা চলল ধানমন্ডির দিকে। যেতে যেতে চলল অনেক স্মৃতিচারণ।

তবে আরমান ওর মনের কথা যেন প্রকাশ না হয়ে যায় সে ব্যাপারে খুব চিন্তিত। দু’বছর ধরে পালিয়ে বেরাচ্ছে আকিবের কাছ থেকে, যেভাবেই হোক একে খসাতে হবে। খানাপিনা শেষ হলেই পলায়ন! কিন্তু তা আর হল না। ধানমন্ডির এক রেস্টুরেন্টে ওদের খাওয়ালো সুনীল। খাওয়া শেষে আরমান চলে যেতে চাইল।

কিন্তু আকিব যেতে দিল না। বলল, “আমার বাসা কাছেই। যাবি?” আরমান বলল, “তুই ধানমন্ডি বাসা নিলি কবে?” “এই তো, ছয় মাস হল। বাসায় আজকে কেউ নাই। চল, আমার বাসায় থাকবি।

” “দোস্ত, সেইটা তো সম্ভব না। ” আরমান যেতে চায় না। কিন্তু আকিব যেভাবে পীড়াপীড়ি শুরু করল, আরমান যে কখন রাজি হয়ে গেল বুঝতেই পারল না। আকিব যদিও বলেছিল বাসা কাছেই, কিন্তু দেখা গেল সেটা মটেও সত্যি না। বরং ওর বাসা পর্যন্ত যেতে রিক্সাও নিতে হল।

আকিব ওদের এপার্টমেন্টের দোতলায় থাকে। ওরা আড্ডা মেরে আর টিভি দেখে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিল। এক সময় আকিব বলল, “চল্, পোকার খেলি। ” আরমানও রাজী হয়ে গেল। আকিব গেল কার্ড আনতে।

আর তখনি কারেন্ট চলে গেল। আকিব টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিল আর বলল, “তুই এটা নিয়ে বোস, আমি বড় চার্জারটা নিয়ে আসি। ” এই বলে চলে গেল। আরমান একা একা বসে থাকল আর ঘরের জিনিস-পত্র দেখতে থাকল। স্বল্প আলো ঘরের ভিতর একটা আবহ সৃষ্টি করেছে।

যেন অপার্থিব কোনো দৃশ্য এটা। সেখানে তাকিয়ে আজ সারাদিনের ঘটনাগুলো অবাস্তব মনে হল। ও এখন আকিবের বাসায়, যেটা কল্পণারও বাইরে। আচ্ছা, আকিব সেই বাইকের ব্যাপারটা সত্যি জানে তো? ও কি শুধু শুধু এতদিন ভয়ে পালিয়ে বেরিয়েছিলো? এভাবে কেঁটে গেল অনেকটা সময়। আর তখন আরমানের খেয়াল হল অনেক্ষ্ণ থেকে আকিবের দেখা নেই।

কোথায় গেল? চার্জার এত সময় লাগে নাকি?? আর তখনি ওর মোবাইলটা বেজে উঠল। সাম্য কল করেছে। রিসিভ করতেই বলে, “কিরে, কই তুই?? তোর জন্য দুই ঘন্টা বসে ছিলাম। ” “আমি তো আকিবের বাসায়, ধানমন্ডি!” “আকিবের বাসায় মানে! তোর মাথা ঠিক আছে? ও তো তোরে বানাবে রে” “বানাবে মানে?” “জানোস না! ও তোরে খুঁজতেছে কতদিন যাবত। তুই না ওর বাইক………” আরমানের আর শোনা হল না।

কারণ দরজার সাম্নেই দাঁড়িয়ে আছে আকিব। চাহনি দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না। কথা বলে উঠল, “তো এবার বল, আমার বাইক কোথায়?” আরমান হাসার চেষ্টা করল, “আমি কি করে জানব?” “তুই কি করে জানবি মানে?” আকিবের হাতে একটা ধারাল ড্যাগার চিক্ চিক্ করছে। আরমানের মুখ শুকিয়ে আসে। কাঁপাকাঁপা গলায় শুধু বলে, “আমি তোর বাইক দু’দিন চালাবার জন্য নিয়েছিলাম কেবল।

কিন্তু কয়েকটা মিশু ওদের সাথে গ্যাঞ্জাম হইছিল। ওরা আইক ভেঙ্গে দিসে…” “বাইক কি আমাকে জানাইয়ে নিছিলি? আর পালায়ে বেড়াইলি কেন্?” “ভয় পাইছিলাম দোস্ত…” “এখন পাস না?” “দোস্ত্, আমাকে মারলে তো বাইক পাচ্ছিস না…” “না মারলেও তো পাচ্ছি না। ” বলেই আরমানের উপর ঝাপিয়ে পরে। দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। আকিব চেষ্টা করে আঘাত করতে আর আরমান নিজেকে মুক্ত করতে চায়।

আকিবের হাতের উপর চাপ পরায় হঠাৎ ওর ডানহাতের কব্জিতে ড্যাগারের খোচায় কেঁটে যায়। এতে কাজ হয়। আকিব পিছু হটে। আর আরমান ক্লান্ত হয়ে বসে থাকে এক কোণায়। কিন্তু এটা সাময়িক।

আকিব আবার এগিয়ে আসে। আরমানের আর ধস্তাধস্তি করার ইচ্ছে নেই। ও চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ সবকিছু নিরব হয়ে যায়। শান্ত হয়ে যায় এতক্ষণের ঝড়ো আবহাওয়া।

কতক্ষণ থেকে চোখ বন্ধ করে আছে আরমান, মনে করতে পারে না। যখন চোখ খুলে তখন দেখতে পায় সকাল হয়ে গেছে। জানালার বাইরে রোদ উঠে গেছে। তাহলে এতক্ষণ যা হচ্ছিল তা শুধু স্বপ্ন? তাই হবে। আরমান হাত-মুখ ধুয়ে নেয়।

তারপর পাশের বেডরুমে আকিবকে খুঁজে পায়। আকিব তখন জানালার সামনে একটা চেয়ারে বসে, তাই ওকে কেবল একটা ছায়া মনে হচ্ছে। আরমানকে বলল, “নাস্তা খেয়ে যাস। ” আরমান কিছু বলল না। সামনে গেল।

এখন আকিব কিছুটা স্পষ্ট। কি মনে হতে হঠাৎ বলে বসল, “আচ্ছা তোর না একটা বাইক ছিল? কোথায় সেটা?” আকিবের মুখে একটা কুটিল হাসি ফুটে উঠে, “তুই-ই তো ভালো জানোস্। ” “আমি কিভাবে?” আরমান তখন একেবারে কাছে চলে গেছে। দেখে আকিব একটা ফুলহাতা শার্ট গায়ে। আকিবের হাসিটা আরো বিস্তৃত, “তুই ছাড়া আর কে জানবে?” আরমান হঠাৎ আকিবের ডানহাতের শার্টের হাতাটা উল্টিয়ে দেখতে গেল।

আর দেখল ওখানে সত্যি সত্যি একটা কাঁটা দাগ! পুরোপুরি শুকোয়নি! একেবারে তাজা! আরমান আর দাড়াল না, একবারও পিছন ফিরে না তাকিয়ে ছুটে বেরিয়ে এল আকিবের বাসা থেকে……

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।